ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবার সুন্দরবনে পৌঁছালো নদীয়ার দিশারী পরিবার।

0
65

নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:-  সুন্দরবনের কুমারীমারি দ্বীপ! প্রায় চার ঘন্টা জলপথ দিয়ে আবারো পৌঁছে গিয়েছে এই দ্বীপে দিশারির প্রতিনিধিরা। গ্রামের গায়ে লেগেই শুরু হয়ে গিয়েছে সুন্দরবনের ঘন জঙ্গল। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আদিবাসী মানুষ এবং সাধারণ মানুষ বসবাস করেন। এর আগে ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে দিশারী তাদের যে করুণ পরিস্থিতি দেখতে পায় তখনই তারা সিদ্ধান্ত নেয় তাদের পাশে দাঁড়ানোর।

এরপর থেকেই গ্রামবাসীদের আবেদনে তারা বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে গোটা বছর তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করে এবং সেই মতোই আজও তারা পৌঁছে গিয়েছে সুন্দরবনের সেই আদিবাসী গ্রামে। দিশারী পরিবারের উদ্যোগে প্রতিবছর পালন করা হয়ে থাকে বিশ্ব আদিবাসী দিবস “শিকড়ের টানে”। উদ্দেশ্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিল্প-সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটানো। ইতিমধ্যেই কুমারীমারি দ্বীপে হাজারেরও বেশি গাছ লাগিয়েছে তারা। প্লাস্টিক মুক্ত দ্বীপ এই স্লোগান উঠিয়ে মানুষকে সজাগ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

এখানে বাস করেন প্রায় হাজারের বেশি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। সুন্দরবনের আদিবাসীদের নিজ রাজ্য ছেড়ে এ রাজ্যে নিয়ে আসার এক ঐতিহাসিক কাহিনী আছে যার সূত্রপাত হয়েছিল তৎকালীন ইংরেজ সরকারের হাত ধরে। জানা যায় সুন্দরবনের আদিবাসীদের আনা হয়েছিল ভূমি সংস্কারের বিভিন্ন কাজে। ভাবতে অবাক লাগে যারাই ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে বাঘের পেটে গিয়ে গভীর জঙ্গলকে জনবসতির জমিতে পরিণত করে তারাই আজ তাদের ভূমি থেকে বঞ্চিত। এই সমস্ত মানুষদের মূলত চাষাবাদ আর মাছ ধরাই তাদের প্রধান জীবিকা।

তবে বারংবার নোনা জল জমিতে ঢুকে এবং অন্যদিকে নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে পেটের দায় দ্বীপ ছেড়ে ভিন দেশে গিয়ে পড়ে আছেন কাজের তাগিদে। দ্বীপের শিশুর া কেউ মা-বাবার সঙ্গে অন্য দেশে পাড়ি দিয়েছে কেউ আবার আত্মীয়র কাছে পড়ে রয়েছে যার ফলে তাদের পড়াশোনা স্বাস্থ্য সংস্কৃতি সবটাই বেশ সংকটে থাকে। আর সেই কারণেই কলতান এর একটি শাখা দ্বীপে স্থাপিত করা হয়। যেখানে আদিবাসী শিশুদের শিল্প শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের বিকাশের দিকে লক্ষ্য রাখা যায়। শিশুরা বাদ্যযন্ত্র যেমন ধামসা মাদল সঙ্গে ঝুমুর গানের শিক্ষা নেয় এই বিদ্যালয় থেকেই। যদিও বর্তমানে সেখানে আদিবাসী শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ শিশুদের ভিড় জমতে শুরু করেছে। দিশারী সংস্থার প্রচেষ্টায় এখানকার আদিবাসী শিল্পীদের আজ ভারত সরকারের সেন্ট্রাল বিওডো অফ কমিউনিকেশনের অন্তর্গত সং এন্ড ড্রামা ডিভিশনে শিল্পী হিসেবে তাদেরকে নথিভুক্ত করানোর প্রচেষ্টা সফল হয়েছে, যা সুন্দরবন এ এই প্রথমবার।

দিশারী পরিবারের কর্ণধার মানসী দাস জানান, এই কুমারী মারি দ্বীপের সঙ্গে এক মজবুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার ফলে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে কঠিন কাজ সম্পূর্ণ পড়ে যাওয়া হচ্ছে বারংবার। আয়লা এবং ইয়াসের মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগকে জয় করে বর্তমানে রেনাল দুর্যোগকেও জয় করেছি আমরা। ছাদবিহীন ক্ষতিগ্রস্ত ঘর বাড়িগুলোতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন শুকনো খাবার মশারি মহিলাদের শাড়ি শিশুদের জন্য ঔষধপত্র ও পড়াশোনা সামগ্রী পাশাপাশি বেশ কিছু ত্রিপল তুলে দিয়েছি আমরা। এবং ভবিষ্যতেও আমরা তাদের পাশে থাকবো।”