মূল্যবান মনুষ্য জীবনে শিবমহিমা ও শ্রাবণ মাস : স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)।

0
95

আমাদের মূল্যবান মনুষ্য জীবনে গুরুদেব ভগবান প্রাণদেবতা নিজ নিজ পিতামাতার মত প্রত্যেকের হৃদয় সিংহাসনে বিরাজ করেন। আমাদের প্রাণদেবতা যুগাচার্য্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ সাক্ষাৎ শিবস্বরূপ, চলমান শিব। গৃহদেবতা নীলরুদ্রের আশির্বাদে শিব-অবতার রূপে শিবশিশুর, দেবশিশুর ধরাধামে আবির্ভাব। পরবর্তিকালে সাক্ষাৎ দেবাদিদেব মহাদেব রূপে আত্মপ্রকাশ হয়। আনুষ্ঠানিক সন্ন্যাস গ্রহণ পূর্বক তিনি স্বামী প্রণবানন্দ নামে পরিচিত হন। প্রনব (ওমঃ) হল পরমেশ্বরের প্রতীক। সৃষ্টির প্রথম শব্দ ওঁ। ওঁ এ আছে তিন অক্ষর- অ, উ, ম। তিন অক্ষরে আছে তিন দেবতাঃ- ব্রহ্মা, বিষ্ণু,মহেশ্বর (শিব)। শিব শব্দের অর্থ মঙ্গল। তাই প্রতিটি মঙ্গলময় জিনিস বা ব্যক্তিত্ব হলো শিবস্বরূপ। আর মঙ্গলকে আশ্রয় না করে কয়জন বাঁচতে পারে? তাই শিব সবারই আশ্রয়স্থল। তেমনি শিব ব্যক্তিত্বের ব্যক্তি মঙ্গলময় ও আশ্রয়দাতার প্রতীক। আমাদের প্রাণদেবতা গুরুমহারাজ সাক্ষাৎ ভগবান যুগাচার্য্য স্বামী প্রণবানন্দজী ও সবার আশ্রয়স্থল মঙ্গলময় ও আশ্রয় দাতার প্রতীক।

আমাদের হিন্দুদের অন্যতম প্রধান মন্ত্র – ওঁ নমঃ শিবায়৷
বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টির আগে মহাশূণ্যে যে শব্দতরঙ্গ ছিল তাই “ওম ” ৷ ন, ম, শি, বা, য় ,” এই মন্ত্রে আমরা মহাদেবের জপ করি ৷ ন মানে মাটি , ম অর্থে জল , শি হলেন প্রতিভূ , বা মানে বায়ু বা বাতাস এবং য় হলেন সবকিছুর প্রতিনিধিস্বরূপ৷ তাহলে শিব লিঙ্গ শব্দের সম্মিলিত অর্থ – যা মঙ্গলময়ের প্রতীক, কল্যাণের প্রতীক প্রভৃতি। অতএব শিব লিঙ্গ পূজা, মঙ্গলময়ের পূজা, সুন্দরের পূজা, শুভ বা কল্যাণের পূজা। এই শ্রাবণ মাস সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সারা বছর শিবপুজো করা হলেও এই শ্রাবণ মাসে দেবাদিদেব মহাদেবকে নিষ্ঠাভরে ও নিয়ম মেনে পুজো করা হয়, বিশেষভাবে সোমবার। কারণ, এটি দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষার আগমনের সাথে যুক্ত। অনেকের কাছে শ্রাবণ মাস উপবাসের মাস। ভোলে বাবার উপবাস তো রাখেন, শ্রাবণ মাসেকেই কেন ‘শিবের মাস’ বলা হয়? সারাবছর শিবপুজো করা হলেও এই মাসে মহাদেবকে নিষ্ঠাভরে ও নিয়ম মেনে পুজো করা হয়। শিবের উপাসনা করার শ্রেষ্ঠ সময় হল প্রদোষ কাল। প্রত্যেক পক্ষের দ্বাদশীর শেষ ও ত্রয়োদশীর সূচনার অংশটিকে “প্রদোষ” বলা হয়। এইসময় শ্রাবণ মাসে শিবের ভক্তরা মহাদেবকে পুজো করলে মনের সব ইচ্ছে পূরণ হয়। ‘শ্রাবণ’ শব্দের উৎস হয়েছে ‘শ্রবণ’ থেকে। তাই এই সময়কাল শিবকথা, শুভকথা শোনার মাস।

শিবমন্দিরে তো বটেই, শ্রাবণ মাসে বাড়িতে বাড়িতেও শিবের উপাসনা করা হয়। সাধারণত গঙ্গাজল, দুধ দিয়ে রুদ্রাভিষেক করে মহাদেবের পায়ে ফুল, বেলপাতা অর্পণ করে শিবের পুজো করা হয়। আর এটাই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ উপায় বলে মনে করা হয়। শাস্ত্র অনুসারে, জলভিষেক করলেও মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। শ্রাবণ মাসে শিবকে সন্তুষ্ট করতে শিবের ভক্তরা কোনও ত্রুটি রাখেন না। পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, শ্রাবণ মাসেই সমুদ্র মন্থনের ঘটনা ঘটেছিল। সমুদ্র উত্থিত হলাহল বিষ থেকে গোটা ধরিত্রীকে রক্ষা করার জন্য স্বয়ং মহাদেব নিজ কণ্ঠে হলাহল বিষ ধারণ করেছিলেন। বিষের প্রভাবে মহাদেবের কন্ঠ নীল হয়ে ওঠে। এই কারণেই মহাদেবের অপর নাম নীলকণ্ঠ। বিষের তীব্রতা হ্রাস করার জন্য স্বর্গের দেবতারা শিবের মাথায় গঙ্গাজল ঢালতে থাকেন। সেই কারণেই শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় গঙ্গাজল প্রদান করা হয়। আর তাতেই আদিদেব মহাদেবের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন ভক্তরা। আরেকটি ব্যাখ্যাতে উল্লেখ রয়েছে, সতীর দেহত্যাগের পর দেবী পার্বতী রূপে ফের একবার জন্ম নেন। শিবকে আবার স্বামীরূপে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে সাধনা করে শিবকে সন্তুষ্ট করলে পার্বতীকে বিবাহ করতে রাজি হন মহাদেব। আর সেই শুভমুহূর্ত ঘটে শ্রাবণ মাসেই। তারপর শিবরাত্রির দিনেই শিব-পার্বতীর পুনর্মিলন ঘটেছিল। এই কারণেই শ্রাবণ মাসকে শিবের মাস বলা হয়। সনাতন ধর্ম অনুসারে শিব হলেন আদি দেবতা। সেই কারণে তাঁকে দেবাদিদেব বলা হয়।

ভগবান শিবের সাতটি রহস্যঃ-১) সাপঃ সর্প হচ্ছে সদা জাগ্রত থাকার প্রতীক। ২) ভষ্মঃ এটা জীবনের অনিত্যতার প্রতীক। ৩) চন্দ্রঃ মনের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার প্রতীক। ৪) ডমরুঃ উন্মুক্ত চিন্তা-চেতনার প্রতীক। ৫) ত্রিশুলঃ শিব প্রকৃতির তিনগুন নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, এটি তারই প্রতীক। ৬) নীলাভ শরীরঃ আকাশ অন্তহীন, অন্তহীনতা তথা অসীমতার প্রতীক। ৭) গঙ্গাঃ গঙ্গা নিষ্কলুষ জ্ঞানের প্রতীক। “ওঁ নমঃ শিবায়” উচ্চারণ করে জপ করলে সবরকম অশুভ প্রভাব দূরে থাকে৷ পাঁচ ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণে থাকে। শিব জন্মরহিত, শাশ্বত, সব কারণের কারণ৷ তিনি স্বরূপে বিদ্যমান৷ সব জ্যোতির জ্যোতি বা আলো ৷ তিনি তুরীয়, অন্ধকারের অতীত৷ আদি ও অন্তহীন৷ সব শেষে শিবলিঙ্গ বা শিব মূর্তিকে প্রাণদেবতা সাক্ষাৎ চলমান শিব গুরুমহারাজকে প্রণাম করে বলুন:-
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং গতিস্তং পরমেশ্বরম্।।
ওঁ নমঃ শিবায়..ওঁ নমঃ শিবায়..ওঁ নমঃ শিবায়..
জয় জয় প্রণবেশ্বর মহাদেব…
জয় জয় দেবাদিদেব মহাদেব….
জয় জয় শিব শম্ভু…
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!
স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক) l