তৃণমূলের বহিষ্কৃত দাপুটে নেতা আবুয়াল আজাত সহ গ্রেপ্তার ৬, উদ্ধার তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র সহ ৬ রাউন্ড গুলি।

0
215

মনিরুল হক, কোচবিহার: দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের একের পর এক গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত কোচবিহার জেলার গিতালদহ এলাকা। সেই এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বহিষ্কৃত দাপুটে নেতা তথা পঞ্চায়েত সদস্য আবু আল আজাদ ও তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করল দিনহাটা থানার পুলিশ। পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে ৩ টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১১ রাউন্ড গুলি। আজ ধৃতদের দিনহাটা আদালতে তোলা হয়। ধৃতদের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে চাওয়া হলে আদালত ১০ দিনের হেফাজত দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

জানা গেছে,পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই বিগত কয়েকদিন ধরেই কোচবিহারের গিতালদহে লাগাতার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত রবিবার দিনহাটা ১ ব্লকের গিতালদহ বাজারে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে ভাংচুর চালানো হয়। একরামুল হক নাম এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে ভাংচুর চালায় কিছু লোকজন। একরামুলের বাড়িতে স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা জড়ো হন। এরপরেই এক বিরোধী গোষ্ঠী তাঁর বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এভাবেই কয়েকদিন ধরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে দিনহাটার গিতালদহ এলাকা। গত সোমবার গিতালদহের দড়িবস সীমান্তে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনায় একজন আহত হয়ে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেই ঘটনার জেরে গিতালদহ দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ানোর খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে যান দিনহাটার পুলিশ আধিকারিক ত্রিদীপ সরকার ও দিনহাটা থানার আইসি সুরজ থাপার নেতৃত্বে এক বিশাল পুলিশ বাহিনী। পরে গিতালদহ এলাকায় অভিযান চালিয়ে আগ্নেয় অস্ত্র সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেন। ভোটের আগে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করতে পুলিশের এই অভিযান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে গিতালদহে বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতরা হলেন তৃণমূলের বহিষ্কৃত দাপুটে নেতা তথা নাগরিক মঞ্চের কনভেনার আবুয়াল আজাদ, তৃণমূলের অঞ্চল সম্পাদক মনিরুল হোসেন ও চেয়ারম্যান জাকির হোসেন,সাজ্জাদ হোসেন, মিলন বর্মন ও ফিরদৌস আলী। আজ তাদের আদালতে তোলা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমার সানিরাজ বলেন, “৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লাগাতার অভিযান চলবে।”

এবিষয়ে গিতালদহ -২ অঞ্চল সভাপতি আনারুল হক জানান, “দিনহাটা থেকে পুলিশ বাহিনী এসে আমাদের কর্মীদের উপর অত্যাচার করে। পার্টি অফিস ভাঙচুর করে। পুলিশের কী উদ্দেশ্য আমরা বুঝতে পারছি না।” এদিন গিতালদহে তৃণমূলের নেতাদের ধরতে গেলে পুলিশের একাংশ বাধা প্রাপ্ত হয় বলে অভিযোগ। এরপর পার্টি অফিসে হানা দেয় পুলিশ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে লাগাতার গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে এই অভিযান বলে জানান হয় পুলিশের তরফে।

এদিন এবিষয়ে গিতালদহ-২ অঞ্চল সভাপতি দীননাথ বর্মন জানান, একরামুলের বাড়িতে তিনি হাজির হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হামলা চালানো হয়। লুঠপাট চালানো হয় ওই তৃণমূল কর্মীর বাড়ি। বাঁশ,বাটাম দিয়ে ভাঙচুর চালানো হয় তাঁর বাড়িতে। ঘটনায় একরামুল হকের বাড়ির লোকজন আহত হন। আহতদের সঙ্গে সঙ্গে দিনহাটা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।

উল্লেখ্য, কোচবিহার জেলার দিনহাটায় তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। সম্প্রতি এই জেলা থেকেই তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নব জোয়ার কর্মসূচি শুরু করেছেন। জনসংযোগ কর্মসূচির পরেই সিতাইয়ে তৃণমূলের ভোটগ্রহণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও ব্যালট বাক্স লুট, ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের পরেও গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।