ছেলের জীবন বাঁচাতে রাতের অন্ধকারে একাকি মা’য়ের লড়ায়ে হতবাক বালুরঘাটের কালিকাপুর! জঙ্গলে টেনে নিয়ে যাওয়া শিশুপুত্রকে বাচাতে মা’য়ের কপালের মাংস খুবলে নিল হিংস্র শিয়াল।

0
47

দক্ষিন দিনাজপুর-বালুরঘাট, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ১৭ সেপ্টেম্বর—— “মা” এমন একটি শব্দ যেখানে পৃথিবীর সমস্ত স্বার্থই যেন পরাজিত হয়। বালুরঘাটের কালিকাপুরের বাসিন্দারা দেখল এমনই এক সাহসী যোদ্ধা ” মা” কে। ঘটনায় তিনি নিজে রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও ছয় বছরের পুত্র সন্তানের তেমন কোন ক্ষতি হতে দেননি। তবে এই ঘটনা নিয়ে বছর ত্রিশের ওই আদিবাসী মহিলার এমন সাহস যথেষ্টই উৎসাহ জুগিয়েছে কালিকাপুরের অনান্য বাসিন্দাদের মধ্যে।

জানা গেছে, বালুরঘাট ব্লকের কালিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা তথা গুরুতর আহত ওই মহিলার নাম তারিনা সোরেন। স্বামীর সঙ্গে সাংসারিক অশান্তি থাকাই দীর্ঘদিন ধরে মায়ের বাড়ি কালিকাপুর গ্রামেই থাকতেন ওই আদিবাসী মহিলা। আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারকে সাহায্য করতে তিনি নিজেও কৃষিকাজের কাজ করেন। রোজদিনের মতো রবিবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বাড়িতেই রান্না করছিলেন তিনি। সেই সময় উঠোনের মধ্যে তার ৬ বছরের শিশুপুত্র খেলাধুলো করছিল। হঠাৎই তার ওপরে হামলা চালায় পাশ্ববর্তী জঙ্গল থেকে ছুটে আসা একটি হিংস্র শিয়াল। যা মুহুর্তেই নজরে আসে মা তারিনা সোরেনের। এরপরেই ছেলেকে বাঁচাতে শেয়ালের উপর ঝাপিয়ে পড়েন তিনি । যদিও ততক্ষণে ছেলের হাতে কিছুটা কামড় বসিয়ে ফেলে ওই হিংস্র শেয়ালটি। শুধু তাই নয়, জঙ্গলের উদ্দেশ্যে টেনে নিয়ে যাওয়া ছোট্ট শিশুপুত্রকে বাচাতে গিয়ে মহিলার কপালের কিছুটা মাংসও খুবলে নেয় শিয়ালটি। এরপরেই রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলেকে বাচাতে হাতের কাছে থাকা একটি পাথরের টুকরো নিয়ে শিয়ালটির উপর ঝাপিয়ে পড়তেই এলাকা ছাড়ে হিংস্র শিয়ালটি। যদিও ওই ঘটনার সময় মহিলার বাড়িতে তেমন কেউ ছিল না বলেই জানা গেছে। এদিকে ওই ঘটনার পরেই যন্ত্রণায় আর্তনাদ করতে থাকা আহত ওই মহিলাকে দেখতে পেয়ে বাড়ির পাশ থেকে দৌড়ে ছুটে আসেন তার ভাই নুয়েল সোরেন। বোনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে কিছুটা হতবাক হয়ে পড়েন তিনি। এরপর সমস্ত ঘটনা শুনে তড়িঘড়ি আহত দুজনকেই নিয়ে যাওয়া হয় বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে। যেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তারা। এদিকে এই ঘটনা জানাজানি হতেই এদিন সকাল থেকে তুমুল হইচই পরিস্থিতি তৈরি হয় কালিকাপুর গ্রামে। হিংস্র শিয়ালের হাত থেকে নিজের সন্তানকে বাচাতে রাতের অন্ধকারে একাকি ওই আদিবাসী মহিলার এমন সাহস কিছুটা হলেও উৎসাহ জুগিয়েছে এলাকার অনান্য মহিলাদেরও।

আহত তারিনা সোরেন জানান, ‘ছেলের কাছে শিয়ালকে আসতে দেখেই ওকে বাঁচাতে দৌড় লাগাই। কিন্তু তার আগেই ছেলের হাতে কামড় দেয়। শিয়ালকে সরিয়ে দিতেই আমার ওপর হামলে পড়ে। কপালের বাঁদিকে চোখের উপরের মাংস কামড়ে নিয়েছে। ভাই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। এখানে ইনজেকশন ও ওষুধ দিয়েছে। এখন অনেকটা সুস্থ।’