প্রেরণার আর এক নাম বাঁকুড়ার শিক্ষক আলোক মন্ডল।

0
220

আবদুল হাই,বাঁকুড়া: ক্যানসার মানেই মৃত্যু নয়। গোটা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লেও জেতা যায় জীবন যুদ্ধ। ১৯৯৯ সালে হঠাৎ ফুলে যায় ডান চোখ। স্থানীয় ডাক্তার জানিয়ে দেন জটিল রোগ বাঁকুড়ায় চিকিৎসা সম্ভব নয়। বাঁকুড়া গোয়েঙ্কা বিদ্যায়তনের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আলোক মন্ডল ডান চোখে ব্যথা এবং বুকভরা উৎকণ্ঠা নিয়ে পাড়ি দিলেন চেন্নাই। যথারীতি ধরা পড়ে ক্যানসার। চিকিৎসা এবং অপারেশন হয়। কিন্তু এবার ক্যান্সার পৌঁছে যায় বাম চোখে। তারপর কিডনির একটু উপরে এবং গলায়। শরীরের একাধিক জায়গায় কর্কট রোগ ছড়িয়ে পড়ে আলোক বাবুর। চিকিৎসা করিয়ে এক প্রকার সর্বশান্ত তিনি। ২১ লাখ টাকা সম্ভাব্য খরচ। বাধ্য হয়েই শরীরে টিউমার নিয়েই ফিরে আসেন বাঁকুড়া। কলকাতায় শুরু করেন ক্যান্সার চিকিৎসকের চিরুনি তল্লাশি। হতাশ হয়ে পাড়ি দেন মুম্বাই। প্রায় ছটা কেমোথেরাপি এবং ১১৪ টা রেডিয়েশন এবং প্রায় ৮-৯ বছরের শারীরিক এবং মানসিক লড়াই এর পর অনেকটাই সুস্থ হন তিনি। এই যুদ্ধে পাশে ছিলেন তাঁর স্ত্রী হীরামনি মন্ডল। আলোক বাবু বাঁকুড়া ফিরে এসে বাঁকুড়া লাইফ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক এক সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

বরাবরই কবিতা ভালোবাসেন আলোক বাবু। বাংলা সাহিত্যের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। চেন্নাইয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে দিনে প্রায় ২৪ ঘন্টাই শয্যাগত থাকতে হত তাঁকে। সেই সময় তিনি লিখেছিলেন বেশ কিছু কবিতা। মোট ১১টি কবিতার বই রয়েছে প্রাক্তন শিক্ষক আলোক মন্ডলের। সারাটা দিন প্রায় কবিতা, সংকলন এবং সংগঠনের কাজেই কেটে যায়। বাড়িতে রয়েছে সৌখিনতার ছোঁয়া। ইতিবাচক একটা ভাইব। প্রায় আলোক মন্ডল জানান, “এই যুদ্ধ জয় করতে দরকার আত্মবিশ্বাস এবং পারিবারিক মানসিক সহায়তা। আমাকে আমার স্ত্রী সবরকম ভাবে শক্তি জুগিয়েছিলেন।”

আলোক বাবু জানিয়েছেন, ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালীন সম্পূর্ণভাবে শয্যাগত ছিলেন তিনি। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মানুষের সাধারণ জীবন যাপন দেখতেন, তখন ভাবতেন তিনি কি কোনও দিন সাধারণ জীবনে প্রবেশ করতে পারবেন? দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সত্ত্বেও হার না মেনে যুদ্ধ করেছিলেন বলেই ১০-১২ বছর তিনি সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। আবেগঘন হলেন তাঁর স্ত্রী।

বাঁকুড়া তথা গোটা দেশে রয়েছেন বহু ক্যান্সার রোগী। ক্যান্সারের নামে ভয়ে কাঁপে সাধারণ মানুষ। তাদেরকে হয়ত এই ঘটনাটি অনুপ্রেরণা যোগাবে। কারণ, ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়! প্রমাণ করেছেন বাঁকুড়ার প্রাক্তন শিক্ষক আলোক মন্ডল।