হাজার মানুষের আবেগের জমায়েতে আপ্লুত শহীদ তেভাগার গ্রাম খাঁপুর।

0
294

নিজস্ব সংবাদদাতা, বালুরঘাট, ২০ ফেব্রুয়ারি:- হাজার মানুষের আবেগের জমায়েতে আপ্লুত শহীদ তেভাগার গ্রাম খাঁপুর। লাল ঝান্ডা হাতে নিয়ে জমির আলপথ ও গ্রামের মূলরাস্তা দিয়ে কিষাণ – কিষাণীরা সকালেই তেভাগা শহীদ প্রাঙ্গণে এসে ধামসা মাদলের সুরে নৃত্যে মেতে ওঠে । আগের দিন থেকেই গ্রাম সেজে উঠেছে লাল পতাকায় সজ্জিত হয়ে। সোমবার বেলা যত বেড়েছে মাইকের শ্লোগান আরো জোড়ালো হয়েছে সন্ত্রাসী রক্ত চক্ষুদের উপেক্ষা করেই। এদিন ট্রাক্টর, অটো,টোটো, অন্যান্য যান বাহন থেকে নেমেই আনন্দাশ্রু মেখে আলিঙ্গনরত কৃষকদের মহা সঙ্গমের স্থানে পরিনত হলো তেভাগার শহীদবেদী প্রাঙ্গন। এসেছেন তেভাগার বীর শহীদ পরিবারের সম্মানিয় সদস্যরা। দূর দুরান্ত থেকে এসেছে অতিথিবৃন্দরাও। সকাল নয়টায় উত্তাল শ্লোগানে ছিয়াত্তরতম খাঁপুর তেভাগা শহীদ দিবস উদযাপনের পতাকা উত্তলন ও শহীদ বেদিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান কৃষক নেতা রঘুনাথ রায়। পুস্প স্তবক দিয়ে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানান গন আন্দোলনের রাজ্য নেতৃত্ব দেবলীনা হেমরম সহ উপস্থিত কৃষক নেতৃত্ব, গন আন্দোলনের নেতৃত্ব, শহীদ পরিবারের সদস্য, গ্রামবাসী সহ অগনিত সাধারণ মানুষ। প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই অবিভক্ত বাংলায় ভাগ চাষিরা দাবি তুলেছিল উৎপাদিত ফসলের দুই ভাগ কৃষকের আর এক ভাগ জমিদারের। এছাড়াও জমির দখলিস্ত্ব দিতে হবে ও অতিরিক্ত কোন কর দেওয়া হবে না।সেই সময় থেকেই কৃষক আন্দোলনকে দাবিয়ে রাখতেই আক্রমণ শুরুকরে জমিদার ও সহযোগী ব্রিটিশ প্রশাসন। সেই সময় থেকেই কৃষক আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল খাঁপুর গ্রাম। জমিদারের অত্যাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্রমশ সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা দেশে। জানাযায়, ১৯৪৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জমিদার ও ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীর আক্রমণ নেমে আসে খাঁপুর গ্রামের ভাগ চাষিদের উপর। বন্দুক, গুলি সহ অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জমিদার বাহিনী অতর্কিত আক্রমণ হানে নিরস্ত্র কৃষকদের। কৃষকরা প্রথমে আক্রমণ প্রতিহত করে ও আত্মরক্ষার লড়াইয়ে নামে। জানাযায়, কৃষকরা সেই জানকবুল লড়াইয়ে তীর, ধনুক, বল্লম ইত্যাদি দিয়েই দীর্ঘক্ষন জমিদার বাহিনীকে ঘেরাও করে রেখেছিল। পরবর্তীতে ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনী এসে জমিদারের বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তীব্র আক্রমণ হানে কৃষকদের উপর । সেই দিন ব্রিটিশ পুলিশ কৃষকদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করায় বুকে গুলি বিদ্ধ হয়ে প্রথম শহীদ হন খাঁপুরের কিষাণি যশোদারাণি সরকার। জানাযায় সেই দিন চোদ্দ জন সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। পরবর্তীতে গুলিবিদ্ধ আরো আটজন হাসপাতালে মারাযায়। সেই থেকেই নির্দিষ্ট দিনে কৃষকরা তেভাগার শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছে। সোমবার খাঁপুরের শহীদ কৃষকদের শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজ্য গন আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবলীনা হেমরম বলেন স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই কৃষক নিপিড়ীত ও নির্যাতিত হয়ে আসছে। তাদের পাশে একমাত্র বামপন্থী কৃষক সংগঠনই আছে। তিনি বলেন বর্তমান শাসিত কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার কর্পোরেট কোম্পানিদের এজেন্ট হিসেবেই কাজ করছে। কৃষককের ন্যায্য অধিকার ও পাওনা গন্ডা থেকে বঞ্চিত করে আসছে দুই সরকার । তিনি বলেন কৃষকদের আন্দোলনকে দুর্বল করার লক্ষ্যে তৃণমূল ও বিজেপি জাতিগত ভাগ করে তাদের মধ্যে লড়াই লাগিয়ে দিতে চাইছে। কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। সারের কালোবাজারিতে কৃষক নাস্তানাবুদ। তৃনমুল ও বিজেপি এসব নিয়ে কথা বলেন না। নেত্রী বলেন তেভাগা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খাঁপুরের বীর শহীদরা দিশা দেখিয়েছে কৃষকদের ন্যায্য পাওনার ক্ষেত্রে জান কবুল লড়াই করতে পিছপা হয়নি। এদিন নেতৃত্বরা বলেন কৃষকদের হক বুঝে নিতে জান কবুল লড়াই চলবে রাজ্যে। সামনে পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিক্রিয়াশীলরা আক্রমণ হানলে পালটা জবাব দিতে হবে তাদের ভাষাতেই। এদিন খাঁপুরে তেভাগা শহীদ বেদি প্রাঙ্গণ মঞ্চে কৃষকদের সমস্যার কথা তথ্য সহ আলোচনা করেন কৃষক নেতৃত্ব ও গন আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। কৃষক নেতৃত্ব অভিযোগ করেন প্রতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সহ অন্যান্য অনুষ্ঠান চলে কিন্তু এবার তৃনমুলের দলদাস স্থানীয় প্রশাসন দুপুর পর্যন্ত শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানের অনুমতি প্রদান করেন। তাই স্থানীয় বহু শিল্পী গান, আবৃত্তি, নৃত্য ইত্যাদি পরিবেশন করতে নাপেড়ে আশাহত হয়েছেন।এদিন মূল সভার সূচনাতেই কোলকাতা থেকে আগত গননাট্যা সংঘের শিল্পীবৃন্দ গন সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সকাল থেকেই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও আলোচনার বিরতিতে স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গীত ও আদিবাসী নৃত্য পরিবেশিত হয়। এদিন তেভাগার খাঁপুরে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন বামফ্রন্টের আহবায়ক নারায়ণ বিশ্বাস, কৃষক নেতা সকিরুদ্দিন আহমেদ, শ্রমিক নেতা নেতৃত্ব গৌতম গোস্বামী, এছাড়াও গন আন্দোলনের নেতৃত্ব কল্যাণ দাস, সর্বানি নিয়োগী, বিমল সরকার, সুব্রত সরকার, সুব্রত দাস, তরুন গুহ প্রমুখ। শ্রদ্ধা অনুষ্ঠান সহ মূলসভা
পরিচালনা করেন কৃষক নেতা অমিত সরকার ও মানবেশ চৌধুরী।