আশ্রমের মহারাজকে দেখে পুবালী রীতিমতো চমকে উঠলো ! এটা কী করে সম্ভব ! পুবালীর মনে একটাই প্রশ্ন, তার অন্তরের মানুষ এখানে কেন ?
সকালের টিফিন খাওয়া মাথায় উঠলো পুবালীর । সে পুরানো দিনের স্মৃতিতে ফিরে গেলোঃ প্রদীপ্ত সবে পোস্ট গ্রাজুয়েট । বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ. । বাড়িতে বসে চাকরির চেষ্টা । যদিও চাকরির বাজার মন্দা ! তাই নিজের এলাকার আনাচে-কানাচে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা । পুবালীর বাবা স্বয়ং একদিন প্রদীপ্তের কাছে হাজির । কী ব্যাপার ? ব্যাপার হচ্ছে, পুবালীর ছোট ভাই নকড়িকে টিউশন পড়াতে হবে । বাড়িতে বসে, তাই প্রদীপ্ত আপত্তি করেনি । নকড়িকে পড়ানো শুরু করলো । সন্ধেবেলায় পড়ানো । পরের বছর নকড়ির উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা । তাই পড়ানোর চাপ বেশী । নকড়িকে পড়ানোর জন্য প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময় ছাড়াও বেশী সময় থাকে । একটাই উদ্দেশ্য, নকড়ি যাতে ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করতে পারে । নতুবা টিউশনির মাস্টার হিসাবে তার বদনাম ।
নকড়ির দিদি পুবালী । পুবালী তখন সালার কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী । ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা সামনে । তাই কলেজে ক্লাস শেষ । বাড়িতে বসে তার পড়াশুনা । এদিকে প্রদীপ্ত প্রায় প্রতিদিন নকড়িকে টিউশনি পড়াতে যায় । নকড়িকে পড়ানোর জন্য মাঝে মধ্যেই তাকে অতিরিক্ত সময় দিতে হয় । যেদিন অতিরিক্ত সময় প্রদীপ্তকে দিতে হয়, সেদিন চা-জল খাবার দেওয়ার দায়িত্ব পুবালীর । পুবালীর সাথে প্রদীপ্তের আগে আলাপ ছিল না । বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থেকে প্রদীপ্তের পড়াশুনা । পাশের গ্রামের ছেলে হওয়ার সুবাদে পুবালীর সাথে সেভাবে ঘনিষ্টতা জন্মায়নি । পাড়ার বান্ধবীর মুখে প্রদীপ্তের নাম শুনেছিল, কিন্তু কোনোদিন সাক্ষাৎ হওয়ার সৌভাগ্যে ঘটেনি । তাই কৌতুহলবশত মাঝে মাঝেই ভাইয়ের পড়ার ঘরে উঁকি দিয়ে মাস্টারকে দেখে নিতো । লম্বা চওড়া সুপুরুষ । মুখটা খুব মিষ্টি । হাসিখুশী । অমায়িক ব্যবহার । চেহারায় একটা অদ্ভূত মিষ্টতা, যেটা পুবালীকে প্রদীপ্তের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল । যাই হোক প্রথমদিন জলখাবার দেওয়ার সময় কোনো কথা হলো না । পরেরদিন পুনরায় পড়াতে এলে সেদিনও প্রদীপ্ত অতিরিক্ত সময় থাকলো । সেদিন চা-জলখাবার দিতে গেলে নকড়ি মাস্টারের দিকে তাকিয়ে পুবালীকে দেখিয়ে বলল, “স্যার, আমার দিদি ।“
“নমস্কার ।“ প্রদীপ্ত জোড় হাতে পুবালীর দিকে তাকিয়ে নমস্কার জানালো ।
প্রতি-নমস্কার জানিয়ে পুবালী এক গাল হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনি কোথায় চাকরি করেন ?”
“আমি চাকরি করি না । বাপের হোটেলে খাই-দাই, আর ঘুরে বেড়াই । আমি একজন বেকার মানুষ ।“ হেসে হেসে প্রদীপ্ত উত্তর দিলো ।
অন্যদিকে কৌতুহলবশত প্রদীপ্ত পুবালীকে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনি কী চাকরি করেন ?”
সালার কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী । চাকুরিজীবি না ।
অর্থাৎ আপনি কী বি.এ. ফাইনাল দিচ্ছেন ?
“ঠিক তাই । সামনে ফাইনাল পরীক্ষা । কলেজের ক্লাস শেষ ! তাই বাড়িতে বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি ।“ বলেই পুবালী পুনরায় প্রদীপ্তকে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনার বাড়িটা কোথায় ?”
পাশের গ্রামে ।
বাবা কী করেন ? কৌতুহলবশত পুবালীর সরাসরি জিজ্ঞাসা ।
“বাবা হাই স্কুলের শিক্ষক আর মা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা ।“ প্রদীপ্ত মুচকী হেসে পুবালীর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “আর কোনো প্রশ্ন ?”
প্রদীপ্তের মুচকী হাসি পুবালীকে বুঝিয়ে দিলো, পুবালীর ব্যবহারে প্রদীপ্ত বিরক্ত নয় । পুবালী নিজের পড়ার টেবিলে ফিরে গিয়ে অনেকক্ষণ প্রদীপ্তের কথা ভাবলো । ভাবনার মধ্যে বারংবার প্রদীপ্তের প্রাণখোলা হাসি পুবালীর বুকের মাঝে উঁকি দিচ্ছিলো । সেই রাত্রিতে পুবালীর পড়াশুনার প্রতি মন বসলো না । প্রায় সারা রাত্রি প্রদীপ্তকে নিয়ে পুবালীর উত্থাল-পাতাল হৃদয় !
শনিবার সন্ধ্যাবেলায় মা-বাবা গাঁয়ের সুজন কাকুদের বাড়ি কালী পুজোর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেলেন । শনিবার রাত্রিতে নাকি মানসিক কালী পুজোর শুভক্ষণ । তাই তাঁদের বাড়িতে কালী পুজো । তবে এই পুজোর একটা বৈশিষ্ট্য, সূর্য ডোবার পর, মায়ের মূর্তি বাড়িতে ঢুকবে এবং পুজা শেষ হয়ে গেলে রাত্রিতেই অর্থাৎ সূর্য ওঠার আগেই বিসর্জন দিতে হবে । সেখানে পুবালীর মা-বাবা দুজনে গেলেন । যাওয়ার সময় বারকয়েকবার মা পুবালীকে বলে গেলেন, টিউশন মাস্টারকে ঠিকমতো চা-জলখাবার দিতে ।
এদিকে বাবা-মা ঘরে নেই । সেইজন্য নকড়িবাবুর পোয়াবারো । বকাঝকা করার কেউ নেই । দিদিকে সে পাত্তাই দেয় না, বরং দিদি তার বন্ধু । তাই প্রদীপ্ত পড়াতে আসার সাথে সাথে নকড়ি বলল, “মাস্টার মশাই, আজ বেশীক্ষণ পড়ানো চলবে না । জি-বাংলার নাচের অনুষ্ঠান দেখবো ।“
ঠিক একঘন্টার মধ্যেই নকড়ি পড়া থেকে উঠে সোজা দিদিকে বলল, “স্যারকে আমি তোর হাতে হ্যান্ডোভার করে দিলাম ।“
পুবালী ভাইয়ের গালে আদর করে বলল, “তুই দিন দিন বড্ড পাকা হচ্ছিস ।“
প্রদীপ্ত বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছিলো ঠিক সেই সময় নকড়ি ছুটে এসে বলল, “উঁহু ! আপনি উঠবেন না । দিদি আসছে । দিদি আপনার সাক্ষাৎপ্রার্থী !” বলেই নকড়ি ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো ।
পরক্ষণেই পড়ার ঘরে পুবালীর আগমন । তখন প্রদীপ্ত মোবাইলের দিকে তাকিয়ে কীযেনো ভাবছে !
মাস্টার মশাই, আপনার চা ।
আমাকে মাস্টার মশাই বলবেন না প্লীজ । “মাস্টার মশাই” শুনলে নিজেকে মনে হয় হাই স্কুলের বয়স্ক একজন শিক্ষক ।
তাহলে মাস্টার মশাই, আপনি বলে দিন, কীভাবে আপনাকে ডাকবো ?
আপনার যেটা ভাল মনে হবে, সেটা বলেই ডাকবেন ।
উঁহু মাস্টার মশাই ! তা হবে না, আপনাকে স্বয়ং বলে দিতে হবে কীনামে আপনাকে ডাকবো ?
আচ্ছা জ্বালায় পড়া গেলো । তখন থেকে মাস্টার মশাই বলেই যাচ্ছেন । এবার একটু বিরতি নিন । আমাকে ভুল-ঠিক একটা কিছু বলে ডাকবেন । তাতেই আমি সন্তুষ্ট । এতবার আমাকে ‘মাস্টার মশাই’ ডাকবেন না ।
তাহলে আপনাকে আমি মশাই নামে ডাকবো ।
এটা কী ধরনের নাম ? আমার মাথায় ঢুকছে না ! অন্য নাম ভাবুন ।
আজগুবি কথাবার্তা বলে পুবালী খুব মজা পাচ্ছিলো । এতকিছুর পরেও প্রদীপ্ত রাগছে না বা পুবালীকেও বকাঝকা করছে না ।
এদিকে পুবালীকে চুপচাপ থাকতে দেখে প্রদীপ্ত চেয়ার ছেড়ে উঠলো । পুবালীর দিকে তাকিয়ে বলল, “এবার চলি ।“
মাস্টার মশাই, এটা কী বলছেন ? আপনাকে চা না খাওয়ালে আমার চাকরি থাকবে না, সেটা আপনি কী জানেন ?
এটা আমার জানা ছিল না । কিন্তু এবার বলুন, আপনাকে আপনার চাকরি থেকে কে বরখাস্ত করবেন ?
কেন, স্বয়ং পিতৃদেব । মাতৃদেবের সুপারিশে পিতৃদেব আমাকে চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেবেন । সুতরাং আপনি চুপচাপ বসুন ।
পুবালীর কথা শুনে প্রদীপ্ত চুপচাপ বসে পড়লো । পুবালী ভাবছে, বেচারা এখন তার কব্জায় । ভাবছে আর মুচকী মুচকী হাসছে ! প্রদীপ্তের গোবেচারা দৃশ্য দেখে পুবালী আর হেসে চেপে রাখতে পারলো না ।
“কী ব্যাপার ? এত হাসছেন কেন ?” পুবালীর হাসি দেখে প্রদীপ্তের প্রশ্ন ।
“হাসির মর্ম আপনি বুঝবেন না । আমি চা বানিয়ে আসছি ।“ পুবালী ভিতরে ঢুকে গেলো । সম্ভবত চা বানাতে রান্নাঘরে ঢুকলো ।
কিছুক্ষণ পরে চায়ের ট্রে নিয়ে ঢুকলো পুবালী । মুখে সেই মন ভোলানো হাসি । হেসে হেসে স্বাভাবিক ছন্দে বলল, “এবার চা ও স্নাক্স খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন ।“
উদ্ধারের কথা কেন বলছেন ?
ওরে বাবা ! মা যদি জানেন আমি আপনাকে চা বানিয়ে খাওয়াইনি । তবে আমাকে আস্ত রাখবেন কিনা সন্দেহ !
আপনি মাকে ভীষণ ভয় করেন বুঝি ?
তা একটু করি । প্রয়োজনে বাবাকে ম্যানেজ করা যায়, কিন্তু মাকে ম্যানেজ করা আমার সাধ্যের অতীত !
চায়ে চুমুক দিয়ে পুবালীর দিকে তাকালো প্রদীপ্ত । তারপর জিজ্ঞাসা করলো, “আপনার নিজের জন্য চা কোথায় ?”
আপনি তো আচ্ছা মাস্টার মশাই ! দিব্যি নিজের চা খেয়ে এবার খোঁজ নিচ্ছেন, আমি চা খাবো কিনা ? এটা ঠিক নয় । চা খাওয়ার আগে খোঁজ নিয়ে জানতে হতো আমি চা খাবো কিনা ?
ভুল হয়ে গেছে । তার জন্য মাফ চাইছি !
মুচকী হেসে পুবালী বলল, “ঠিক আছে মশাই । ধীরে খান । আমার চায়ের কাপ নিয়ে আসছি ।“
চা নিয়ে পুবালী প্রদীপ্তের পাশে বসতে যাবে এমন সময় কলিং বেলের আওয়াজ ! মনে মনে পুবালী ভাবলো, এই সুন্দর মুহূর্তের সময়ে কাদের আসার সময় হলো ? কিছুটা নিমরাজি হয়ে দরজা খুলে দেখে স্বয়ং ‘মা-বাবা’ এসে হাজির । মা ঘরে ঢুকেই প্রথমে প্রশ্ন, “মাস্টার মশাইকে কী চা বানিয়ে দিয়েছিস ? ”
তুমি পড়ার ঘরে ঢুকে দেখো, মাস্টার মশাই এখনও চা খাচ্ছেন !
ঠিক আছে । চা বানিয়ে দিয়ে ভাল করেছিস । তারপর বাবা-মা দুজনেই ঘরে ঢুকে গেলেন । সেই ফাঁকে ছুটে গিয়ে মাস্টার মশাইয়ের পাশ থেকে নিজের চায়ের কাপ সরিয়ে নিলো পুবালী । মা দেখতে পেলে অহেতুক নানান প্রশ্নে নাজেহাল করে দিতো । অন্যদিকে পুবালীকে দেখতে পেয়ে প্রদীপ্ত বলল, “এবার আমি আসছি । তবে একটা কথা ?”
ঘুরে দাঁড়িয়ে ঔৎসুক্য চিত্তে প্রদীপ্তের দিকে তাকিয়ে রইলো, গোবেচারা মাস্টার মশাই আবার কী বলতে চায় ?
একগাল হাসি দিয়ে প্রদীপ্ত বলল, “আপনার বানানো চা খেয়ে পরম তৃপ্তিতে খেলাম !”
মুখে শব্দ ছাড়া নিঃশব্দে বলল, “গোবেচারার মুখে বুলি ফুটেছে !” তারপর পুবালী মাস্টার মশাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “ঠিক আছে । এবার আসুন । আপনাকে দেরী করিয়ে দেওয়ার জন্য দুঃখিত ।“
আর একটা কথা ?
“আবার কী কথা ?” বিরক্ত মুখে পুবালী জিজ্ঞাসা করলো । এমনিতেই পুবালী ভয়ে ভয়ে রয়েছে, কোনো কারণে তাদের কথাবার্তার মাঝে মা এসে পড়লে বিপদের শেষ নেই । মা এসে পড়লে মায়ের কাছে অযথা বকুনি খাওয়ার সম্ভাবনা ষোলোআনা ! তার উপর গোবেচারা কী বলতে চায় ?
পুবালীর ঠিক কানের কাছে গিয়ে বলল, “আগামীকাল থেকে শুধু প্রদীপ্তদা ।“
কথা শুনে প্রচণ্ড হাসি পেয়েছিল পুবালীর । কিন্তু হাসি চেপে রেখে শুধুমাত্র পুবালী বলল, “আগামীকালকেরটা আগামীকাল দেখা যাবে । ।“
প্রদীপ্ত ঘর থেকে বেরিয়ে সাইকেল নিয়ে সোজা রাস্তায় । সাইকেলেই ছাত্রের বাড়িতে প্রদীপ্তের যাতায়াত । তারপর রাস্তায় এসে এক মুহুর্তের জন্য দাঁড়ালো । রাত্রির ঘনকালো অন্ধকার । হঠাৎ সাইকেলের সামনে পুবালী । পুবালীকে দেখে প্রদীপ্ত চমকে উঠলো ! আমতা আমতা করে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনি এখানে ?”
আমি এখানে তাতে কী ? বাড়ির সামনের রাস্তায় কী আমাকে আসতে নেই ? আপনি একটা আস্ত হাঁদারাম !
মাস্টার মশাই ছেড়ে আবার হাঁদারাম ! হচ্ছেটা কী ?
মনে হচ্ছে আপনি সত্যিই হাঁদারাম ! কোথায় অন্ধকারে লুকিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে এলাম । আমাকে তারিফ না করে এলোপাথারি জিজ্ঞাসা ? আমি কী চুরি বা ডাকাতি করেছি নাকি ? যার জন্য এত জেরা ?
জেরা করলাম কোথায় ? আপনি এত রাত্রিতে সোজা রাস্তায় উঠে আমার সাইকেলের সামনে ? তাই কৌতুহল ?
আপনি আপনার কৌতুহল নিয়ে থাকুন । আমি চললাম ।
পুবালীর ডান হাতটা টেনে ধরে প্রদীপ্ত বলল, “কোথায় চললেন ? কথা তো বলা হলো না ?”
মনে মনে পুবালী ভাবছে হাঁদারামের টনক নড়েছে । এবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে । তাড়াতাড়ি প্রদীপ্তকে বলল, “আপনি আমার হাত ধরলেন কেন ? আমাকে নিয়ে পালাতে চান নাকি ?”
পালাতে পারলে জীবনে বড় কিছু পেতাম ।
তারপর দুইজনে চুপচাপ ! প্রায় পনের মিনিট । তারপর পুবালীর মায়ের চিৎকার, পুবালী তুই কোথায় । শিগ্গির খাবার টেবিলে আয় । খাবার রেডি !
পুবালী ঘরে ঢুকে গেলো । প্রদীপ্ত সাইকেল ছুটিয়ে বাড়ির দিকে ।
****************************************************************
তারপর বেশ কিছুদিন কেটে গেলো । ভাই কলেজে ভর্তি হলো । পুবালী বি.এ. পাশ করলো । কিন্তু শত চেষ্টা করেও প্রদীপ্তের চাকরি জুটলো না । অন্যদিকে প্রদীপ্ত ও পুবালীর প্রেম-ভালবাসার খবর নিজের গ্রাম ছাড়িয়ে ভিন গাঁয়ে পৌঁছে গেলো । পুবালী যেমন প্রদীপ্তকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না, তেমনি প্রদীপ্ত পুবালীকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না ।
প্রদীপ্তের চাকরি নেই । প্রদীপ্ত ঘুণাক্ষরেও বাড়িতে জানায়নি সে পুবালীকে ভালবাসে । প্রদীপ্তের বাবা গোঁড়া ব্রাহ্মণ ! তিনি নিজের জাতির মেয়ে ছাড়া অন্য জাতির মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দেবেন না । এই ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্তের নড়চড় হবে না । তাই প্রদীপ্ত তার ভালবাসার কথা বাবা-মাকে জানায়নি । জানালে হিতে বিপরীত হতে পারে । অন্যদিকে পুবালীর বাড়ি থেকে বিয়ের তদ্বির তদারকি শুরু হয়ে গেছে । তাঁরা অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করে থাকতে গররাজি । কিন্তু চাকরি না পেয়ে পুবালী বিয়েতে নারাজ । বাড়িতে তার সাফ কথা আগে নিজের পায়ে দাঁড়ানো, তারপর বিয়ে !
তারপর দিন যায় রাত আসে । রাত যায় দিন আসে ।
একদিন হঠাৎ প্রদীপ্তদের বাড়িতে পুবালী হাজির । হাজির হওয়ার একটাই কারণ, কলকাতা পুলিশে সাব-ইন্সপেক্টর পদে লোক নিচ্ছে সেকথা জানাতে । সেদিন প্রদীপ্তদের বাড়িতে অনেক লোকজন । বাবা-মা ছাড়াও তার দিদি-জামাইবাবু ও তাদের ছেলে মেয়ে । তার মধ্যে পুবালী গিয়ে সরাসরি প্রদীপ্তদের বাড়ি হাজির । তখন সন্ধ্যা । সেই মুহুর্তে প্রদীপ্ত চপ-সিঙ্গারা আনতে বাইরে বেরিয়েছে । পুবালী প্রদীপ্তের বাবাকে চিনতে পারেনি । তাই সোজা প্রদীপ্তের বাবার কাছে জিজ্ঞাসা, “প্রদীপ্ত কী বাড়ি আছে ?”
“কেন, প্রদীপ্তকে কী দরকার ?” প্রদীপ্তের বাবার গাম্ভীর্য্যপূর্ণ উত্তর ।
তাকে ডেকে দিন । জরুরি কথা আছে । আমি সেটা তাকেই বলবো ।
“আমাকে বললে কী অপরাধ হয়ে যাবে ।“ গলার স্বর চড়িয়ে প্রদীপ্তের বাবা উত্তর দিলেন । প্রদীপ্তের বাবার উঁচু গলার স্বর শুনতে পেয়ে ভিতর থেকে প্রদীপ্তের দিদি বেরিয়ে এলেন । প্রদীপ্তের দিদি পুবালীকে চেনে না । তবে বুঝতে পারলো, মেয়েটা নিশ্চয় প্রদীপ্তের কাছের কেউ হবে । তার দিদি পুনরায় পুবালীকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার ভাইকে কেন দরকার ? সে বাজারে গেছে, এক্ষুণি ফিরবে । খুব দরকার থাকলে ঘরে এসে বসুন । ভাই কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরবে ।”
পুবালী দিদির পেছন পেছন ঘরে ঢুকলো । দিদিও তেমনি, খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে পুবালীর ঠিকুজি কুষ্ঠি জেনে নিলো ।“
ঘরের ভিতর পুবালীকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো প্রদীপ্ত !
(চলবে)