সাহিত্যের নিরিখে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরের এক ঝলক : দিলীপ রায়।

0
2871

ঢাকা, বাংলাদেশ:- প্রথমেই বলি, এবার ভিন্ন-ভিন্ন স্বাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম যেটা সাহিত্যের নিরিখে ভীষণ প্রাসঙ্গিক !
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতির আমন্ত্রণে আমার বাংলাদেশ সফর ।
একুশে ফেব্রুয়ারি (২০২৩) ফ্লাইট থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে সোজা গিয়েছিলাম “আসমান-জমিন” পত্রিকা অফিস উদ্বোধনে । সেখানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৭ বারের সংসদ সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন ছাত্র নেতা শ্রদ্ধেয় আ স ম ফিরোজ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বার্তা সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আয়ুব ভুঁইয়া এবং কলামিস্ট, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মীর আব্দুল আলীম । স্বল্প পরিসরে সাংবাদিক-সাহিত্যিকদের নিয়ে সুন্দর একটি উচ্চ-মানের অনুষ্ঠান । তারপর সোজা যাই শহীদ মিনার । সেখানে শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করি । এটা ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলি ।

বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতি একটি সমৃদ্ধশালী সাহিত্য সংগঠন । সংগঠনটি এপার-বাংলা ও ওপার-বাংলার কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরী করার নিরিখে এবং ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীবন্ধন দৃঢ় করার অভিপ্রায়ে একুশে বইমেলা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে “ভারত-বাংলাদেশ জাতীয় সাহিত্য উৎসব-২০২৩” গত ২২শে ফেব্রুয়ারী (২০২৩) সংঘটিত করলো । যে অনুষ্ঠানের ভারতের পক্ষ থেকে আমি ছিলাম যুগ্ম আহ্বায়ক । সুন্দর একটি উচ্চ-মানের সাহিত্য অনুষ্ঠান । সারাদিন ব্যাপী কবিতা, আবৃত্তি, ছড়া, গান, আলোচনায় অনুষ্ঠানটি সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠেছিল । বাংলাদেশ সরকারের দুইজন গুরুত্বপূর্ণ ক্যাবিনেট মিনিস্টার উপস্থিত ছিলেন । একজন মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ ও অন্যজন মাননীয় পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী । অনুষ্ঠানটি ফিতে কেটে উদ্বোধন করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য মোঃ আখতারুজ্জামান ।

সারাদিন অনুষ্ঠানের মাঝে একান্ত কাছে পেয়েছিলাম বরিষ্ঠ কবি ও একুশের পদক জয়ী অসীম সাহা, শিশু সাহিত্যিক ও একুশের পদক জয়ী আসলাম সানী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বার্তা সম্পাদক আয়ুব ভুঁইয়া ও বাংলা একাদেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনকে । পরে দেখা হয়েছিল ভ্রাতৃসম জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক ড. মাসুদ পথিকের সাথে । সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভ্রাতৃসম আবু হানিফ হৃদয় । উল্লেখ থাকে যে, ভারত থেকে আমরা যথেষ্ট সংখ্যায় কবি, লেখক, বাচিক শিল্পী, সাহিত্যিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম । তাঁদের মধ্যে অন্যতম ড. রামপদ বিশ্বাস, পার্থসারথি ঝা, দিলীপ কুমার প্রামাণিক, বুলু রায়, সুমিতা পয়ড়্যা, নন্দিনী লাহা, প্রমুখ । এই ধরনের বরিষ্ঠ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে এবং যথোপযুক্ত সম্মান পেয়ে আমি “নারায়নগঞ্জ জেলা সমিতি”এর কাছে নতমস্তকে কৃতজ্ঞ । অনুষ্ঠানটি সফলভাবে পরিচালনার জন্য অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ও সদস্য-সচিব মীর আব্দুল আলীমকে (কলামিস্ট, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক) আমার অন্তরের ভালবাসা ও শুভকামনা ।

পরেরদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভুলতায় অবস্থিত আল-রফি হাসপাতাল পরিদর্শন করার পর হাজির ছিলাম “ব্রাইট শিশু কানন হাই স্কুল” এর অনুষ্ঠানে । অনুষ্ঠানটি সংঘটিত হয়েছিল নগরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । শিশুদের নাচ-গান সহ হৃদয়গ্রাহী একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । এক কথায় বাচ্চাদের সুন্দর একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান । এখানে রাসেল আহমেদ (সাংবাদিক) ভাইয়ের আতিথেয়তা ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক । ১৩টি রসনা তৃপ্ত দেশি মাছের ডিস দিয়ে দুপুরের আহারের ব্যবস্থা, একটি চরম পাওয়া । পরেরদিন সকালে পৌঁছালাম “রক্তের বন্ধন ফাউন্ডেশন” প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অনুষ্ঠানে । এই প্রতিষ্ঠানটি সমাজের হিতার্থে রাত-দিন সমানে কাজ করে চলেছে । এইজন্য রক্ত-যোদ্ধাদের আমার হার্দিক অভিনন্দন । রক্ত-যোদ্ধাদের অনুষ্ঠানটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে ছুটলাম “দৈনিক দিন প্রতিদিন” পত্রিকার বার্ষিক অনুষ্ঠানে । বাংলাদেশের বরিষ্ঠ সাংবাদিকরা সেখানে হাজির ছিলেন । সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলতে গিয়ে আমি বললাম, “আপনারা অর্থাৎ সাংবাদিকেরাই পারেন দেশ উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা নিতে ।“ সুন্দর একটি অনুষ্ঠানের সাক্ষী রইলাম । শেষদিন হাজির ছিলাম “রূপগঞ্জ সাহিত্য পরিষদ” আয়োজিত দুই বাংলার সাহিত্য সম্মেলনে । সেখানে অনেক গুণী কবি-সাহিত্যিকেরা উপস্থিত ছিলেন । এছাড়া ছিল বন্ধুবর মীর আব্দুল আলীমের বাড়িতে স্বল্প সময়ের জন্য আতিথেয়তা গ্রহণ !
পরিশেষে ভারতের কথা সাহিত্যিক হিসাবে আমার উপলব্ধি, “বাংলাদেশ সফরের ফলে দুই দেশের মানুষের ভালবাসার বাঁধন আরও মজবুত হলো ।“