খাঁচাবন্দি পশুপাখিদের মুক্তির দাবীতে নিজেকে খাঁচাবন্দি করলেন হোসেন সোহেল।

0
3392

বিশ্বজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও সন্দীপ দেঃ-খাঁচার ওপরে লাল কালিতে লেখা “মুক্তি চাই”। অনেকে এই “মুক্তি চাই” কথাটি দেখে ভাবতে পারেন এ যেন কারাগারে বন্দি আছে কয়েদি। আর কয়েদির মুক্তির দাবীতেই চলছে প্রতিবাদ। কিন্তু ঘটনাটি তা নয়, একেবারে একটু অন্য রকমের। যেখানে রয়েছে পশুপাখিদেরকে খাঁচার ভিতর বন্দি করে রাখা আছে। আর সেই খাঁচাবন্দি পশুপাখিদের মুক্তির দাবিতে নিজেকে খাঁচার ভেতর বন্দি করেছেন পরিবেশবাদী হোসেন সোহেল। সমাজ সংস্কারে প্রত্যেকটি জীবজন্তুর প্রয়োজন আছে। তাদেরকে উন্মুক্ত আকাশে এবং পৃথিবীর স্থলভাগের অবাধে বিচরণ করে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে পশুপাখিদেরকে বন্দি করা হচ্ছে খাঁচার ভেতর। এই অমানবিক নিষ্ঠুরতার প্রতিবাদে নিজেকে খাঁচার মধ্যে বন্দী করে অভিনব পদ্ধতিতে করেছেন প্রতিবাদ করছেন হোসেন সোহেল। আর সেই খাঁচার উপরে লেখা”মুক্তি চাই”।

গতকাল ২০শে আগস্ট সকাল ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে খাঁচার ভেতর নিজেকে বন্দী করেছেন সোহেল সাহেব। তিনি আমাদের প্রতিবেদকের মুখোমুখি হয়ে জানান, পশু পাখিকে খাঁচায় বন্দী করার অর্থ নৃশংসতা। শুধু তাই নয়, কিছু মানুষ অর্থ লাভের আশায় তাদেরকে খাঁচার মধ্যে বন্দী করছেন। এবং সার্কাস থেকে শুরু করে মানুষ নিজেদের আনন্দের জন্য বাড়িতেও খাঁচাবন্দি করছেন এইসব প্রাণীদের। এই সিস্টেমের আমূল পরিবর্তন দরকার। আর এই সিস্টেমের পরিবর্তন একা করা সম্ভব নয়, তবুও তিনি লড়াইটা প্রথম নিজের সাথেই লড়তে চাইলেন। তিনি কবি নজরুল ইসলামের কথার সূত্র ধরে বলেন, থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে। কিন্তু কোথায় মানা হচ্ছে কবির সেই কথা? তাই তিনি সমব্যথী হয়ে নিরীহ অবলা প্রাণী দের দুঃখ-যন্ত্রণার কথা উপলব্ধি করার জন্যই নিজে একই রূপে বিরাজ করলেন। তিনি বলেন পৃথিবীটা আমাদের, আমার নয়। এরপরই তিনি বলেন চিড়িয়াখানার যা পরিস্থিতি সেখানে পশুপাখির নির্যাতন ছাড়া কিছুই হয় না। তিনি এও বলেন খাঁচার ভিতর পশুপাখিদের রেখে তাদের অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হচ্ছে, তাদেরকে অবাধে বিচরণ করতে দেয়া হচ্ছে না, দিগন্তবিস্তৃত আকাশে পাখিদের ডানা মেলে উড়তেও দেয়া হচ্ছে না।এটা অন্যায়।একটা বাচ্চা পশু,পাখিকে তার মা’য়ের কাছ থেকে আলাদা করে তারা বিচ্ছেদ ঘটানো হচ্ছে।এরপরই তিনি বলেন এটা যদি মানুষের ক্ষেত্রে হতো সেটা কেমন হতো নিজেরাই বিচার বিশ্লেষণ করুণ।তাই সকল স্তরের খাঁচাবন্দি প্রাণীদের মুক্ত করতে হবে বলে তিনি জানান।যদি না হয়,তাহলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত ঘটবে।Bio-diversity হ্রাস পাবে।
বর্তমানে যে চিড়িয়াখানাগুলো হচ্ছে সেখানে ২০১২সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন মোতাবেক হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন।তিনি বন বিভাগের সাথে ইকোপার্ক বা চিড়িয়াখানার মালিকদের লেনদেনের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

তবে তিনি যে কর্মসূচি করছেন এতে সরকার,রাজনীতি,কোনো সংগঠক জড়িত নয় বলেও জানান।এটা তার একান্ত নিজের লড়াই।এই কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কি প্রশ্ন করলে,তিনি জানান “আমি ৭২ঘন্টা এভাবেই প্রতিবাদ জানিয়ে যাবো,তারপর কিছুদিন লক্ষ্য করবো এবিষয় নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় কিনা। যদি না হয় আগামীদিনে সোহেল বাবু একা নন আরও বেশকিছু মানুষ খাঁচাবন্দি প্রাণীদের জন্য নিজেদের খাঁচাবন্দি করবেন।তবে সোহেল বাবুর এই প্রতিবাদকে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষরা কুর্ণিশ জানিয়েছেন ও প্রশংসাও করেছেন।তবে সরকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয় কিনা তা সময়ই দেখা যাবে।