স্মরণে  বাংলা সাহিত্যের প্রথম গীতি-কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী।।

0
48

বাংলা সাহিত্যের প্রথম গীতিকবি হিসেবে সুপরিচিত বিহারীলাল চক্রবর্তী ছিলেন বাংলা ভাষার সুপ্রসিদ্ধ একজন কবি।  তার সব কবিতাই বিশুদ্ধ গানের কথা।  মনোবীণার মনোবীণার নিভৃত ঝংকারে তার কবিতার সৃষ্টি।  বাঙালি কবি মানসের বহির্মুখী দৃষ্টিকে অন্তর্মুখী করতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।  খুব অল্প সময়ে তিনি বাংলা কবিতার প্রচলিত ধারা পরিবর্তন করে তীব্র অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে গীতিকবিতার ধারা প্রবর্তন করেন।  এ বিষয়ে তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি সাহিত্যের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।  তিনি তাঁর কবিতায় ভাবের প্রকাশের প্রাচুর্যকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন।  প্রকৃতি ও প্রেম, সঙ্গীতের উপস্থিতি, সরল ভাষা বিহারীলালের কবিতাকে দিয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। রবীন্দ্রনাথ তাকে বাংলা গীতি কাব্য-ধারার ‘ভোরের পাখি’ বলেছেন।

জন্ম ও শৈশব——

বিহারীলাল চক্রবর্তী ২১ মে, ১৮৩৫ তারিখে কলকাতার জোড়াবাগান অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দীননাথ চক্রবর্তী। মাত্র চার বছর বয়সে মাতা মারা যান।

শিক্ষাজীবন——

বিহারীলাল চক্রবর্তী শৈশবে নিজ গৃহে সংস্কৃত ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যে জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে তিন বছর অধ্যয়ন করেন।

বিবাহ——-

বিহারীলাল চক্রবর্তী উনিশ বছর বয়সে দশ বছরের অভয়া দেবীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

কর্মজীবন———

বিহারীলাল এর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ হল “স্বপ্নদর্শন”(১৮৫৮)। তার রচনাবলীর মধ্যে “স্বপ্নদর্শন” (১৮৫৮), “সঙ্গীত শতক” (১৮৬২), “বঙ্গসুন্দরী” (১৮৭০), “নিসর্গসন্দর্শন “(১৮৭০), “বন্ধুবিয়োগ “(১৮৭০), “প্রেম প্রবাহিনী” (১৮৭০), “সারদামঙ্গল “(১৮৭৯), ” দেবরানী” (১৮৮২), “বাউলবিংশতি” (১৮৮৭), “সাধের আসন” (১৮৮৯), ” ধূূমকেতু “(১৮৯৯) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তিনি “পূর্ণিমা” (১২৬৫ বঙ্গাব্দ), “সাহিত্য সংক্রান্তি”(১৮০৬),” অবোধবন্ধু “(১৮৬৩)ইত্যাদি তার সম্পাদিত পত্রিকা। সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও তিনি যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন।

“সারদামঙ্গল ” কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ কাব্য। আখ্যানকাব্য হলেও এর আখ্যানবস্তু সামান্যই। মূলত গীতিকবিতাধর্মী কাব্য এটি। সমালোচক শিশিরকুমার দাশের মতে, “মহাকাব্যের পরাক্রমধারার পাশে সারদামঙ্গল গীতিকাব্যের আবির্ভাব এবং শেষপর্যন্ত গীতিকাব্যের কাছে মহাকাব্যের পরাজয়ের ইতিহাসে সারদামঙ্গল ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ কাব্য। তার প্রথম স্বার্থক গীতিকাব্য “বঙ্গসুন্দরী “(১৮৭০)। এই কাব্যটি দশটি সর্গে বিভক্ত।কবি এই কাব্যে বঙ্গ নারীর বন্দনা করেছেন। কাব্যের দশটি সর্গ হল “উপহার”, “নারী বন্দনা”, “সুরবালা”, “চিরপরাধিনী” “করুনাসুন্দরী”, “বিষাদিনী”, “প্রিয়সখী”, “বিরহিনী”, “প্রিয়়়তমা” ও ” অভাগিনী”।
“পূর্ণিমা” (১২৬৫ বঙ্গাব্দ) নামে একটি পক্ষিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও অবোধ বধূ ও সাহিত্য সংক্রান্তি তার সম্পাদিত পত্রিকা।

মৃত্যু—-

বিহারীলাল চক্রবর্তী ২৪ মে, ১৮৯৪ সালে প্রয়াত হন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।