সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং – ক্যানিং থানার অন্তর্গত তালদি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার খাস কুমড়ো খালি গ্রাম। গ্রামেরই যুবক আজিজুল হালদার। পরিবারের ছয় ভাইয়ের মধ্যে বড়।সামাজিক কাজের জন্য এলাকায়ও বড়দা নামে পরিচিত।
বিগত প্রায় পাঁচ সাত বছর আগে তালদি মেথর রোড এলাকায় একটি পথ দুর্ঘটনা ঘটে। সেই মুহূর্তে পুলিশের ভয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্থ মানুষটির চিকিৎসার জন্য কেউই এগিয়ে আসেনি।সেই সময় রাতের অন্ধকারে বাইক চালিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন ওই যুবক। কোন কিছুই না ভেবে মরণাপন্ন দুর্ঘটনাগ্রস্থ ব্যক্তিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। মারা যায় দুর্ঘটনাগ্রস্থ ব্যক্তি। সেদিনের সেই ঘটনা হৃদয়ে আঁচড় দেয় যুবক আজিজুলের। সেই থেকেই শুরু। এরপর যখন যেখানে বিপদ দেখেন, সেই মুহূর্তে বিপদগ্রস্থ মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে সাহায্য করেন ওই যুবক। এমন কি কোন অসহায় মানুষের বাবা-মা মারা গিয়েছেন কিংবা মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না। এমন খবর ওই যুবকের কানে পৌঁছালেন সমস্যার সমাধান হতে বাধ্য।ওই যুবক নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় চাঁদা সংগ্রহ করে এবং অবশিষ্ট গাঁটের কড়ি খরচ করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ত্রাতার ভূমিকা গ্রহণ করেন।
বিগত মাস পাঁচেক আগে খাসকুমড়ো খালির এক শিশু বাড়ির পাশেই রাস্তার ধারে খেলা করছিল। খেলার ছলে পাড়ার রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে ভ্যানে চাপা পড়ে।শিশুটির মাথায় প্রচুর আঘাত লেগে ক্ষতবিক্ষত হয়। বাঁচার আশা প্রায় একেবারেই ছিলো না। সেদিনও ত্রাতার ভূমিকা নিয়ে একক ভাবে নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়েছিল ওই যুবক। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য। পরে অবস্থার অবনতি হলে কলকাতার চিত্তরঞ্জন,মেডিকেল কলেজ ঘুরে পিজি তে ভর্তি করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে শিশুটি সুস্থ হলেও তার চিকিৎসা চলছে।আজও চিকিৎসা ভার বহন করে চলেছেন ওই যুবক। সেদিনে ঘটনার কথা বলতে গিয়ে শিশুটির পরিবারের লোকজন জানায় ‘ঘটনার মুহূর্তে আজিজুল হালদার যদি এগিয়ে না আসতো তাহলে কোলের শিশু সন্তান কে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়তো।
আজিজুল হালদার জানিয়েছেন ‘সাধারন মানুষ বিপদে পড়লে জানিনা মন টা কেমন হয়ে যায়। যতক্ষণ না বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে না পারি, ততক্ষণ নিজেকে মানুষ হিসাবে ঘৃণা হয়।সে রাত কি বা দিন হোক।মানুষ হিসাবে বিপদ গ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য বলে মনে করি।’
অন্যদিকে স্বামীর এমন সমাজসেবা মূলক কাজের প্রতি উৎসাহ দিয়ে স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন সামিমা হালদার।
তিনি জানিয়েছে মানুষ মানুষের জন্য। আমার স্বামী যখন বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়,তখন গর্বে নিজের বুকটা ফুলে ওঠে।’
প্রতিবেশী যুবক ইয়াকুব আলি লস্কর,সমীর সরদার,মফিজুল হালদারদের দাবী আজিজুলের মতো ছেলে হয় না। ওর কাজের জন্য এলাকায় আমরা বড়দা বলে ডাকি। কারণ মানুষের বিপদে ত্রাতার ভূমিকা অবলম্বন করে সবার আগে হাজীর হয় আজিজুল।