সুভাষ চন্দ্র দাশ,গোসাবা :-স্ত্রী’র পাশ থেকে স্বামীকে তুলে নিয়ে গেলো সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার ভোরে সুন্দরবনের ঝিলা ৫ নম্বর গভীর জঙ্গলের গোলভক্সা নদীখাঁড়ি এলাকায়।নিখোঁজ মৎস্যজীবীর নাম শিবপদ সরকার(৫৫)।তাঁর বাড়ি গোসাবা ব্লকের সুন্দরবন উপকুল থানার অন্তর্গত লাহিড়ীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চরঘেরী এলাকায়।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে শিবপদ সরকার, তার স্ত্রী রীণা সরকার ও তিন পুত্র ও এক পুত্রবধু রয়েছে পরিবারে। অভাবের সংসার। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী শিবপদ।পরিবারের মুখে দুমুঠো অন্ন সংস্থানের জন্য সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিবেশী শশাঙ্ক মন্ডল ও স্ত্রী রীণা সরকার কে নিয়ে মাছ কাঁকড়া ধরার জন্য মঙ্গলবার ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রওনা দিয়েছিলেন সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলের নদীখাঁড়িতে।ডিঙি নৌকার দাঁড় বেয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলের গোলভক্সা খালের নদীখাঁড়ি এলাকায়।তখনও ভোরের আলো ঠিকমতো ফোটেনি। সেখানে চরের কাছে নৌকা বেঁধে রেখে নৌকার উপরে বসে কাঁকড়া ধরার জন্য দোন তৈরী করছিলেন শিবপদ ও তার স্ত্রী।একটু দূরেই ছিলেন সঙ্গী শশাঙ্ক মন্ডল।তখন সময় প্রায় ভোর সাড়ে চারটে।সেই সময় সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে আচমকা একটি বাঘ বেরিয়ে আসে।টার্গেট করতে থাকে শিবপদ কে। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে শিব পদ’র উপরে। তার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে টানতে টানতে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।চোখের সামনে স্বামীর করুণ পরিনতির মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে বাক্ রুদ্ধ হয়ে পড়ে স্ত্রী রীণা সরকার।অন্যদিকে সঙ্গীকে বাঘে আক্রমণ করেছে বুঝতে পেরে দৌড়ে আসেন শশাঙ্ক।নৌকার বৈঠা আর গাছের ভাঙা ডাল নিয়ে রীণা আর শশাঙ্ক বাঘের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সঙ্গীকে উদ্ধারের জন্য।ঘন অন্ধকারের মধ্যে দীর্ঘ প্রায় কুড়ি মিনিট রুদ্ধঃশ্বাস লড়াই চলে বাঘে-মানুষে।ভয়ঙ্কর বাঘ কোন মতেই তার শিকার ছাড়তে নারাজ।শিকার কে পাশে রেখেই রীণা ও শশাঙ্ক কে আক্রমণ করার জন্য উদ্যত হয়। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে রণে ভঙ্গ দেয় দুই সঙ্গী সাথী। সুযোগ বুঝে বাঘ তার শিকার কেহিড় হিড় করে টানতে টানতে গভীর জঙ্গলে নিয়ে পালিয়ে যায়।অগত্যা নিরুপায় হয়ে বিমর্ষ হয়ে পড়েন তারা। ব্যর্থ দুই সঙ্গীসাথী নৌকার হাল বেয়ে সকালে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে।সাতসকালে এমন মর্মান্তিক ঘটনার কথা এলাকায় চাউর হতেই শোকের ছায়া নেমে আসে সরকার পরিবার সহ গোটা গ্রামে।
রীণা দেবীর কথায় ’স্বামীকে এভাবে হারাতে হবে জানা ছিলো না।চোখের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেলো বাঘ। কিছুই করতে পারলাম না।’
অন্যদিকে ঘটনার খবর পেয়ে নিখোঁজ মৎস্যজীবীর বাড়িতে হাজীর হয়ে স্থানীয় লাহিড়ীপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নিরঞ্জন মন্ডল অসহায় মৎস্যজীবীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।