আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ- বছর দেড়েক আগে স্ত্রীকে আগুনের হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে শুভজিৎ দাস, স্ত্রী সুশীলা দাস জনপ্রিয় দুই বাউল শিল্পীর মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ঘটে বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস ব্লকের ফতেপুর গ্রামে।
হঠাৎ যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে ওই পরিবারে, ষাট বছরের বৃদ্ধা মা, এক পুত্র, এক কন্যার জীবনে নেমে আসে চরম অভাব -অনটন এবং যন্ত্রণাদায়ক দারিদ্র্যতা মধ্যে শুরু হয় লড়াই। নাবালিকা বড় দিদির ছোট ভাইটিকে মা-বাবার স্নেহ আদর দিয়ে আঁকড়ে ধরে বুকে, কিন্তু মাঝেমধ্যেই মন যে কেমন করে বাবা মার জন্য আর তখন
জনপ্রিয় শিল্পী মা-বাবার গানর ভিডিও চালিয়ে দিয়ে ঘরের জানলা কপাট বন্ধ করে সবার অলক্ষে চোখের জল ফেলে নাবালিকা বড়দিদি ও ছোট্ট ভাই।
বিধবা ঠাকুরমা রেশনের দেয়া চাল আর বিধবা ভাতার হাজার টাকা দিয়ে কোনমতে অভাবের সংসার চালান কিন্তু নাতি-নাতনীর মুখে ভালো-মন্দ খাবার তুলে দিতে পারেন না তাই তার মধ্যে আছে চরম যন্ত্রণা ও কষ্ট।
জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী জুটির আদরের পুত্র কন্যা কেমন আছে, কিভাবেই বা চলছে সংসার আর কেমন করের বা হচ্ছে নাবালক- নাবালিকার পড়াশোনা সেই খোঁজ নিতে পৌঁছে যায় আমাদের সাংবাদিক আবদুল হাই ।
চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা বৃদ্ধা ক্যামেরার সামনে নিজের ও নাতি নাতির কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন। ক্যামেরার সামনে উঠে এলো মৃত শিল্পী জুটির নাবালিকা কান্না ও ছোট্ট পুত্র সন্তানের অসহায় দুটি চোখ, খুঁজছে নিয়মিতই বাবা-মাকে, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি বৃদ্ধা ঠাকুমার, বেড়াতে গেছে তারা, ফিরে আসবে, কাঁদিস না বাবা। ছোট ভাইয়ের নাবালিকা বড় দিদি জানে এ কত বড় মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, তাদের বাবা-মা আসবেনা আর কোনদিন, ঠাকুমা চলে গেলে তারা এই বিশাল পৃথিবীতে একা, বড় একা হয়ে যাবে।
বৃদ্ধা ঠাকুমার গলা তো সেই আক্ষেপ আমি আছি যতদিন তবুও কোনমতে ওদের খাইয়ে পড়িয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারব কিন্তু আমি চলে গেলে এদের কিভাবে জীবন চলবে আর কি খেয়েই বা বাঁচবে জানিনা। তোমরা আছো দেখো ওদের।
পৃথিবীতে এরকম অসহায় মানুষ অনেক আছে হয়তো সবার কথা আমরা জানি না আর জানা সম্ভব হয় না কিন্তু যাদের কথা জানতে পারি তাদের জন্য কি কোন হৃদয়বান ব্যক্তি আগিয়ে আসবে না, সহযোগিতার হাত কি বাড়িয়ে দেবে না ছোট্ট দুটি শিশু সন্তানের জন্য আর যদি সেটা হয় তবে জানব পৃথিবী এখনো মানুষ শূন্য হয়ে যায়নি, পৃথিবীর মানুষ এখনো আবেগ হারিয়ে ফেলেনি এবং বিবেক, মনুষ্যত্ব বিসর্জন দেননি।