স্মরণে ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী – ছায়া দেবী।।।

0
28

ভূমিকা—
বাংলা ছায়া ছবির জগতে ছায়া দেবী এক কিংবদন্তি অভিনেত্রীর নাম।ছায়া দেবী একজন প্রতিভাময়ী ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। স্বর্ণ যুগের এই অভিনেত্রী  বহু সিনেমায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করে তাঁর অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন——-

ছায়া দেবীর  পিসিমা ছিলেন অভিনেতা অশোককুমার ও কিশোর কুমারের দিদিমা।ছায়া দেবীর জন্ম ৩ জুন ১৯১৯ সালে এই পিসিমার ( সতীশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী) ভাগলপুরের রাজবাড়ীতে। পিতা হারাধন গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রাথমিক শিক্ষা ও অভিনয় জীবনে প্রবেশ—-
তার প্রাথমিক শিক্ষা ভাগলপুরের মোক্ষদা গার্লস স্কুলে। ভাগলপুর থেকে বাবার সঙ্গে দিল্লি গিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থ গার্লস স্কুলে ভর্তি হন এবং সঙ্গীত চর্চা করতে থাকেন। এগারো বৎসর বয়সে রাঁচির অধ্যাপক ভূদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ হয়। কিন্তু এ বিবাহ কার্যকর হয় না। দশম শ্রেণীর ছাত্রী তিনি বাবার সঙ্গে কলকাতায় এসে কৃষ্ণচন্দ্র দে ও পণ্ডিত দামোদর মিশ্রর কাছে সংগীত শিখতে থাকেন। সেই সঙ্গে বেলা অর্ণবের কাছে নাচের তালিম নিতে থাকেন। নাটক-পাগল দুই পিসতুতো দাদা শ্রীশচন্দ্র ও শৈলেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি অভিনয় জগতে আসেন।
অভিনয় জীবন——-

১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দেই তিনি দেবকী বসুর ‘সোনার সংসার’ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন।  তবে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কনক নামের কিশোরী ছায়া দেবী নাম নিয়ে ‘পথের শেষে’ ছবিতে অন্যতম নায়িকার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি রাঙা বৌ, ছিন্নহার, প্রভাসমিলন, হাল বাঙলা, বিদ্যাপতি (হিন্দি ও বাংলা), রিক্তা,  জীবন মরণ প্রভৃতি। পথের শেষে – এই ছবিটি হিট হওয়ায় তিনি সোনার মেডেল পেয়েছিলেন।
গায়িকা হিসেবে—-
অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি ছবিতে তিনি গানও গেয়েছেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অভয়ের বিয়ে’ ছবিতে তিনি ৪/৫ খানা গান গেয়েছেন।
মুম্বই গমন—
এর পরে ছায়া দেবী প্রফুল্ল রায়ের আমন্ত্রণে তিনি মুম্বই গিয়ে সেখানে’মেরাগাঁও ‘ ছবিতে গানে ও অভিনয়ে বিশেষ পারদর্শিতা দেখান। ছায়া দেবী প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা, হিন্দী, তামিল ও তেলুগু ভাষায় শতাধিক ছায়াছবিতে প্রধানত পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ‘বিদ্যাপতি’ ছায়াছবির জন্য উনি প্রশংসিত হন ও ক্রমে প্রচুর উল্ল্যেখযোগ্য ছবিতে অভিনয় করেন, যেমন বাংলায় পরিচালক তপন সিংহর নির্জন সৈকতে, হাটে বাজারে  এবং আপনজন, সপ্তপদী, মানিক, উত্তর ফাল্গুনী, বা হিন্দীতে অমিতাভ বচ্চনের সাথে আলাপ । বাংলা,হিন্দি ও তামিল তিন ভাষাতেই ‘রত্নদীপ’ ছবিতে তার অভিনয় স্মরণীয়।  ছায়াছবিতে কাজ করার পাশাপাশি বেতার কেন্দ্রে নিয়মিত খেয়াল, ঠুংরি পরিবেশন করেছেন।

তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি সমূহ—
প্রায় দু-শোর বেশি ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। সাত পাকে বাঁধা, মুখার্জি পরিবার, অন্তরাল, আরোহী, কাঁচ কাটা হীরে, সূর্যতপা,  থানা থেকে আসছি, মণিহার, গল্প হলেও সত্যি, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, হাটেবাজারে, আপনজন’ (রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত), বাঘিনী, কমললতা,  চৌরঙ্গী, কুঁয়াশা, রাতভোর, সাহেব বিবি গোলাম, ত্রিযামা, মায়াবাজার, গলি থেকে রাজপথ, মাণিক, অটলজলের আহ্বান, দেয়ানেয়া, সপ্তপদী, নির্জন সৈকতে, পিতাপুত্র, হারমোনিয়াম, আরোগ্য নিকেতন, রাজা রামমোহন, বাবা তারকনাথ, আলাপ, ধনরাজ তামাং, অরুণ বরণ কিরণমালা, সূর্যসাক্ষী, রঙবেরঙ, প্রায়শ্চিত্ত, রাশিফল, লালগোলাপ, স্বর্ণমণির ঠিকানা, প্রতিকার, বোবা সানাই, প্রতিদান, কলঙ্কিত নায়ক, রাজকুমারী, মুক্তিস্নান, সমান্তরাল, কুহেলী, হার মানা হার, শেষ পর্ব,  পদিপিসির বর্মি বাক্স, দেবীচৌধুরাণী।
মৃত্যু—–
কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী বহু সিনেমায় রেখে গিয়েছেন তাঁর অভিনয় দক্ষতার সাক্ষর।  ২৫ এপ্রিল ২০০১ সালে তিনি প্রয়াত হন। কিন্তু আজও তিনি অমর হয়ে রয়েছেন মানষের হৃদয়ে।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।।