ফরায়েজি আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনকারী মুহাম্মদ মুহসীনউদ্দীন দুদু মিয়া।

0
15

মুহাম্মদ মুহসীনউদ্দীন দুদু মিয়া (১৮১৯ – ২৪ সেপ্টেম্বর ১৮৬২) ছিলেন ফরায়েজি আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনকারী। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পথ নির্দেশনা দানকারী ঐতিহাসিক ফরায়েজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজী শরীয়তুল্লাহ তার পিতা। বৃহত্তর ভারতীয় উপমহাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের নিপীড়িত জনগণের আত্মশক্তির বিকাশ এবং ঔপনিবেশিক শক্তি ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামের ইতিহাসে দুদু মিয়া ছিলেন অন্যতম।
প্রারম্ভিক জীবন—
মুহসীনউদ্দীন দুদু মিয়া ১৮১৯ সালে বর্তমান বাংলাদেশের মাদারীপুর মহকুমার বাহাদুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাজী শরীয়তুল্লাহ। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পথ নির্দেশনা দানকারী ঐতিহাসিক ফরায়েজী আন্দোলনের অন্যতম নেতা। দুদু মিয়া প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তার সুযোগ্য পিতার কাছ থেকে। মাত্র ১২ বছর বয়সে জ্ঞানার্জনের জন্য তাকে মক্কায় পাঠানো হয়। ঐতিহাসিক সূত্র মতে, কলকাতা হয়ে মক্কা গমনের কালে বারাসাতে নীল বিদ্রোহের নেতা তিতুমীরের দেখা হয়। তিনি মক্কায় পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেন। ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা থেকে বাড়ি ফিরে আসেন।
ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব—-
১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে পিতা হাজী শরীয়তুল্লাহর মৃত্যুর পর ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন দুদু মিয়া। তার অধীনে বাংলা ও আসামের নিপীড়িত জনগণ শক্তিশালী ভ্রাতৃত্ববোধে একতাবদ্ধ হয় ব্রিটিশদের বশংবদ অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য। ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে কোনো রকম বিদ্রোহ ঘোষণা ছাড়াই দুদু মিয়া বাংলা ও আসামের নিপীড়িত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সম্পূর্ণ বিকল্প এক আর্থসামাজিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। তখনকার জমিদাররা তাদের প্রভু ইংরেজদের তুষ্ট করে প্রজাদের ওপর নানা নিপীড়নমূলক কর আরোপ করে। দুদু মিয়ার নেতৃত্বে জনগণ এসব নিপীড়নমূলক কর দিতে অস্বীকার করে। দুদু মিয়া ফরায়েজি আন্দোলনের বিরোধীতাকারী ইংরেজ নীল চাষী এবং জমিদারদের মোকাবিলা করার জন্য পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। ফরায়েজি সমাজকে সংগঠনের লক্ষ্যে তিনি ফরায়েজি চাষীর স্বার্থরক্ষা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের গুরুত্বটি উপলব্ধি করেন। এটাকে সফল করার জন্য তিনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রথমে একটি লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন যার সাহায্যে বিদেশী সৈনিক ও জমিদার এবং নীলকরদের ভাড়াটে লোকদের সম্পূর্ণ ভাবে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়। এর ফলে প্রায় দুই দশক অর্থাৎ ১৮৩৮ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত ফরায়েজি আন্দোলন অধ্যুষিত এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করে।
মৃত্যু—
১৮৫৭ সালে যখন গোটা ব্রিটিশ ভারতবর্ষে মহাবিদ্রোহের মত পরিস্থিতি চলছিলো ঠিক তখনি জমিদার ও নীলকররা দুদু মিয়া এবং তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে অভিযোগ তোলে। তখন সরকার নাজুক অবস্থায় থাকায় দুদু মিয়া গ্রেফতার হন। পরে ১৮৫৯ সালে মুক্তি পেলেও অসৎ জমিদারদের উস্কানিতে আবারও বন্দী হন তিনি। কোন মামলা না থাকা সত্ত্বেও ১৮৬০ সাল পর্যন্ত তাকে কলকাতার অদূরে আলীপুরে বন্দী রাখা হয়। যখন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন তখন তার স্বাস্থ্য ভগ্নপ্রায়। মুক্তির অল্পকাল পরেই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ১৮৬২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। পুরান ঢাকার ১৩৭ নং বংশাল রোডে তাকে কবর দেয়া হয়।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।