পূর্ব মেদিনীপুর , নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- তবলার লহরায় ছন্দে বাঁধা হয়েছে জীবন। ছোটবেলা থেকেই তবলা বাজানোর প্রতি ঝোঁক। মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে তবলায় হাতে খড়ি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাটের মেয়ে দেবর্ণার। বর্তমানে সেই তবলা একটু একটু করে বদলে দিচ্ছে তাঁর জীবন। গান বা যন্ত্রসংগীতের অন্যান্য মাধ্যমে নারী-পুরুষ সমান সমান থাকলেও, মূলত তবলা বাদক হিসাবে আমরা প্রথমতই পুরুষের কথাই মাথায় আসে। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাটের ধন্যিমেয়ে দেবর্ণা তবলা লহরা বেঁধে নিয়েছে তাঁর জীবন। বর্তমানে তবলা বাদক হিসেবে খ্যাতি লাভ করছে ধীরে ধীরে। তবলাই তাঁর জীবন যাপনের মানে বদলে দিয়েছে। কোলাঘাটের কোদালিয়া গ্রামের দেবর্ণার শুরুটা আদৌ ভালোভাবে মেনে নিতে পারেনি সমাজ। গান, নাচ ও আবৃত্তি থাকতে মেয়ে আবার তবলা বাজাবে! ভেসে এসেছে পাড়া প্রতিবেশীদের কটুক্তি, বাঁকা কথাবার্তা। কিন্তু দেবর্ণার বাবা দেবব্রত মান্না নিজেই তবলা বাদক ও তবলার প্রশিক্ষক। তাই মেয়ের তবলার প্রতি ঝোঁক দেখে ছোট বয়সেই মেয়েকে হাতে খড়ি দেন তবলায়। তারপর দেবর্ণা তবলায় একটু পোক্ত হতেই আরও ভালোভাবে শেখার জন্য পাঠিয়ে দেন তাল ঋষি অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। গুরুর প্রশিক্ষণে তবলার তাল ছন্দ লহরা সবই ধীরে ধীরে আয়ত্ত করেছে দেবর্ণা। এখনও তাঁরই কাছে তালিম নিচ্ছেন দেবর্ণা।
দেবর্ণার বাবা জানান, ‘তাঁর রোজকার বলতে তবলা প্রশিক্ষণ দিয়েই। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে তবলা প্রশিক্ষণ দিয়েই মধ্যেই সংসার চলত। ছোট থেকেই দেবর্ণার তবলার প্রতি আগ্রহ ছিল। মেয়েকে ছোট থেকে তবলা শিখিয়েছি। সম্প্রতি জাতীয় স্তরের একটি প্রতিযোগিতায় ও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। খুব ভাল লাগছে। চাই আগামী দিনে মানুষ ওকে তবলাবাদক হিসেবেই চিনুক। মাঝে অসুস্থতার কারণে তবলা বাজিয়ে রোজগার করাটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে দেবর্ণা তবলার একক উপস্থাপনায় কিছুটা রোজগার করে সংসারের হাল ধরেছে।’ ২০২১ সালে জাতীয় স্তরের একটি তবলা প্রতিযোগিতায় দেবর্ণা চ্যাম্পিয়ন হন। ২০২২ সালে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয়। শেষ বছর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত অ্যাকাডেমি আয়োজিত তবলা প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। ফেব্রুয়ারিতে অনলাইনে ‘তাল-তন্ত্র’ একক তবলা লহরা প্রতিযোগিতায় দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছেন দেবর্ণা। বাবার অসুস্থতার কারণে এখন একক অনুষ্ঠান করছেন দেবর্ণা। অনুষ্ঠানের টাকায় নিজের শিক্ষার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাড়িতেও সাহায্য করেন। বাবার অসুস্থতার কারণে এখন একক অনুষ্ঠান করছেন দেবর্ণা।
তবলার তালে জাতীয় স্তরে চ্যাম্পিয়ন ও আন্তর্জাতিক স্তরে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে জেলার নাম উজ্জ্বল করলো কোলাঘাটের দেবর্ণা।

Leave a Reply