ভারতীয় অর্থনীতির হালহকিকৎ — একটি সমীক্ষা : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

0
829

করোনা’র কারণে এখন নাকি “নিউ-নরমাল” যুগ । একই কারণে সারা বিশ্ব টালমাটাল । এহেন পরিস্থিতির মধ্যে কেমন চলছে আমাদের দেশের অর্থনীতি । সেই প্রেক্ষাপটে আমার লেখার অবতারনা । সর্বত্র অশনি সংকেতের ত্রাহি ত্রাহি রব, “দেশের অর্থনীতি পুরোটাই রসাতলে” । আরও শোনা যাচ্ছে, অর্থনীতির পরিকাঠামোর নাকি কোমর ভেঙ্গে গেছে । সোজা হয়ে দাঁড়াবার মতো পরিস্থিতি নেই । নিউ-নরমাল যুগে ভাঙ্গাচুড়া জগাখিচুড়ির অর্থনীতির করুণ চেহারা ! ঘুরে দাড়াতে গেলে অনেক কসরত দরকার । চটজলদি অর্থনীতির ভগ্ন স্বাস্থ্য ফিরবার নয় । তারজন্য চাই সুসংহত পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন । অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার পরিপ্রেক্ষিতে, এই কঠিন অর্থনীতির পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসা আশু কর্তব্য ।
মুদ্রাস্ফীতি গগণচুম্বী । তার উর্ধ্বগতি এখনও বর্তমান । জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া । পিয়াঁজের দাম মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। তেমনি আলুর দাম, বেড়েই যাচ্ছে । থামার লক্ষণ নেই । এই সময়টা মানুষের আলুর চাষের সময় । অথচ চাষীদের আলুর বীজ কিনতে হিমসিম অবস্থা । বাজারে ঢুকে জিনিসপত্র কিনতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস । সুতরাং মুদ্রাস্ফীতির হার ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে কোথায় দাঁড়াবে বলা কষ্ট । গত সেপ্টেম্বর মাসে জিনিসপত্রের দামে মূল্যবৃদ্ধি সমানভাবে বজায় ছিল। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ওই মাসে পণ্য-পরিষেবার খুচরো দরে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৩৪% ! আগস্ট মাসে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল ৬.৬৯% । সুতরাং মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়তে বাধ্য ।
মুদ্রাস্ফীতি বলতে আমরা কী বুঝি ? মোদ্দা কথা, কোনো একটা নিদ্দির্ষ্ট সময়ের মধ্যে দ্রব্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধি বেড়ে গেলে অর্থনৈতিক ভাষায় তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয় । তবে “সাধারণত পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গেলে স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে ঐ পণ্য ক্রয়ে বেশি পরিমাণ মুদ্রার প্রয়োজন কিংবা একই পরিমাণ মুদ্রা দিয়ে আগের পরিমাণ পণ্য কিনতে গেলে পরিমাণে কম পাওয়া অবশ্যম্ভাবী ।“ সুতরাং মুদ্রাস্ফীতির ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়। একই ভাবে অর্থনীতিতে পণ্যের আসল বিনিময়মূল্য কমে যায়। আর একটা কথা জানা দরকার । মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার প্রেক্ষাপটে সাধারণত আমরা দেখি, কোনো দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক অর্থাৎ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং সেই দেশের সরকার একসাথে পরিকল্পনা স্থির করে । কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের দ্বারা গৃহীত পরিকল্পনাকে বলা হয় “মানিটরি পলিসি”(Monetary Policy) এবং সরকারের দ্বারা গৃহীত পদক্ষেপগুলিকে বলা হয় ” ফিসকাল পলিসি”(Fiscal Policy) ।
এবার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (Economic Growth) নিয়ে আলোচনা করা যাক । অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলতে আমরা বুঝি, নির্দ্দিষ্ট সময়ে একটি দেশের অর্থনীতিতে পণ্য ও সেবার উৎপাদন বৃদ্ধি । সাধারণত কোনো দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জি.ডি.পি) বৃদ্ধির শতকরা হারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হিসাবে আখ্যায়িত করা হয় । একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে কতটা উন্নতি করছে তার প্রধান নিয়ামক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি । সহজ ভাষায় অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি বলতে মোট দেশজ উৎপাদনের বর্ধিত অংশের শতকরা মানকে বোঝায় ।
“ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক” (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রকাশিত) “একটি দীর্ঘ ও কঠিন অগ্রগতি” শিরোনামে এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, মাথাপিছু জি.ডি.পি অর্থাৎ মোট দেশজ উৎপাদন ১০.৫ শতাংশ কমে ১,৮৭৭ ডলার দাড়াবে । পাশাপাশি দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, অন্যান্য উদীয়মান দেশের অর্থনীতির মতোই বাংলাদেশের জি-ডি-পি প্রবৃদ্ধি ২০২০ সালে ৩.৮ শতাংশ হবে ।
এবার পরবর্তী আলোচনায় যাওয়ার আগে আমরা জেনে নিই, জি.ডি.পি কী ?
জি.ডি.পি একটি দেশের অভ্যন্তরে এক বছর চূড়ান্তভাবে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবার বাজারে সামষ্টিক মূল্য হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদন অর্থাৎ জি.ডি.পি অর্থাৎ ইংরেজিতে ‘গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট’ । আগের বছরের তুলনায় পরের বছরের উৎপাদন যে হারে বাড়ে সেটি হচ্ছে জি.ডি.পি’র প্রবৃদ্ধি ।
আমাদের দেশ অর্থাৎ ভারতে ২০১৭ সালে জি-ডি-পি ছিল বিশ্বের ৬ নম্বরে, কিন্তু ২০১৮তে ভারত গেল ৭ নম্বরে । যদিও জি.ডি.পি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.৮ শতাংশ । বিশেজ্ঞদের মতে, অর্থনৈতিক বিকাশের গতি শ্লথ হওয়ার কারণে এবং মার্কিন ডলারের তুলনায় বারবার ভারতীয় মুদ্রামানের অবনয়নের জন্য ২০১৭ সালের চেয়ে জি.ডি.পি’র নিরিখে ভারত পিছিয়ে পড়েছে । ২০২০-২১ আর্থিক বছরে মুডিজ’র পূর্বাভাস আরও খারাপ । ভারতে আয় নাকি ব্যাপকভাবে কমছে ।
এবার দেখা যাক জি.এন.পি কী ? জি.ডি.পি ও জি.এন.পি প্রায় সমার্থক । তবে সামান্য পার্থক্য রয়েছে । কোনো নির্দ্দিষ্ট সময়ে, সাধারণত এক বছরে কোনো দেশের জনগণ মোট যে পরিমান চূড়ান্ত দ্রব্য বা সেবা উৎপাদন করে তার অর্থমূল্যকে মোট জাতীয় উৎপাদন বা জি.এন.পি বলে । জাতীয় উৎপাদনের মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারী ও কর্মরত বিদেশী ব্যক্তি ও সংস্থার উৎপাদন বা আয় অন্তর্ভূক্ত হবে না । তবে বিদেশে বসবাসকারী বা কর্মরত দেশি নাগরিক, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও আয় অন্তর্ভূক্ত হবে । জাতীয় আয়ের হিসাব থেকে একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় । যে দেশের জি.এন.পি যত বেশী সে দেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তত বেশী সমৃদ্ধ ।
বিশ্বের অর্থনীতি বৃদ্ধির ইঙ্গিতের প্রেক্ষাপটে ভারতে ২০১৮ থেকে ২০২০তে (পঞ্জিকা বর্ষে) জি.ডি.পি বৃদ্ধি হওয়ার কথা ৩.৭ শতাংশ । ২০২১ থেকে ২০২৩ বৃদ্ধি হবে ৩.৬ শতাংশ । ক্রয় ক্ষমতা থেকে শুরু করে আরও কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে এই সম্ভাবনার কথা জানা গেছে । এখনও কিছু বিশেজ্ঞদের বিশ্বাস, ভারতে ২০১৯-২০তে জি-ডি-পি হবে ৪.২ শতাংশ ।
ভারতে জি-ডি-পি কমার নিম্নলিখিত কারণগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঃ
• করোনা সংক্রমনের জেরে মন্দা বাজার । কয়েক লক্ষ তরুন কর্মহীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা । ব্যবসায় ঘাটতি ।
• করোনার জন্য অনেক বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই শ্লথ হয়েছে জি-ডি-পি’র বৃদ্ধির গতি ।
• চতুর্থ লকডাউনের আবহে অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ । যার ফলে বাণিজ্যক তথ্য আদানপ্রদানে প্রচন্ড ব্যাঘাত ঘটেছে ।
• বাজারের গতি সচল রাখতে যদিও আমাদের দেশের মাননীয়া অর্থ মন্ত্রীর প্রয়াস অব্যাহত । সুতরাং ভবিষ্যৎ বলবে, ভারতীয় অর্থনীতি কোন্‌ দিকে ।
• বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা জানি, জি.ডি.পি’র ৫৫ শতাংশ আসে “পরিষেবা” ক্ষেত্র থেকে । প্রায় তিন মাসের উপর পরিষেবা ক্ষেত্র বন্ধ থাকায় প্রভাবিত হয়েছে জি-ডি-পি বৃদ্ধির হার ।
তবে মার্কিন আর্থিক সমীক্ষা গোল্ডম্যান সাচস, চলতি অর্থবর্ষে ভারতের জি.ডি.পি ৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে । তবে একটা কথা —- আই.এম.এফ’র তথ্য অনুসারে ভারত চলতি অর্থ বছরে বিশ্বের দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে নিজের স্থান ধরে রাখতে সক্ষম হবে ।
আমরা জানি, মাথাপিছু আয় হচ্ছে একটি দেশের মোট আয়কে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যেটা পাওয়া যায় সেটাই মাথাপিছু আয়ের হিসাব । আই.এম.এফ বলছে ২০২০ পঞ্জিকাবর্ষে ভারতের মাথপিছু জি-ডি-পি হবে ১৮৭৭ ডলার । অন্যদিকে “বিজনেস স্টান্ডার্ড”- এর রিপোর্ট অনুযায়ী, জানুয়ারী ২০২১ অর্থবর্ষে ভারতের মাথাপিছু আয় করোনা’র কারণে কমবে ৫.৪ শতাংশ । সুতরাং মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ১.৪৩ লক্ষ টাকা যেটা ডলারে মূল্য দাঁড়ায় ১৮৯৫ ডলার । সুতরাং মাথাপিছু আয়ের অবস্থাও উদ্বেগজনক ।
এবার একঝলক ভারতীয় অর্থনীতির চিত্রটা দেখে নেওয়া যাক । ভারতের অর্থনীতি বৈচিত্র্যময় । কৃষিকাজ, হস্তশিল্প, বস্ত্রশিল্প, উৎপাদন এবং বিভিন্ন সেবা ভারতের অর্থনীতির অংশ । ভারতের খেটে খাওয়া মানুষের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে কিংবা পরোক্ষভাবে কৃষিজমি থেকে জীবিকা নির্বাহ করে । এখনও ভারতের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ৬৯ শতাশ কৃষির উপর নির্ভরশীল । তবে সেবাখাত ক্রমশ প্রসারলাভ করছে, ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে । ডিজিটাল যুগের আর্বিভাবের পর শিক্ষিত লোকের সহজলভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে ভারত আউটসোর্সিং ও কারিগরি সহায়তাদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে পরিণত হয়েছে । এটা ঘটনা, ভারত সফটওয়্যার ও আর্থিক সেবার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে অতি দক্ষ শ্রমিক সরবরাহ করে থাকে । এছাড়া ঔষধ শিল্প, জীবপ্রযুক্তি, ন্যানোপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ, জাহাজ নির্মান, পর্যটন শিল্পগুলিতে জোড়ালো প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ।
স্বাধীণতা লাভের পর ইতিহাসের অধিকাংশ সময় জুড়ে ভারত সমাজবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে অর্থনীতি চালানোর চেষ্টা করে আসছে । সেইসময় অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহন বৈদেশিক বাণিজ্য এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের উপর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছিল । ১৯৯০ দশকের শুরু থেকে ভারত ক্রমে উদারপন্থী অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে তার বাজারগুলি উন্মুক্ত করতে শুরু করে । দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা ভারতের একটি প্রধান সমস্যা, যার জন্য সামাজিক সমতা অর্জনের জন্য একটি বড় বাধা ।
এই প্রসঙ্গে বলা ভাল, এই বছরটি ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক বছর । কম বৃদ্ধির হার, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হার এবং কমে যাওয়া উৎপাদনের হার উদ্বেগজনক !
উৎপাদন ক্ষেত্রে সরকারের গুরুত্বের ফলে শিল্প উৎপাদন সূচক, গত বছরের ঋণাত্মক বৃদ্ধি থেকে সরে এসে চলতি বছরে ২.১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে । মুদ্রাস্ফীতির (পাইকারী সূচক সংখ্যা) হারও ক্রমাগত কমছে । ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে এই হার ছিল ৫.৫৫ শতাংশ, সেটা কমে ২০১৫ সালের এপ্রিলে ২.৬৫ শতাংশ হয়েছে । যার জন্য রাজকোষ ঘাটতির হারও ক্রমাগত কমে চলেছে । ভারতের চলতি খাতে ঘাটতির হার গত বছরের জাতীয় আয়ের ৪.৭ শতাংশ থেকে কমে ১.৭ শতাংশ হয়েছে । ভারতে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে ।
এবার আসছি বৈদেশিক মুদ্রার হালহকিকত নিয়ে । ২০১৮-১৯’এ মোট প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পরিমান ১৪.২ শতাংশ বেড়েছে । প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমান বেড়েছে পরিষেবা, মোটর গাড়ি ও রসায়ন ক্ষত্রে । ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র দ্বিমুখী সমস্যার সম্মুখীন । কর্পোরেট ও ব্যাঙ্ক ব্যালান্স সীট-এ সমস্যার পাশাপাশি অনুৎপাদক সম্পদের পরিমান যেটার জন্য চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়েছে । অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যেয়াগের (এম.এস.এম.ই) ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক ঋণ সহায়তা ২০১৬-১৭তে নিম্নমুখী ছিল । তবে ২০১৮ থেকে প্রবণতা কিছুটা উর্ধ্বগামী । কৃষি ও সহযোগী ক্ষেত্রে ২০১৮-১৯-এ প্রকৃত বিকাশ হার কিছুটা কমলেও উৎপাদন ও নির্মান ক্ষেত্রে অগ্রগতির দরুন শিল্প বিকাশের হার ত্বরান্বিত হয়েছে ।
এছাড়া ২০১৯ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফ.ডি.আই) আকর্ষণের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে নবম স্থানে রয়েছে ভারত । ভারত প্রায় ৫১০০ কোটি ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ পেয়েছে বলে জানা গেছে জাতি সংঘের ব্যবসা সংক্রান্ত বিভাগ থেকে । চলতি বছর করোনাভাইরাস মহামারীতে বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকট চললেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভারতে বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাসের আশঙ্কা নেই বলেই মনে করছে তারা । তাছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে এফ-ডি-আই আকর্ষণকারী শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায় রয়েছে ভারত ।
তবুও কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেওয়ায় ২০২০ সালে ভারতের বাজারে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ সংকুচিত হবে বলেই আশঙ্কা । বলা চলে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় এফ-ডি-আই প্রবাহ হ্রাস পাবে ।
এবার আসছি বিশেজ্ঞরা কী বলছেন ?
বিশ্বব্যাঙ্ক বলছে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থনীতি কমতে পারে ৩.২ শতাংশ । বিশ্বব্যাঙ্কের ভারতীয় অর্থনীতির উপর পূর্বাভাস, ২০২১ সালে ভারতের অর্থনীতির গতি ফিরবে । আন্তর্জাতিক সম্ভাবনা রিপোর্টে বিশ্বব্যাঙ্ক জানিয়েছে, “ভারতে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে আউটপুট প্রজেক্ট কমে হতে পারে ৩.২ শতাংশ ।“ অন্যদিকে মুডিজ ইনভেস্টরস্‌ সার্ভিস, এস অ্যান্ড পি’র মতো আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থাগুলি জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির হার কমবে ৪.৫ শতাংশ । দীর্ঘ সময় প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছে ভারতীয় অর্থনীতি । এর মধ্যে করোনার ধাক্কা অর্থনীতিকে যে নয়া চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দেবে তার পূর্বাভাস আগেই দিয়েছেন বিশেজ্ঞরা ।
অর্থ মন্ত্রকের অর্থনৈতিক বিষয়ক দফতরের (ডি.ই.এ) প্রকাশিত ম্যাক্রোইকনমিক্স রিপোর্ট অনুসারে, করোনাভাইরাসের কোনও ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। তার জেরে ভারতীয় অর্থনীতি ‘গভীর চ্যালেঞ্জের’ মুখে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি অর্থনীতি সম্পর্কে আশার আলোর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এই রিপোর্টে। সরকারের বিভিন্ন কাঠামোগত সংস্কার এবং সামাজিক কল্যাণমূলক পদক্ষেপ অর্থনীতির এই দুর্দশার মধ্যে সামান্য হলেও ইতিবাচক সম্ভাবনার গতি সঞ্চার করেছে ।
এখন আমাদের দৃষ্টি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে ? আমরা নিশ্চিত, ভারতীয় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে এবং ভারতীয় অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটবে ।
——————–o————————–
এ১০এক্স/৩৪, কল্যাণী, নদীয়া-৭৪১২৩৫, মো-৯৪৩৩৪৬২৮৫৪