আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ- পরমাণু বোমার শক্তি দেখে গীতার শ্লোক মনে পড়ে গিয়েছিল বিখ্যাত বিজ্ঞানী অপেনহাইমারের। জুলিয়াস রবার্ট অপেনহাইমারের মতই পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মানুষ গীতা পাঠ করে থাকেন। তাদেরই একজন বাঁকুড়া জেলার ছাতনা ব্লকের বাসিন্দা ৯৬ বছরের বাসন্তী গুপ্ত। বয়সের ছাপ স্পষ্ট। স্বাভাবিকভাবেই চলা ফেরা করতে অসুবিধা হয়, তবুও তিনি যতটা পারেন নিজেই হাঁটা চলা করেন। ইচ্ছে হলে বই পড়েন। তবে সেটা যেকোনও বই নয়, ভগবত গীতা এবং কিছু বাছাই করা বই পড়তে ভালোবাসেন তিনি। কাঁপা কাঁপা গলায় বাসন্তী গুপ্ত জানালেন গীতা আসলে কি। জানালেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে চাক্ষুষ দেখার ঘটনা।
বই পড়তেই ভালবাসেন বাসন্তী গুপ্ত। তিনি সকলকে গীতা পড়ার উপদেশও দেন। পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ের মা বাসন্তী গুপ্ত স্বাধীনতার আগে এবং পরে, দুই দেখেছেন। ১৯-২০ বছর বয়স থেকেই শুরু করেছিলেন গীতা পাঠ। যা এখনও অভ্যাসবশত পালন করে চলেছেন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে বাসন্তী গুপ্তের গীতা পাঠ শুনতে একসময় জমা হতেন জনা কুড়ি মহিলা। ভর্তি হয়ে থাকত ঘরের উঠন। এই বিষয়ে বাসন্তী দেবী জানান, “গীতা পাঠ করতে ভাল লাগে, সবার করা উচিত। ভালো জিনিস সবার করা উচিত।”
যত বড় জীবন তত বেশি অভিজ্ঞতা। ভাল মন্দ মিশিয়ে এগিয়ে চলে মানুষের জীবন। ৯৬ বছর বয়সে এসে দাঁড়িয়েও বাসন্তী গুপ্ত নিজের পছন্দের কাজটা করে চলার চেষ্টা করেন। চোখের দৃষ্টি শক্তি কমেছে। ক্ষয় ধরেছে কোমরে। তবুও চর্চা যেন তাঁকে করতেই হবে। তবুও জীবনের ধাক্কায় আজ অনেকটাই মুষড়ে পড়েছেন তিনি। মেজ ছেলে তপন গুপ্ত জানান যে তাঁর মা নিজের সন্তানদের চলে ইহলোক ত্যাগ করতে দেখেছেন। এবং তার পর থেকেই যেন ধীরে ধীরে প্রাণোচ্ছল ভাব কমেছে বাসন্তী গুপ্তের মধ্যে।
প্রতিদিনের সাধারণ গল্প এবং জীবন অভিজ্ঞতার ভিড়ে বাঁকুড়ার ৯৬ বছরের এই বৃদ্ধার গল্প যথেষ্ট নজরকাড়া এবং অনুপ্রেনোদায়ক। ভারত পাকিস্তান ম্যাচে ভিরাট কোহলির সেঞ্চুরির মতই ছাতনাবাসী অপেক্ষা করছেন বাসন্তী গুপ্তের সেঞ্চুরির জন্য।