ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায়… ।
বসুদেব সুতং দেবং কংসচানুরমর্দ্দনম্ ।
দেবকী পরমানন্দং কৃষ্ণং বন্দে জগদ্ গুরুম্ ।।
নারায়ণং নমস্কৃত্য নরঞ্চৈব নরোত্তমম্ ।
দেবীং সরস্বতীঞ্চৈব ততো জয়মুদীরেয়ৎ ।।
আমাদের এই সুন্দর তপোভূমি,পুণ্যভূমি ভারতভূমিতে অগণিত মূল্যবান ধর্মগ্রন্থ, তার মধ্যে, শ্রীমদ্ভগবদগীতা শ্রেষ্ঠ ও মহান ধর্মগ্রন্থ। পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা মহাবীর অর্জুনকে প্রায় ৫১৬০বছর আগে অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লা একাদশী (মোক্ষদা একাদশী) তিথিতে, কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে ১৮ দিনের যুদ্ধের প্রারম্ভে, মূল্যবান ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদগীতার জ্ঞান দান করেছিলেন। তাই, এই মহিমামণ্ডিত তিথিকে গীতা জয়ন্তী তিথি বলা হয়। গীতা হচ্ছে সমস্ত শাস্ত্রের সারতিসার। গীতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অমৃত বাণী। গীতার ২য় অধ্যায়কে বলা হয় গীতার সারাংশ, ও গীতাকে সকল ধর্মগ্রন্থের সার সংক্ষেপ বলা হয়। গীতাকে পঞ্চম বেদ ও বলা হয়। শ্রীমদ্ভগবদগীতাই সংক্ষেপ গীতা। গীতার লিখিত রূপ দেন মহর্ষি ব্যাসদেব। এই বছর গীতা জয়ন্তী (মোক্ষদা একাদশী তিথি) আগামী বুধবার, ২৫শে অগ্রহায়ণ-১৪৩১, ১১ডিসেম্বর ২০২৪।
মহাভারতের ভীষ্মপর্বের (২৫ থেকে ৪২) এই ১৮ টি অধ্যায় হল শ্রীমদ্ভগবদগীতা বা গীতোপনিষদ। গীতায় ৭০০ শ্লোক রয়েছে। তাই, গীতাকে সপ্তশতী ও বলা হয়।
তার মধ্যে ধৃতরাষ্ট্র বলেন ১টি শ্লোক, সঞ্জয় বলেন ৪০টি শ্লোক, অর্জুন বলেন ৮৫টি শ্লোক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন ৫৭৪টি শ্লোক। আর পুরো গীতায় ৯৫৮০ টি সংস্কৃত শব্দ আছে । গীতাতে অর্জুনের ২২ টি নাম আর কৃষ্ণের ৪৩টি নামের উল্লেখ করা হয়েছে । গীতাতে ‘মাম্’ এবং ‘মামেব’ কথাটি বেশি আছে। ‘যোগ’ শব্দটি আছে ৭৮ বার, ‘যোগী’ আছে ২৮ বার আর ‘যুক্ত’ আছে ৪৯ বার। গীতায় অর্জুন ১৬টি প্রশ্ন করেন আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তা ৫৭৪টি শ্লোকের মাধ্যমে উত্তর দেন।
গীতার ১৮টি অধ্যায়ের মধ্যে প্রথম ৬টি অধ্যায়কে বলে কর্মষটক, মাঝখানের ৬টি অধ্যায়কে বলে ভক্তিষটক, আর বাকি ৬টি অধ্যায়কে বলে জ্ঞানষটক। ভগবান যখন বিশ্বরূপ দেখান তখন কাল থেমে যায়। গীতা পড়লে ৫টি জিনিষ সর্ম্পকে জানা যায় – ঈশ্বর, জীব, প্রকৃতি, কাল ও কর্ম । পুরো গীতার সারমর্ম ১০ম অধ্যায়ের (বিভূতিযোগ) ৮ নং থেকে ১১ নং শ্লোক মাত্র এই ৪টি শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় বর্ণিত শান্তির সারমর্মটি হলঃ “ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত যজ্ঞ ও তপস্যার ভোক্তা, সমস্ত লোকের মহেশ্বর এবং সমস্ত জীবের হিতাকাঙ্ক্ষী বন্ধু।”
গীতার ১৮টি নাম :-১.গঙ্গা ২.গীতা ৩.সাবিত্রী ৪.সীতা ৫.সত্যা ৬.পতিব্রতা ৭.ব্রহ্মাবলী ৮.ব্রহ্মবিদ্যা ৯.ত্রিসন্ধ্যা ১০.মুক্তিগেহিনী ১১.অর্ধমাত্রা ১২.চিদানন্দা ১৩.ভবগ্নী ১৪.ভ্রান্তিনাশিনী ১৫.বেদত্রয়ী ১৬.পরানন্দা ১৭.তত্ত্বার্থ ১৮.জ্ঞানমঞ্জুরী। গীতার প্রধান ৮টি বাণী:- (১) কর্ম ফলের আশা ত্যাগ করা, (২) কারোর থেকে কিছু পাওয়ার আশা ত্যাগ করা, (৩)লোভ-লালসা হিংসা ত্যাগ করা,(৪) কর্মের তাৎপর্য উপলব্ধি করা, (৫) অন্যায় সহ্য না করা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, (৬) ক্রোধ ত্যাগ করা,(৭) সবকিছুই পূর্বনির্ধারিত, ভাল এবং খারাপ সবকিছুই মঙ্গলময়, (৮) সংযত আচরণ করা।
গীতার জ্ঞান যা মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। তাই গীতাকে যিনি উপলব্ধি করবেন তিনি কখনো হতাশাগ্রস্থ হবেন না, কখনো জীবন যুদ্ধে হেরে যাবেন না, পরিশেষে তার জয় কখনো কেউ আটকাতে পারবেনা। গীতা আমাদের শিক্ষা দেয় দৈনন্দিন জীবন আমরা কী ভাবে অতিবাহিত করবো। গীতা পড়ে ও গীতার জ্ঞান কাজে লাগিয়ে মানুষের সকল পাপ নষ্ট হয়। সমস্ত গ্রন্থের মধ্যে শ্রীমদ্ভগবতগীতা কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। এতে মানব জীবনের সার নিহিত রয়েছে। গীতায় জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ, রাজযোগ, একেশ্বরবাদ ইত্যাদির আলোচনা করা হয়েছে। ব্যক্তিকে কর্মের গুরুত্ব বোঝায় গীতা। এমনকি শ্রেষ্ঠ মানব জীবনের সার রয়েছে এই গীতার মধ্যে। এতে ১৮টি অধ্যায়ে মানব জীবনের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর ও সমস্যার সমাধান রয়েছে। নদীপথে চলতে থাকলে যেমন সমুদ্রকে পাওয়া যায়। তেমন গীতার পথে চলতে থাকলে স্বয়ং ভগবানকে পাওয়া যায়।
তাই, আমাদের জীবনে মহা মূল্যবান পবিত্র ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদগীতা। আমাদের এই মহা মূল্যবান ধর্মগ্রন্থটিকে জীবন যাপনের বিধান, ভাল কাজ করার মাধ্যম, আদর্শ সমাজ, আদর্শ দেশ, আদর্শ রাষ্ট্রগঠন করার, সার্বিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আদর্শ হিসাবে আমাদের জীবনে অনুসরণ করা উচিত, তাই যত দ্রুত সম্ভব গীতাকে জাতীয় গ্রন্থ ঘোষণা করা উচিত। তবেই আমরা,সদ গুরুর আশীর্বাদ, পিতামাতার আশীর্বাদ, স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণর আশীর্বাদ জীবনে পাবো। শ্রীমদ্ভগবদ গীতা আমাদের শেখায় কিভাবে আমরা আমাদের জীবন কাটাব। সদ্গুরুর শ্রীপাদপদ্মে আমার অনন্ত কোটি প্রণাম নিবেদন করি l শ্রী জগৎ গুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ আপনাদের সকলের শিরে বর্ষিত হোক… এই প্রার্থনা করি…!
সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ॥
সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু মা কশ্চিদ্ দুঃখভাগ্ ভবেৎ॥
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!
স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক)