স্মরণে, ভারতীয় বিশিষ্ট সর্বোদয় নেত্রী ও সমাজকর্মী – মালতী চৌধুরী।।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে মালতী চৌধুরী  প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল। মালতী চৌধুরী  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন তিনি।  মালতী চৌধুরী ছিলেন মহাত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বিশিষ্ট সর্বোদয় নেত্রী ও সমাজসেবী।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন————

মালতী চৌধুরী ১৯০৪ সালের ২৬ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় একটি সচ্ছল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  বাবা কুমুদনাথ সেন ব্যারিস্টার ছিলেন।  মাতা স্নেহলতা সেন। তাদের পৈতৃক নিবাস ছিল বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা বিক্রমপুরের কামারখাড়া।  কিন্তু তাদের পরিবারের সবাই চলে যায় বিহারের শিমুলতলায়।  মাত্র আড়াই বছর বয়সে তার বাবা মারা যান এবং তার মা তাকে বড় করেন।  মালতী চৌধুরী ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ১৬ বছর বয়সে শান্তিনিকেতনে আসেন।  সেখানে অধ্যয়নকালে তিনি সরাসরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংস্পর্শে আসেন।  তিনি শান্তিনিকেতনে ১৯২৭ সালে ওড়িশার এক সময়ের মুখ্যমন্ত্রী নবকৃষ্ণ চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

অহিংস আন্দোলন——-

মহাত্মা গান্ধী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, তিনি ১৯৩০ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং তাকে গ্রেফতার করে ভাগলপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।  তিনি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে হাজারীবাগ কারাগারে ছিলেন।  ৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি জেলে যান।

সামাজিক কাজ—–‐-

তিনি সর্বোদয় নেত্রী নামে পরিচিত ছিলেন।  স্বাধীনতার পর তিনি দরিদ্র, দলিত, আদিবাসী হরিজন শিশুদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।  তিনি উৎকল কংগ্রেস  শ্রমজীবী কর্মী  সংঘ গঠন করেন।  গ্রামের কৃষকদের উন্নতির জন্য সংস্কার ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করেন, সংগঠন গড়ে তোলেন।  ওড়িশা রাজ্যে গান্ধীজির পদযাত্রায় সঙ্গী হন।  ১৯৪৭ সালে, তিনি কিছু সময়ের জন্য ওড়িশা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হন।  ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারি হলে তার বিরুদ্ধে পথে নামেন এবং ৭১ বছর বয়সে তাকে ছয় মাস কারাবরণ করতে হয়।  তিনি আচার্য বিনোবা ভাবের ভূদান আন্দোলনেও সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন।

সম্মান——-

(ক) উৎকল রত্ন সম্মান (উড়িষ্যা সরকার)।
(খ) জাতীয় পুরস্কার, ঠাকুর সাহিত্য পুরস্কার, দেশিকোত্তম, (শিশু কল্যাণমূলক কাজের জন্য)।
(গ) ১৯৮৮  সমাজসেবামূলক কাজের জন্যে তিনি সালে যমুনালাল বাজাজ পুরস্কারে সম্মানিত হলেও তা নিতে অস্বীকার করেছিলেন।

মৃত্যু——-

১৫ মার্চ ১৯৯৮ সালে ৯৩ বছর বয়েসে তিনি প্রয়াত হন ।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *