আজ বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং এর গুরুত্ব।।

0
11

প্রতি বছর ১২ই নভেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস—১২ নভেম্বর— একটি বার্ষিক অনুস্মারক যে নিউমোনিয়া যে কোনো জায়গায় এবং যে কোনো সময় আঘাত করতে পারে এবং এটি একটি গুরুতর, সম্ভাব্য জীবন-হুমকি ফুসফুসের সংক্রমণ। নিউমোনিয়া প্রাথমিকভাবে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট হয় যা একজন থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয়।
নিউমোনিয়া ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগের নাম।ইহা হল ফুসফুসের প্যারেনকাইমার প্রদাহ বিশেষ। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমণের কারণে নিউমোনিয়া হয়। নিউমোনিয়া মৃদু বা হালকা থেকে জীবন হানিকরও হতে পারে। নিউমোনিয়া থেকে ফ্লু হবারও সম্ভাবনা থাকে। নিউমোনিয়া সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের, যারা দীর্ঘদিন রোগে ভুগছেন অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বা কম তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে তরুণ, অল্প বয়স্ক, স্বাস্থ্যবান লোকদেরও নিউমোনিয়া হতে পারে। ফুসফুসে স্ট্রেপটোকক্কাস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া কিংবা শ্বাসযন্ত্রের সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) সংক্রমণ ঘটালে ফুসফুস ফুলে ওঠে, ভরে ওঠে পুঁজে বা তরল পদার্থে, যা অক্সিজেন গ্রহণ করে নিঃশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তখন ফুসফুসে প্রদাহ হয়। ।
প্রতি বছরের মতো এবারও ১২ নভেম্বর বিশ্ব নিউমনিয়া দিবস পালিত হচ্ছে। নিউমোনিয়া সম্পর্কিত জটিলতা এবং সমস্যাগুলি তুলে ধরার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে এই দিনটি প্রথম পালিত হয়েছিল। বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবসে এর ক্ষতিকর প্রভাব, কারণ এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ বা চিকিত্সা করা যায় সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পালিত হয়।
বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবসে এর ক্ষতিকর প্রভাব, কারণ এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ বা চিকিত্সা করা যায় সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পালিত হয়। এটি সক্রিয় এবং টেকসই বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার সাহায্যে মারাত্মক রোগের কারণে মৃত্যু হ্রাস করা লক্ষ্য করে। উদ্দেশ্য হ’ল, গবেষণার জন্য আরও তহবিল সংগ্রহ করার জন্য জীবন-হুমকিপূর্ণ রোগটিকে জনসাধারণের নজরে আনা, প্রতিষ্ঠানগুলিকে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় পদক্ষেপ নিতে উত্সাহিত করা এবং মৃত্যু হ্রাস করা।

জন হপকিন্স সেন্টার অফ পাবলিক হেলথের মতে, ২০১৬ সালে নিউমোনিয়ার কারণে ১, ৫৮,১৭৬ জন মারা গিয়েছে এবং এর প্রধান কারণ হল ঘরের ভিতরের বায়ু দূষণ, একটানা স্তনদুগ্ধ না খাওয়ানো, বায়ু দূষণ, কম জন্মের ওজন এবং অপুষ্টি।WHO-এর মতে, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া বেশি তীব্র হয় এবং এই রোগ প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

নিউমোনিয়া হল একটি সংক্রামক ব্যাধি যা ২০১৯ সালে ৬৭২,০০০ শিশু-সহ সারা বিশ্বে ২.৫ মিলিয়ন মানুষকে প্রভাবিত করেছিল। নিউমোনিয়া দিবস ২০০৯ সালে শিশু নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে গ্লোবাল কোয়ালিশন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শিশু নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে গ্লোবাল কোয়ালিশন হল সরকারি, বেসরকার্, সম্প্রদায়-ভিত্তিক, শিক্ষামূলক এবং গবেষণা ভিত্তিক সংস্থাগুলির একটি প্রতিষ্ঠান। ওই বছরে নিউমোনিয়া প্রতি বছর ১.২ মিলিয়ন শিশু মৃত্যুর পিছনে ছিল এই মারাত্মক রোগ।

হু ও ইউনিসেফের ২০১৩ সালে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা অনুসারে, লক্ষ্য হল নিউমোনিয়ার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা এবং ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে মৃত্যুর হার কমিয়ে তিনে নামিয়ে আনা।

উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষকে শ্বাসতন্ত্রের জটিল এ অসুখ থেকে বাঁচানোর লক্ষ্যে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করতে দিবসটির গুরুত্ব অনেক। সারা পৃথিবীতে নিউমোনিয়ায় প্রতিবছর প্রায় ৪৫ কোটি লোক আক্রান্ত হয়। মারা যায় প্রায় ৪০ লাখ রোগী। উন্নয়নশীল দেশে নিউমোনিয়ার ব্যাপকতা বেশি। পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশু ও বৃদ্ধরাই নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয় এবং শিশুরা বেশি মারা যায়। তুলনামূলকভাবে নারীদের চেয়ে পুরুষরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়। ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত জটিল একটি রোগ নিউমোনিয়া। ফুসফুসের প্যারেনকাইমা বা বায়ুথলিতে জীবাণু যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি সংক্রমণের ফলে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কাশি এসব উপসর্গ দেখা দেয়। যা নিউমোনিয়া নামে পরিচিত। এটি ফুসফুসের অত্যন্ত প্রচলিত ও প্রাচীন একটি রোগ। আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক হিপোক্রেটস আড়াই হাজার বছর আগে এ রোগের বর্ণনা দিয়েছেন। শিশুদের ক্ষেত্রে বয়সভেদে রোগজীবাণুতে কিছু পার্থক্য থাকে। ক্রনিক ঠাণ্ডালাগা, বুকে শ্লেষ্মা জমে থাকার সূত্র ধরেই আক্রান্ত হয় নিউমোনিয়ায়।
ঠাণ্ডা লাগলেই যে সবার নিউমোনিয়া হবে তা কিন্তু নয়, তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, মূলত বয়স্ক ও শিশুরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাদের মতে, নিউমোনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ খুব জ্বর। ওষুধে জ্বর নামলেও আবার ওষুধের প্রভাব কাটলেই হু হু করে বেড়ে যায়। ১০৩-১০৪ ডিগ্রি উঠতে পারে জ্বর। এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ইত্যাদি তো থাকেই। অনেক সময় মাথায় যন্ত্রণা, ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়া, খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা এসবও নিউমোনিয়ার লক্ষণ। নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীকে ছুঁলেই নিউমোনিয়ার জীবাণু শরীরে ছড়ায় না। আক্রান্তের কাশি বা হাঁচি থেকে তা ছড়াতে পারে। তবে সর্দিজ্বরের সঙ্গে নিউমোনিয়ার বেশকিছু পার্থক্য থাকে।

একটু লক্ষ্য রাখলেই রোগ নির্ণয় করা সহজ। চিকিৎসকদের মতে, প্রাথমিকভাবে সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি দিয়ে এই রোগ শুরু হলেও দেখা যায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জ্বর, শ্বাসকষ্ট বাড়ছে, কাশিও বাড়ছে। অনেক সময় জ্বরের ওষুধের কড়া ডোজে জ্বর নামলেও ফিরে ফিরে আসে তা। অবস্থা গুরুতর হলে কাশির সঙ্গে রক্তও উঠতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। একমাত্র চিকিৎসকই বুঝতে পারেন ব্যক্তি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে কি না। তবু নিশ্চিত হতে কিছু পরীক্ষা করাতে হয়।

উপসর্গসমূহ।।

নিউমোনিয়ার উপসর্গ গুলো বিভিন্ন হয়ে থাকে। এটা নির্ভর করে শারীরিক অবস্থা এবং কি ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে তার উপর। নিউমোনিয়ার লক্ষণ সমূহ নিম্নরূপ:
জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, কাপুনি, ঘাম হওয়া, বুকে ব্যাথা যা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে উঠা নামা করে, মাথা ব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যাথা, ক্লান্তি অনুভব করা। তাই নিয়ম করে ডক্টর দেখিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

কি ভাবে প্রতিরোধ করব।।

ভালোভাবে পরিষ্কার করে হাত ধুতে হবে,  নিজের প্রতি যত্ন নিতে হবে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, ধূমপান করা যাবে না, অন্যের সামনে হাঁচি/কাশি দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হাঁচি/কাশি দেয়ার সময় মুখ হাত দিয়ে ঢাকতে হবে বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে, টিকা দিতে হবে —- যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন খুবই কার্যকর। ডায়াবেটিস,এইডস, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদির চিকিৎসা করাতে হবে।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া।।