ইংরেজরা বসিয়েছিল গ্রাম! কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নোটিসে ঘুম উড়েছে শালবনীর কমলার ৩০০ পরিবারের।

0
8

পশ্চিম মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা :- স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে ব্রিটিশ আমলে, ছোট জনবসতির পাশেই ইংরেজ সরকার এয়ারপোর্ট তৈরি করেছিল। পরবর্তী সময়ে সেই বসতি বড় গ্রামে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সেই গ্রামের বাসিন্দাদের ভিটেমাটি হারানোর আতঙ্ক তাড়া করছে! ইতিমধ্যেই গ্রামে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে উচ্ছেদের নোটিসও এসেছে। এতে সমস্যায় পড়েছে ৩০০-র বেশি পরিবার। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের বাঁকিবাঁধ পঞ্চায়েতের কমলা গ্রামের। বাসিন্দারা জানান, নোটিস পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ১৯৪০ সাল নাগাদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কমলা এলাকায় এয়ারপোর্ট তৈরি করেছিল ইংরেজরা। মূলত যুদ্ধের সুবিধার জন্য এয়ারপোর্টটি তৈরি করা হয়। ১৯৪২ সালে ৬ মাসের জন্য অন্যত্র যাওয়ার নোটিস দিয়ে ইংরেজরা জানায়, বোমা-গুলি চলতে পারে। এরফলে বিপদে পড়বে গ্রামবাসীরা। তাই অস্থায়ীভাবে তাঁদের অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। যুদ্ধ মিটে গেলে গ্রামবাসীরা পরে ফের নিজেদের ভিটেতে ফিরে আসেন। ইংরেজ বিতাড়নের পর তাদের পরিত্যক্ত এয়ারপোর্টের জমিতে তৈরি হয়েছে টাকা ছাপানোর টাঁকশাল। তার এক পাশেই তৈরি হয়েছে কোবরা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। আরও কিছুটা দূরে বিভিন্ন ফ্যাক্টরি তৈরি হয়েছে। ধীরে ধীরে সবে কমলা গ্রামের বাসিন্দাদের আর্থিক সুদিন ফিরতে শুরু করেছিলো। ঠিক সেই সময়ই ২০২২ সালে এই গ্রামের বাসিন্দাদের উচ্ছেদের কথা জানায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেইসময় গ্রামবাসীরা প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অফিসেও গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। গ্রামের বাসিন্দা দীপঙ্কর দত্ত বলেন, পাঁচ পুরুষ ধরে এই এলাকায় মানুষ বসবাস করছে। এখন বলছে উচ্ছেদ করে দেবে। পরিবারগুলি কোথায় যাবে? ভিটেমাটি হারালে কোথায় যাব? আমাদের কথা ভাবতে হবে। জমি অধিগ্রহণ হলে, আরও দু’-তিনটি গ্রামের মানুষ সমস্যায় পড়বে। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছেও তিনি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি দেখার আবেদন জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বলেছেন উঠে যাওয়ার থেকে মৃত্যু অনেক শ্রেয় আমাদের কাছে।
গ্রামের এক গৃহবধূর রূপা দোলই বলেন, হঠাৎ একদিন পোস্ট অফিসের পিওনের চেয়ে আমাদের হাতে একটি করে চিঠি ধরায়। ইংরেজিতে লেখা থাকার কারণে আমরা পড়তে পারিনি। গ্রামের শিক্ষিত ছেলেদের কে ডেকে চিঠিটি পড়ালে তাতে লেখা থাকে ১৫ দিনের মধ্যে বাড়ি-ঘর খালি করে দিতে হবে। এতদিন ধরে এখানে বাস করার পর যদি হঠাৎ করে কেউ এসে বলে উঠে চলে যেতে হবে সেটা কিভাবে সম্ভব। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতে বা কি হবে আশঙ্কা প্রকাশ করেন গ্রামের গৃহবধূ! আমরা পঞ্চায়েতে ট্যাক্স দিয়, আমাদের আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড রয়েছে। আমরা তো কোন রিফিউজি নয় যে কথার থেকেও বেশি হঠাৎ করে সরকারের জায়গায় বসে গেছি। এইভাবে উঠে যাওয়া আমাদের কাছে মৃত্যুর সমান। পাশাপাশি রাস্তার পাশে যারা দোকান করে দুবেলা দুমুঠো অন্যের জোগাড় করেছে তাদের মাথায় হাত পড়েছে। তারা বলেন দীর্ঘদিন ধরে আমরা ট্যাক্স দিয়ে বসবাস করছি। হঠাৎ করে এই ভাব প্রতিরক্ষা মন্তক নোটিশ দিয়ে বাড়ি ছাড়াতে বলায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন, তারা যেন আমাদের সামনে কোন প্রতিনিধি পাঠিয়ে কথা বলার ব্যবস্থা করেন। গ্রামে এনিয়ে আলোচনাও হয়েছে। আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামের ৩০০ টি পরিবার। খাওয়া-দাওয়া ও ঠিকমতো করছেন না এলাকার মানুষজন। ভয়ে ভয়ে দিন গুনছে তারা। সত্যিই কি তাদের মাথার ছাদের আশ্রয়স্থল ছেড়ে যাযাবরের মতো দিন যখন করতে হবে। না সরকার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করবেন। এনিয়ে জেলায় রাজনৈতিক তরজা চরমে উঠেছে। মেদিনীপুর সদরের মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখার্জি বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তবে সরকারিভাবে এখনো কোনো নোটিশ পায়নি। জায়গাটি প্রতিরক্ষা মন্তকের জায়গার পার্শ্ববর্তী। তবে যেই গ্রামে মানুষজন বসবাস করেছে সেই জায়গাটি সরজমিনে খতিয়ে দেখে কাগজ নিয়ে মাপ-যোপ করতে হবে। অফিসিয়াল ভাবেই আমাদের কাছে জানালে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেব। পাশাপাশি এও বলেন, যারা গ্রামে বাস করছেন সত্যি যদি জায়গাটি তাদের ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে পুনর্বাসন নিয়েও সরকার ভাববে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here