শুধু দুর্গা প্রতিমারই নয়, বাবারও চক্ষুদান করল মেয়ে! বাবার ঠাকুর গড়ার দৃশ্য মাটির শিল্পকর্মে , যা বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে প্রধান আকর্ষণ।

0
564

নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- মা দুর্গার মূর্তি গড়ছেন বাবা, আর সেই দৃশ্যই ছোটবেলা থেকে দেখে অভ্যস্ত মেয়ে। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, জীবনের প্রথম নিজের হাতে ঠাকুর গড়লো সে।
যা নিয়ে, রীতি মতন কাড়াকাড়ি বাবার কাছে দুর্গা ঠাকুর অর্ডার দেওয়া এ বছরের 11 টি বারোয়ারির সদস্যরা।
তবে বাবা বা মেয়ে কেউই কুম্ভকার সম্প্রদায় ভুক্ত নয়। বাবা ঈশ্বর প্রদত্ত শিল্পী আর মেয়ে শিল্পকে ভালোবেসে।
মায়ের কথা অনুযায়ী, ঠাকুর বানানোর চেয়েও মানুষের মুখ বানানো অনেক কঠিন, যা ওর বাবা সুপরিচিত প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হয়েও পারেনা।
লকডাউনে যেমন অনেক ক্ষতি হয়েছে, তেমন কারো কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ গৃহবন্দী থাকার সুফলও পাওয়া গেছে। মেয়ের হাতে হুবহু বাবার মুখের অবয়ব দেখে তাজ্জব ঠাকুমাও।
। গাংনাপুর এর বাসিন্দা সঞ্জয় কাপুরিয়া বংশ-পরম্পরায় কুম্ভকার সম্প্রদায় ভুক্ত না হওয়ার পরেও ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল তার কুম্ভকার হওয়ার। সেই থেকেই তার যাত্রা শুরু প্রতিমা গড়ার। এবার তাকেও ছাপিয়ে গেল তার মেয়ে কোয়েল কাপুরিয়া। ক্যালেন্ডার এর মধ্যে বাবার দুর্গা প্রতিমা গড়ার রেপ্লিকা ফুটিয়ে তুলল সে। মাটি, আঠা, পেরেক, রং ইত্যাদি সহযোগে হুবহু সেই দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছে ক্যালেন্ডার এর মধ্যে। আর বর্তমানে সেটি নেওয়ার জন্যই উঠে পড়ে লেগেছে একাধিক পূজা কমিটি গুলি।

গাংনাপুরের বাসিন্দা সঞ্জয় কাপুরিয়ার বাবা পেশায় ছিলেন সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবসায়ী , সেই সুবাদ বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে গিয়ে তার সাধ জাগে ঠাকুর বানানোর। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মন ছিল না তার, পুকুর পাড়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ঝাঁটার কাঠি দিয়ে ঠাকুর বানাতে সে। ছোটবেলায় একদিন একটি কালী মূর্তি সে তৈরি করার পর তার বাবা সেদিকে ফেলে দেন। এরপর তার বাবা স্বপ্নাদেশ পান সেই কালি ঠাকুর পূজা করার। এরপর পুনরায় সঞ্জয় বাবুর নিজের হাতে বানানো একটি কালী ঠাকুর বানিয়ে পূজা করা হয় তাকে। এরপরে একান্নবর্তী পরিবারে বাড়ির মন্দিরে বেশ কিছু দেবদেবী সিমেন্টের বানানো অসাধারণ ঠাকুরের মূর্তি পূজিত হন।

তবে তার বড় মেয়ে ইতিমধ্যেই ছাপিয়ে গিয়েছেন তাকে। সঞ্জয় বাবুর দুই মেয়ে বড় মেয়ে কোয়েল কাপুরিয়া নদিয়ার গাংনাপুরে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরতা। ছোটবেলা থেকেই বাবার মত শিল্পের প্রতি আগ্রহ তার। বাবা মাও কখনও তাকে বাধা দেননি। ছোটবেলা থেকেই সেই আঁকতো। বাবা-মাকে জন্মদিনে দেওয়া তার নিজের হাতের আঁকা দেখে জন্মদাত্রী এবং জন্মদাতারা বুঝেছিলেন, মেয়ে একদিন মুখ উজ্জ্বল করবে।
এরপর লকডাউনের সময় সে শুরু করে বাবার মতই মাটি দিয়ে মূর্তি গড়ার কাজ। প্রথমদিকে বাবার সঙ্গেই অল্প অল্প করে মূর্তি গড়তে হাত লাগায় সে। এরপর মাটি দিয়ে বাড়িতেই সখের বশে একাধিক জিনিস বানায়। মাটির তৈরি জুতো, অরিজিৎ সিং এর মুখ, নেতাজি রবীন্দ্রনাথ সহ বিভিন্ন মনীষীদের মূর্তি একাধিক দুর্গা প্রতিমার মিনি আর্মেচার দেখে অবাক প্রতিবেশীরাও। তবে এ সকল কর্মদক্ষতা মাত্র দু বছরের মধ্যেই। বাবার সাথে পাল্লা দিয়ে সে বানিয়ে চলেছে অবিকল জীবন্ত মূর্তি। তা দেখে তাজ্জব সকলেই। তবে এবার বাবাকে ঠাকুর বানাতে দেখে সেই দৃশ্যই রেপ্লিকা হিসেবে ক্যালেন্ডার এর মধ্যে ফুটিয়ে তুলল সে। একটি ক্যালেন্ডার এর মধ্যে সে ফুটিয়ে তুলেছে তার বাবার মূর্তি গড়ার কাজ। বাবা মূর্তি গড়ছে এবং সেই দৃশ্যই একই পদ্ধতিতে মেয়ে ফুটিয়ে তুলেছে ক্যালেন্ডারের রেপ্লিকাতে। ইতিমধ্যেই সেই রেপ্লিকা মন্ডপসজ্জা হিসেবে নেওয়ার জন্যে পুজো কমিটির মধ্যে চলছে হুড়োহুড়ি। তবে জয়বাবুর মেয়ে কোয়েল কাপুড়িয়া জানায় এটি সে কাউকেই দেবে না তার বাবার ঠাকুর করার কারখানাতেই এটি বানানো শিল্প নিদর্শন হিসেবে থাকবে।

দ্বাদশ শ্রেণীর একটি ছাত্রীর এই প্রতিভা দেখে প্রতিবেশীরা মনে করছেন,ভবিষ্যতে সে একজন স্বনামধন্য শিল্পী হবে। এবং তার শিল্প নিদর্শন স্থান পাবে বিশ্ব দরবারে। তবে ছোট্ট মেয়ে কোয়েল কাপুড়িয়া এখন সেই সব ভাবতে রাজি নয়। সামনেই দুর্গাপুজো, ইতিমধ্যেই বাবার মূর্তি করতে ব্যস্ত সে। ভবিষ্যতে তার ইচ্ছে আর্ট কলেজে পড়ে এই সম্পর্কে আরো জ্ঞানপ্রাপ্ত করার। তার বাবা-মাও চায় মেয়েকে আর্ট কলেজে ভর্তি করতে। একদিন সে তার বাবার থেকেও বড় মাপের একজন শিল্পী হয়। তবে এটুকু বলাই বাহুল্য ভবিষ্যতে আরও এক স্বনামধন্য শিল্পী পেতে চলেছে নদিয়াবাসী।