সিকল সেল ডিজিজ হল থ্যালাসেমিয়া ও হিমোফিলিয়ার মতোই জিন বাহিত। এই রোগটি উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং ওডিশায় বেশ সুপরিচিত। জনসংখ্যার প্রায় ০.৪% এসসিএতে ভোগেন এবং আমাদের দেশে ১০% বাহকই নতুন রোগীর জন্ম দেয়।
সরকার ২০৪৭ সালের মধ্যে সিকেল সেল অ্যানিমিয়া দূর করার জন্য মিশন মোডে কাজ করবে। কিন্তু কী এই সিকেল সেল অ্যানিমিয়া, কেন হয়, কী করেই বা চিনবেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
সিকেল সেল অ্যানিমিয়া কী?
সিকেল সেল অ্যানিমিয়া ( Sickle Cell Anaemia), এটি অ্যানিমিয়া গোষ্ঠীরই একটি রোগ। যা আমাদের শরীরে হিমগ্লোবিনকে আক্রান্ত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই অসুখটি বংশগত অর্থাৎ উত্তরাধিকারসূত্রে রক্তের ব্যাধি বলা যেতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত হলে লোহিত রক্তকণিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে না। এর ফলে শরীরে অক্সিজেন বহন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের শরীরে লাল রক্ত কোষগুলি নমনীয় এবং ডিস্ক-আকারযুক্ত। সাধারণত, তারা সহজেই রক্তনালীগুলির মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। তবে সিকেল সেল অ্যানিমিয়ায় লাল রক্ত কোষগুলি কাস্তের আকার ধারণ করে। কোনও ক্ষেত্রে ক্রিসেন্ট চাঁদের (Sickle Or A Crescent Moon) আকারে দেখা যায়। চিকিৎসকদের মতে, এই রোগে আক্রান্ত হলে কোষগুলি আঠালো এবং অনমনীয় হয়ে যায়। সেগুলি ছোট রক্তনালীগুলির মধ্য দিয়ে যেতে পারে না। তাই দেহের বিভিন্ন অংশে রক্ত এবং অক্সিজেন প্রবাহকে ধীর এবং ব্লক করে দেয় ।
সিকেল সেল অ্যানিমিয়ার প্রকারভেদ—
হিমোগ্লোবিন এসএস: এটি সবচেয়ে সাধারণ। এটি হলে রোগী মায়ের পাশাপাশি বাবার কাছ থেকে হিমোগ্লোবিন এস জিনের অনুলিপি অর্জন করে। এটি অত্যন্ত গুরুতর ধরণের এসসিডি।
হিমোগ্লোবিন এসসি: এটি এসসিডির দ্বিতীয় রূপ। পিতা-মাতার একজনের থেকে এর উত্তরাধিকারী হয় রোগী।
হিমোগ্লোবিন এসবি + (বিটা) থ্যালাসেমিয়া: এটি বিটা-গ্লোবিন জিনের উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। বিটা প্রোটিনের কম উৎপাদন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোহিত রক্ত কণিকার আকার হ্রাস পায়।
হিমোগ্লোবিন এসবি 0 (বিটা-শূন্য) থ্যালাসেমিয়া: এটি বিটা-গ্লোবিন জিনের সঙ্গে জড়িত।
Finger Pain: আঙুলে চরম ব্যথা হয়, কিছুতেই কমছে না? এই ঘরোয়া কৌশল ব্যবহার করে দেখুন তো
সিকেল সেল অ্যানিমিয়ার লক্ষণ—
লোহিত রক্ত কণিকা কমে যাবে-জন্মের ৫ মাস বয়সেই সিকেল সেল অ্যানিমিয়ার প্রথম লক্ষণগুলি টের পাওয়া যায়। যখন সিকেলের কোষগুলি সহজেই ভেঙে যাবে তখন শরীরে লোহিত রক্তকণিকা কমে যাবে।
ক্লান্তি-এটি রক্তাল্পতা বা লোহিত রক্ত কণিকার সংকট তৈরি করে দেয়। এ কারণে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না যার ফলে ক্লান্তি তৈরি হয়।
ব্যাথা-যখন সিকেল আকৃতির কোষগুলি রক্তনালীগুলির মাধ্যমে রক্ত প্রবাহকে বাধা দেবে তখন episodic ব্যথা অনুভব করা যায়। এই ব্যথা কখনও কখনও কয়েক সপ্তাহের জন্য স্থায়ী হতে পারে।
ফোলা-সিকেল-আকৃতির কোষগুলি আপনার দেহের বিভিন্ন অংশে রক্ত প্রবাহকে বাধা দেয় তাই ফোলাভাব দেখা দেবে শরীরে।
দৃষ্টির ঘাটতি- সিকেল সেলের কোষগুলি চোখে সরবরাহকারী রক্তনালীগুলিতে আটকে যেতে পারে। তাই ভিজ্যুয়াল চিত্রগুলি ঠিক মতো তৈরি হয় না।, যার ফলে কম দেখতে শুরু করবেন।
রোগ নির্ণয়—-
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। ডাক্তারবাবুরা অবশ্য এই রোগটি নির্ণয় নিশ্চিত করার জন্য এইচবি ইলেক্ট্রোফোরসিসটি (Hb electrophoresis) করতেও বলতে পারেন।
কেমন করে এই রোগ ঠেকিয়ে রাখতে হয়?
বাচ্চাদের ৫ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত পেনিসিলিন দিতে হবে।
এটি এসসিডির (SCD) কারণে ক্ষতিগ্রস্থ অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপনের সঙ্গে জড়িত। কোনও দাতা প্রতিস্থাপনের জন্য স্বাস্থ্যকর অস্থি মজ্জা দান করবেন।
শাকসবজি, ফলমূল সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর ডায়েট এই রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
উচ্চ তাপমাত্রা এড়িয়ে চলতে বলেন চিকিৎসকরা, যা এপিসোডিক ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।
সব শেষে বলা যায় উপসর্গ দেখা মাত্র চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
ডিসক্লেইমার: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, আরও বিস্তারিত জানতে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
।।তথ্য :: সংগৃহীত ইন্টারনেট।।