কথা দিয়েও বিচিত্রা অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী না আসায় মিউজিক্যাল টিমের শিল্পীদের হেনস্থা এবং তাঁদের সাউন্ড সেটআপ ও ইনস্ট্রুমেন্ট আটকে রাখার অভিযোগ উঠল একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে।

0
279

পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:– কথা দিয়েও বিচিত্রা অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী না আসায় মিউজিক্যাল টিমের শিল্পীদের হেনস্থা এবং তাঁদের সাউন্ড সেটআপ ও ইনস্ট্রুমেন্ট আটকে রাখার অভিযোগ উঠল একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে কাঁথি শহরে মাঠে নামেন শিল্পীরা। প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে সোশ্যাল সাইট ফেসবুক কে বেছে নেন শিল্পী সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় ও লোপা মুদ্রা। এমনকি সুবিচার চেয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ জানান তাঁরা। কাঁথির বকশিসপুর গ্রামের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিল্পীমহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।‘বকশিসপুর স্পোর্টস অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটির’ উদ্যোগে রক্ষাকালী পুজো উপলক্ষে গত ৩ এপ্রিল বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ৩ থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ছ’দিন ধরে ওই ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার ইনস্ট্রুমেন্ট আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, ইনস্ট্রুমেন্ট ছেড়ে দেওয়ার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। এতে রীতি মতো বিপাকে পড়ে গিয়েছেন মিউজিশিয়ানরা। ইনস্ট্রুমেন্টের অভাবে তাঁরা কোনও অনুষ্ঠান করতে কিংবা বাড়ি ফিরতেও পারছেন না। হোটেলে ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। এব্যাপারে জুনপুট কোস্টাল থানাকে জানানো হলেও প্রতিকার হয়নি বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে ‘বেঙ্গল স্টেজ পারফর্মার্স গিল্ড’ সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে শিল্পী মহল এবং মিউজিসিয়ানরা শনিবার কাঁথি শহরের পথে নামেন। পাশাপাশি শিল্পীদের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও ই-মেল মারফত এবিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে এদিন দুপুরে কাঁথি সেন্ট্রাল বাসস্ট্যাণ্ড থেকে শুরু হয়ে একটি মিছিল শহর পরিক্রমা করে। কাঁথির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে ডেপুটেশনও দেওয়া হয়। এই মিছিলে শামিল হন অভিনেত্রী মানালি দে’ সহ অন্যান্যরা। ঘটনার সূত্রপাত, কাঁথির বাসিন্দা সুমিত মাইতি নামে এক অর্গানা‌ইজার ওই বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়ের। তার আগে কলকাতার ওই মিউজিক্যাল টিম সঙ্গীতানুষ্ঠান শুরু করে। যথাসময়েই কাঁথি পৌঁছে গিয়ে ছিলেন দেবশ্রী রায়। কাঁথি শহরে এসে দেবশ্রীর পক্ষ থেকে অর্গানাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ, উদ্যোক্তা সংস্থা ফোন ধরেনি। সেন্ট্রাল বাস স্ট্যাণ্ডে দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও অর্গানাইজারের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগই করা হয়নি। কোনও পুলিশ প্রোটেকশনের ব্যবস্থা না হওয়ায় শেষমেশ গাড়ি ঘুরিয়ে কলকাতায় ফিরে যান দেবশ্রী রায়। এদিকে অভিনেত্রী দেবশ্রী রায় আসবেন না শুনে ক্ষেপে যান বিচিত্রানুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকরা। শুরু হয় বিক্ষোভ। ভাঙচুর করা হয় প্যাণ্ডেল, আলো। আয়োজক ক্লাবের লোক জনের সঙ্গে উপস্থিত শিল্পীদের ঝামেলা হয়। শিল্পীদের সারারাত আটকে রেখে হেনস্থা করা হয়। পুলিশের হস্ত ক্ষেপে পরদিন সকালে শিল্পীরা ছাড়া পান। কিন্তু সমস্ত ইনস্ট্রুমেন্ট আটকে রাখা হয়। অভিযোগ, ইনস্ট্রুমেন্ট ছেড়ে দেওয়ার জন্য বুকিং এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা ফেরতের দাবি করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্ত ক্লাবের সভাপতি, জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মধুরিমা মণ্ডলের স্বামী মানবেন্দ্রনাথ মণ্ডল। তিনি বলেন, “পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করার বিষয়টি ভিত্তিহীন। দেবশ্রী না আসায় দর্শকদের বিক্ষোভের জেরে প্যাণ্ডেল, লাইট ও মাইকসেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বুকিংয়ের সব টাকা এবং ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিলেই সমস্ত সামগ্রী ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। আমরাও চাইছি সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান।এব্যাপারে অর্গানাইজার সুমিত মাইতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোন ‘সুইচ অফ’। ফলে মেলেনি তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি পুলিশ সুপার রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটে যাবে বলেই আমরা আশাবাদী।”