কঙ্গাবতীর দুঃসাহস (ধারাবাহিক উপন্যাস, দশম পর্ব) : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

0
260

গণা সুযোগ পেলে গতর খাটিয়ে পরিশ্রম করে বাঁচতে চায় । গণাদের জাত ব্যবসা, ধোপা । বাড়িতে লন্ড্রি রয়েছে । বাবা চালায় । বাড়িটা যেহেতু বাজার থেকে একটু ভেতরে, তাই লন্ড্রির ব্যবসাটা অতোটা জাকজমক নয় । যেটুকু চলে তাতে তাদের সংসার মোটামুটিভাবে ভালই চলে । তবে বাড়ির লন্ড্রির দোকানে কাজ করার ইচ্ছা গণার এতটুকুও নেই । তাই মনীষাকে নিভৃতে জানিয়েছে, সুযোগ পেলে পরিশ্রম করে সততার সঙ্গে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে চায় ।
গণপতির একটা দিদি ছিল । তার বিয়ে হয়ে গেছে । সেই দিদি এখন ঘোর সংসারী । দুই ছেলের মা । বাপের বাড়ি আসার সুযোগ খুব কম পায় । সেই কারণে তারা বাড়িতে তিনটি প্রাণী । বাবা, মা এবং গণা । গণার বাবা এখনও কাজকর্মে ভীষণ সক্রিয় । লন্ড্রির দোকানের উপায় থেকে সংসারের খরচা । গণা সেভাবে গুছিয়ে কিছু করে উঠতে পারেনি । তাই তার বিভিন্ন জায়গায় এলোপাথারি ঘোরাঘুরি । মনীষার দোকানে আসার পরে তার মনের আমূল পরিবর্তন । সে এখন চাইছে, কিছু একটা কাজ করতে । বেঁচে থাকার জন্য ব্যবসায় হাত দিতে । বিশেষ করে বাপ-ঠাকুর্দার ধোপার ব্যবসা করার প্রচণ্ড ইচ্ছা । কিন্তু দোকান খোলার জন্য সেভাবে কোনোকিছু গুছিয়ে উঠতে পারেনি । বাবুর আবার নিজের বাড়িতে ব্যবসা করার আকাঙ্ক্ষা নেই । তাই মানষীকে বলা, সুযোগ পেলে কঠোর পরিশ্রমেও রাজী ।
গণার বিষয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলল মনীষা । মনীষার মুখে গণার সমস্ত কথা শোনার পর কঙ্কাবতী গণার সঙ্গে দেখা করতে চাইলো । সেদিন বুধবার । সব্জি নিয়ে কাজে বের হল না কঙ্কাবতী । সকাল দশটা নাগাদ মনীষার দোকানে হাজির । তখন মনীষার দোকানে প্রচণ্ড ভিড় । মনীষার একার পক্ষে সেই ভিড় সামাল দেওয়া সত্যিই কষ্টকর । কঙ্কাবতী এবার বুঝতে পারছে, কেন গণা ধীরে ধীরে মনীষার হৃদয়ে প্রবেশ করলো । রোজ দোকানে এসে যদি মনীষাকে কাজে সহযোগিতা করে, তাহলে মনীষার হৃদয় টলবেই এবং হয়েছে সেটাই । ধীরে ধীরে মনীষা গণাকে ভালবেসে ফেলেছে । মনীষার অন্তরে এখন গণাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন !
মেয়ের দোকানের খরিদ্দার সামলাতে কঙ্কাবতী হাত লাগালো । পরোটা বেলে কড়াইতে ভাজছে, আর অন্যদিকে মনীষা খরিদ্দারদের মধ্যে পরিবেশন করছে । সেই কর্মব্যস্ততার মধ্যে গণা মৃদুমন্দ পায়ে দোকানে এসে উপস্থিত । পরোটা বেলতে নতুন লোক দেখে গণা অবাক ! গণা মনে মনে ভাবছে, তাহলে কী মনীষা খরিদ্দার সামলাবার জন্য নতুন লোক নিয়োগ করলো ? কিন্তু গণা আবার ভাবলো, নতুন লোক নিলে নিশ্চয় মনীষা তাকে জানাতো ।
গণা সোজা পরোটা বেলার জায়গায় হাজির । কঙ্কাবতীর পরোটা বানানোর কায়দা-কানুন দেখে গণা তাজ্জব ! নিখুঁত ও পরপাটিভাবে পরোটা তৈরী ।
“এই ছেলে ! তুমি কী চাইছো ?” কঙ্কাবতী গণাকে জিজ্ঞাসা করলো ।
কঙ্কাবতীর জিজ্ঞাসা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো গণা । তাই কঙ্কাবতীর দিকে খানিকক্ষণ উদাসভাবে তাকিয়ে রইলো । কী উত্তর দেবে সেটা ভেবেই ধন্দে ! আবার ভাবছে, মহিলাটি কে ? কেনই বা সে মনীষার উনুনে রান্নায় ব্যস্ত । ইতিপূর্বে তাকে কখনও দোকানে দেখা যায়নি । কী বলবে সেটা ভাবতে ভাবতে গণা বিচলিত ! এমন সময় মনীষা খাবারের জল নিয়ে দোকানে ঢুকলো । দোকানে মায়ের সামনে গণার কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনীষা মায়ের উদ্দেশে বলল, “যার জন্য আমার দোকানে তোমার আসা সেই গণপতি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে ।“
ত্রস্তব্যস্ত হয়ে কঙ্কাবতী বলল, “বাছা, আমি মনীষার মা । দাঁড়িয়ে না থেকে তুমি একটু বসো । তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে ।“
কোনোকিছু না ভেবে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে গণা কঙ্কাবতীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলো ।
গণার আন্তরিকতা দেখে কঙ্কাবতী বিস্মিত ! আজকালকার ছেলেমেয়েরা সচরাচর গুরুজনদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে না । সেখানে গণা ব্যতিক্রম । দোকানের ভিতর অনেক খরিদ্দারের মাঝে তাকে প্রণাম করলো । তাতেই কঙ্কাবতী আহ্লাদে বিহ্বল ।
বেলা বারোটার পরের ট্রেন কাটোয়ার দিকে চলে যাওয়ার পর দোকানে খরিদ্দারদের আনাগোনা কম । সেই সময় কঙ্কাবতী গণাকে ডাকলো । দোকানের ভিতরের দিকে দুজনে বসলো । কঙ্কাবতীর প্রথম প্রশ্ন, “বাছা, উপার্জনের কথা কিছু ভাবলে ?”
হ্যাঁ ভেবেছি ।
কীসের ব্যবসা খুলতে চাইছ ?
“বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে আমাদের লন্ড্রির ব্যবসা । তাই লন্ড্রির ব্যবসা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।“ গণা তার সিদ্ধান্তের কথা কঙ্কাবতীকে জানালো ।
“খুব ভাল সিদ্ধান্ত !” কঙ্কাবতী হাসিমুখে গণার কথায় সায় দিয়ে আবার বলল, “তুমি তো বাড়িতে লন্ড্রি খুলতে অনাগ্রহী । সেই ক্ষেত্রে কোথায় দোকান খুলবে, কিছু ঠিক করলে ?”
সেটা নিয়ে ভাবিনি । এই ব্যাপারে মনীষার সঙ্গে সবিস্তারে কথা বলতে চাই ?
ঠিক তখন কঙ্কাবতী মেয়েকে ডাকলো । তারপর মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “গণা তোর সঙ্গে কথা বলে দোকান খোলার জায়গা ঠিক করতে চায় । এই ব্যাপারে তোর কী মত ?”
“মা, আমি চাই গণা আমার দোকানের মধ্যে লন্ড্রির ব্যবসা খুলুক । দোকান ঘরটা লম্বায় অনেক বড় । প্রথম দিকটা যেমন খাবারের দোকান, তেমনি থাক । পেছনের দিকটায় লন্ড্রি খুলুক । দোকান ঘরের ডানদিক ঘেঁষে লন্ড্রিতে যাওয়ার রাস্তা বানিয়ে দিলেই হবে । তা ছাড়া উনুনটা মাঝখানে । প্রয়োজনে গণা ঐ উনুন ব্যবহার করতে পারবে । জামা-কাপড় ইস্ত্রী করার সময় ইলেক্ট্রিক আইরণ ব্যবহার করতে করতে বিদ্যুৎ চলে গেলে কয়লার উনুন গণার জামা-কাপড় ইস্ত্রী করার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে । সুতরাং আমার প্রস্তাবটা গণা একবার ভেবে দেখুক ।“ কথাগুলি বলেই গণা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার প্রস্তাবের ব্যপারে তোমার মত আমি শুনতে চাই ?”
কঙ্কাবতী এবার গণার দিকে তাকিয়ে বলল, “বলো বাছা ! তুমি কী মনীষার প্রস্তাবে রাজী ?”
“মনীষার প্রস্তাবে আমি রাজী । আমার লন্ড্রির ব্যবসার পক্ষে এই জায়গাটা, মোক্ষম জায়গা । যোগযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট ভাল । দোকানে খরিদ্দারদের যাতায়াতের পক্ষে জায়গাটা অতীব সুন্দর । সুতরাং এই প্রস্তাবে রাজী ।“
“তোমার বাবা-মা রাজী হবেন তো ?” কঙ্কাবতী গণাকে জিজ্ঞাসা করলো ।
“বাবা-মাকে আগেই আমি কিছুটা আভাস দিয়েছিলাম, “লন্ড্রির দোকান খোলার জন্য আমি বাজারসৌ স্টেশন চত্বরে ঘর খুঁজছি । সুতরাং তাঁরা আমার সিদ্ধান্তের বিরূদ্ধে যাবেন না ।“ গণা এতগুলি কথা বলে কঙ্কাবতীর মুখের দিকে তাকালো ।
শোনো বাছা, আজ বিকেলে আমি তোমার মা-বাবার সাথে দেখা করতে চাই ?”
“ঠিক আছে । কখন যাবেন, বলুন । আমি সেই সময় আপনাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এখানে আসবো ?” গণা জানতে চাইলো ।
ঠিক বেলা চারটে নাগাদ এসো । তোমাদের ঐখান থেকে ফিরে আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে ।
**************************************************
ঠিক চারটের সময় গণা টোটো নিয়ে মনীষার দোকানে উপস্থিত । খাবারের দোকান বন্ধ রেখে মা ও মেয়ে ছুটলো গণাদের বাড়ি । মনীষার এই প্রথম গণাদের বাড়ি যাওয়া । শক্তিপুর বাজারের পাশে ছোট একটা গলির মধ্যে গণাদের বাড়ি । পুরানো আমলের বাড়ি হলেও ঘরদোর সাজানো-গোছানো । অনেকটা জায়গা নিয়ে বাড়ি । অনেকটা জায়গা থাকার সুবাদে বাড়ির ভিতরটা খোলামেলা । বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া লন্ড্রির দোকান । দোকান ঘরটাও যথেষ্ট বড় । অত বড় বাড়িটায় এখন গণারা তিনজন । বাড়ির চারিদিকে বাউন্ডারি ওয়াল । ভিতরটা কংক্রিটের ঢালাই মেঝে । গণার বাবা ধুতি পাঞ্জাবী পরে মনীষার মাকে ও মনীষাকে স্বাগত জানালো ।
কাছারি ঘরে তাদের বসালো । গণার বাবা প্রথমেই নমস্কার জানিয়ে বললেন, “আমাদের বাড়িতে আপনাদের পদধুলি পড়ায় আমরা খুব আনন্দিত ।“
কঙ্কাবতী ভাল করে গণার বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলো, তিনি একজন আদ্যপান্ত সজ্জন মানুষ । গণার বাবার মুখে সব সময় হাসি । কঙ্কাবতী পরিষ্কার আরও একটা জিনিস বুঝতে পারলো, গণাদের সচ্ছল পরিবার । এবার গণার বাবার দিকে তাকিয়ে কঙ্কাবতী বলল, “আমি এসেছি একটা প্রস্তাব নিয়ে ?”
“চা, জল-খাবার আগে খান । তারপর আলোচনা করা যাবে ।“ গণার বাবা বিনীতভাবে কঙ্কাবতীকে জানালো ।
লুচি, আলুর দম ও বোদের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গণার মা । এবার মায়ের হাত থেকে প্লেট নিয়ে গণা কঙ্কাবতীকে দিয়ে বলল, “প্লেট ধরুন । আগে খেয়ে নিন । পরে বাবার সঙ্গে কথা বলবেন ।“
গরম গরম লুচি ও আলুর দম কঙ্কাবতীর খুব প্রিয় । তার উপর বোদে । পুরো প্লেটটা নিমেষের মধ্যে শেষ । অল্প একটু জল খেয়ে চা চাইলো কঙ্কাবতী ।
খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই কঙ্কাবতী গণার বাবাকে বলল, “দাদা, আমি একটা প্রস্তাব নিয়ে এসছি । আপনি অনুমতি করলে আমার প্রস্তাবটা পেশ করতে পারি ।“
“বলুন দিদি । আপনার প্রস্তাব শোনার জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছি !” কথাটা শোনার জন্য নড়েচড়ে বসলো গণার বাবা ।
“আমার মেয়ে সঙ্গে রয়েছে । আমার মেয়েটি আপনাদের ঘরে লক্ষ্মী বৌমা হয়ে প্রবেশ করুক, এটা আমাদের আর্জি । গণা যেমন ভাল ছেলে, তেমনি আমার মেয়েটিও কর্মঠ ও ভাল মেয়ে । আমার মেয়ের গুণাবলী নিশ্চয় শুনেছেন । সুতরাং আমি মা হয়ে বেশী কিছু বলতে চাই না । তবে এটা ঠিক, আমার মেয়ে আপনাদের ঘরের লক্ষ্মী বৌমা হয়ে আসলে সারা জীবন আপনাদের ঘর সুখ ও শান্তির আলোয় আলোকিত করে রাখবে ।“ তারপর কঙ্কাবতী গণার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “দিদি, আমার মেয়েকে আপনাদের পছন্দ তো ?”
গণার মা বলল, “আপনার মেয়েকে কবে থেকে নিজের আপন মেয়ে হিসেবে ভালবেসে ফেলেছি, সেটা বুঝিয়ে বলতে পারব না । মনীষা মা’কে আমরা ঘরের লক্ষ্মী করে আনতে চাই । একমাত্র মনীষা মা পারবে, আমার ছেলেকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে । কিন্তু………?”
“তাহলে আবার কিন্তু কেন ?” কৌতুহলি দৃষ্টিতে কঙ্কাবতী গণার মায়ের দিকে তাকালো !
কিন্তু আমার ছেলে তো কিছুই কাজ-কর্ম করে না । বিয়ে করার পর সংসার চালাবে কী করে ?
“সেটাও আমি ভেবে রেখেছি ।“ কঙ্কাবতী এবার গণার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল ।
“আপনার ভাবনাটা আগে শুনি ?” গণার বাবা বলল ।
মনীষার খাবারের দোকান বিশাল বড় । রাস্তার ফ্রন্ট-দিকটা চায়ের দোকানের জন্য বরাদ্দ থাক এবং পেছনের দিকটায় গণা লন্ড্রির দোকান খুলুক । বাজারসৌ স্টেশন বাজারের মতো চালু জায়গায় দোকান খুললে, গণার ব্যবসা কয়েকদিনের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাবে । গণা মোটামুটি এলাকা ও এলাকার মানুষের জীবনযাপন সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল । সুতরাং মনীষার সাথে বিয়ে হলে বরং আপনার ছেলের কাজ কর্মের গতি বেড়ে যাবে । দুইজনে উপার্জন করলে, আশা করি, তাদের ভরণপোষণের দুশ্চিন্তা আপনাদের কমে যাবে ।
একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে গণার মা বলল, “গণার ইচ্ছা থাকলে, এই মুহূর্তে আপনার মেয়ের সাথে ছেলের বিয়েতে আমাদের আপত্তি নেই । ছেলের উপায়ের একটা পথ ভেবে যেহেতু আপনারা বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, সেই ক্ষেত্রে আমাদের আর কোনো আপত্তি থাকতে পারে না । মেয়ের বাবা-মা সাধারণত চিন্তা করেন, ছেলে চাকরি বা কাজ-কর্ম না করলে বিয়ের পর তাদের মেয়েকে খাওয়াবে কী ? এখানে সেই ভাবনাটা ভেবেই আপনারা অগ্রসর হচ্ছেন । এটাও আমাদের ছেলের ক্ষেত্রে একটা আশীর্বাদ ।“ এবার গণার বাবার দিকে তাকিয়ে তার মা বলল, “তুমি কিছু বলতে চাইলে বলতে পারো ।“
“গণার আগাগোড়া ইচ্ছা, একটা চালু জায়গায় লন্ড্রির দোকান খোলা । আপনারা গণার সেই ইচ্ছার মর্যাদা দিচ্ছেন । এটাই গণার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া । সুতরাং শীঘ্র বিয়েতে আমাদের ষোলোআনা মত আছে ।“
কঙ্কাবতী এতক্ষণ চুপচাপ ছিল । এবার বলল, “বিয়ের ফাইনাল কথাটা আমাদের বাড়িতে বসে হবে । কেননা মনীষার দাদা, দিদিরা রয়েছে এবং আমার স্বামী এখনও আপনার ছেলেকে দেখেনি । বাড়ির সকলের মতামতের প্রয়োজন রয়েছে । আমি তাদেরকে আপনাদের ইচ্ছার কথা জানাবো । সুতরাং আমাদের বাড়িতে আপনারা শীঘ্র বেড়াতে আসুন । সকলের সামনে বাকী কথাবার্তা আলোচনা করা যাবে !” কথা শেষ হতেই কঙ্কাবতী বাড়ি ফেরার জন্য উতলা হরে উঠল । সন্ধ্যার আগের ট্রেনটা ধরার কথা ছিল । কিন্তু গণাদের বাড়িতে দেরী হওয়ার জন্য সেই ট্রেনটা ধরা সম্ভব হল না । বাড়িতে তার জন্য চিন্তা । বাড়ির বাইরে থাকলে কঙ্কাবতী সাধারণত বিকেলে ঘরে ফেরে । এবার কঙ্কাবতী গণার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “যাই হোক আজ উঠি । আপনারা শীঘ্র আমাদের বাড়ি বেড়াতে আসুন । সঙ্গে অবশ্যই গণাকে নিয়ে যাবেন ।“
দুজনে দোকানে এসে দেখে বেশ কয়েকজন খরিদ্দার সান্ধ্যকালীন খাবার খাওয়ার জন্য বসে রয়েছেন । তবে বিকেলে তাঁরা বেশীর ভাগ সময় ডিম টোস্ট অথবা বাটার টোস্ট খেতে চান । দোকান খুলেই মা-বেটী খরিদ্দার সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো । ট্রেনের খবর পেয়ে কঙ্কাবতী প্লাটফর্মে এসে দাঁড়ালো । তারপর ট্রেনে মিঁয়া হল্ট স্টেশনে নেমে সোজা বাড়ি ।
মনীষার বিয়ের খবরে বাড়িতে সকলেই খুশী ।
মনীষা রাজমিস্ত্রী এমনকি ছুতোর মিস্ত্রী কাজে লাগিয়ে দোকানটা সুন্দরভাবে সাজালো । মাঝখানে এমনভাবে কাজ করলো, যার জন্য কোনো খরিদ্দার একবার দোকানে ঢুকলে দোকানের শেষ মাথা পর্যন্ত কী হচ্ছে অনায়াসে বুঝতে পারবে । উপরন্ত তাদের দোকানে আর একটি মহিমা, দোকান ঘরটি রাস্তা ঘেঁষে । যার জন্য পথ চলতি খরিদ্দারদের নজর সর্বক্ষণ ঐ দোকানের উপর পড়বেই । তার উপর আধুনিক কায়দায় দোকানটির রূপ দিলো । শুরু হল নতুন উদ্যোগে মনীষা ও গণার ব্যবসা । একই ছাদের তলায় চায়ের ও লন্ড্রির দোকান । বাজারসৌ স্টেশনে বহু চর্চিত এখন মনীষার দোকান ।
বিয়ে হয়ে গেলো মনীষা ও গণার । দুজনে খুব খুশী । খুশীর আনন্দে তারা আহ্লাদিত ।
 ক্রমশ