সমদুঃখী : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

0
594

মকবুলকে নিয়ে আচ্ছা যন্ত্রণায় পড়েছে ফুপিয়া বিবি । আচ্ছা ডানপিটে ছেলে । কিছুতেই কথা শুনতে চায় না । পিঠে ঘা মারলেও স্কুলে যেতে চায় না । স্কুলে যাওয়ায় প্রচন্ড অনীহা । অথচ মল্লিকার স্কুলে যাওয়ার পথে প্রতিদিন মল্লিকাকে মকবুলের বিরক্ত করা চাই । কোনোদিন মল্লিকার স্কুলের ব্যাগ ধরে টানবে, আবার কোনোদিন মকবুলের কথার গুরুত্ব না দিলে মল্লিকাকে আবোল-তাবোল দু-চার কথা শুনিয়ে ছাড়বে । এতে এক ধরনের তার নিস্পাপ সরলতার মজা । অথচ মকবুলের ঐরূপ ঔদ্ধত্য আচরণের জন্য মল্লিকা খুব বিরক্ত । তাই বাধ্য হয়ে মকবুলের বিরূদ্ধে মল্লিকা তার বাড়িতে নালিশ জানালো । মল্লিকার সঙ্গে মকবুলের দুর্বিনীত ব্যবহারে মল্লিকার দাদারাও বিরক্ত ।
ফুপিয়া বিবি মল্লিকাদের বাড়িতে ফাইফরমাশ খাটে । রান্না-বান্না প্রয়োজনে বাজার হাট করে । বাসন মাজা এবং ঘরদোর পরিস্কার করার জন্য ঠিকা-ঝি রয়েছে । ফুপিয়া বিবি বিধবা । বাড়িতে ফুপিয়া বিবি ও মকবুল । মকবুল তার একমাত্র সন্তান । ফুপিয়া বিবি আবার ছেলে অন্ত প্রাণ । মল্লিকার বাবা, বনবিহারী দত্ত বড় চাষি । গাঁয়ে অনেক জমি-জায়গা । চাষের মরশুম ছাড়াও সারা বছর বনবিহারী বাবুর বাড়িতে লোকজন কাজ করে । বনবিহারী বাবু একরকম জোর করে ফুপিয়া বিবিকে বাড়িতে কাজে লাগিয়েছে । তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে । মেয়েটা একাদশ শ্রেণীতে পড়ে । মেয়েটা দেখতে শুনতে ভাল । বাড়ি থেকে হাই স্কুল প্রায় দেড় কিলোমিটারের পথ । স্কুলে মল্লিকার সাইকেলে যাতায়াত । মকবুল মল্লিকার প্রায় সমবয়সী । কিন্তু ছোটতেই মকবুল ইঁচড়ে পাকা । উচ্ছৃঙ্খলতায় ভরা তার জীবন যাপন । ভবিষ্যত গঠনের ব্যাপারে তার হুঁশ কম । ফুপিয়া বিবি জানে, তার ছেলে স্কুলে যায় না ঠিকই কিন্তু বেশরম নয় । নাশকতামূলক কাজ তাঁর ছেলের দ্বারা নৈব-নৈব-চ । মকবুল কাটোয়ায় টেলারিংয়ের কাজ শিখছে । হাতের কাজ জানা থাকলে ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে । তার মতো হাড়ভাঙ্গা খাটুনির কাজ মকবুলকে কখনই করতে হবে না ।
মকবুল ও মল্লিকা পাশাপাশি বড় হচ্ছে । মল্লিকা বয়স অনুপাতে শারীরিকভাবে বড্ড বড় । তাকে দেখলে যে কেউ ভুল করে বলবেন, মল্লিকা কলেজে পড়া মেয়ে । ডাগরডোগর দেখতে । রাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তার মানুষের চোখে পড়ে । এটা মল্লিকার কাছে একটা অতিরিক্ত বিড়ম্বনা । বিশেষ করে পথ চলতি পুরুষ মানুষেরা একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে থাকলে মল্লিকার মনে ভীষণ বিরূপ প্রভাব পড়ে ।
সেদিন রবিবার । ইচ্ছা পাটুলি যাওয়ার । সেখানে তার বান্ধবীর বাড়ি । বান্ধবী অনেকদিন ধরে মল্লিকাকে তাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে । তাদের বিশাল বড় আম বাগান । আম বাগানে দুই বান্ধবী মিলে নির্ভেজাল আড্ডা দেওয়ার মতলব । ভরা গ্রীস্মকাল । তাদের আম বাগানে প্রচুর আমের সমারোহ । সেইজন্য বিশেষ করে আম বাগানে ঘোরাঘুরি এবং কাঁচা-পাকা আম খাওয়া মূল উদ্দেশ্য ।
পুরানো কাটোয়া-কালনা রোড ধরে সাইকেল চালাচ্ছে মল্লিকা । মকবুল মল্লিকাকে দেখতে পেয়ে ঠিক তার পেছন পেছন হাজির । মল্লিকা সাইকেল থেকে নেমে এক প্রস্থ মকবুলকে শাসালো । বকাঝকা করলো । তবুও মকবুল নাছোড়বান্দা । মল্লিকার গালিগালাজ কখনই গায়ে মাখে না মকবুল । দ্রুত সাইকেল চালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মকবুল । কিছুক্ষণ পর পেছনে তাকিয়ে দেখে, মল্লিকাকে দেখা যাচ্ছে না । তাই ফের পেছন দিকে ঘুরলো মকবুল । গেল কোথায় মেয়েটা ?
হঠাৎ মকবুল দেখলো বট গাছটার ফাঁকা জায়গাটায় রাস্তার উপরে মল্লিকার সাইকেল । চিৎকার করে ডাকলো, “মল্লিকা” ! কোনো সাড়াশব্দ নেই । মকবুল ভয় পেয়ে গেল । বটগাছতলার জায়গাটা খুব খতরনাক । অনেক অঘটনার খবর মকবুলের জানা । এমনকি ভিন্‌ রাজ্যের নারী পাচারকারীরা ওত পেতে থাকে, হাল্কা বয়সের মেয়েদের পাচার করার জন্য । অতীতে তার জানা দুটো ঘটনা, যদিও সেই মেয়েদের আজও হদিশ মেলেনি । অজানা আশঙ্কায় চমকে উঠলো মকবুল । কিছুটা গিয়ে সইফুদ্দিনের চায়ের দোকান । সইফুদ্দিনের সঙ্গে মকবুলের হৃদ্যতা যথেষ্ট । যদিও চায়ের দোকানে সইফুদ্দিনের বাবা বসেন । তাঁকে জিজ্ঞাসা করলো মকবুল, “চাচা, এদিকে বনবিহারী দত্তের মেয়েকে যেতে দেখেছো” ।
না, বাপ ! তবে………… !
তবে কী চাচা ?
তবে একটা মোটরবাইকে দুটো অপরিচিত লোকের মাঝখানে একটা মেয়েকে যেতে দেখলাম । লোক দুটি ষন্ডামার্কা । দেখলেই বোঝা যায়, লোক দুটি খতরনাক । তারা সামনের রাস্তা দিয়ে হাই রোডের দিকের গেল ।
“হাই রোড অর্থাৎ আসাম রোডের দিকে” ? মকবুল ভাল করে বুঝে নিলো ।
হ্যাঁ ।
জোরে সাইকেল ছোটালো মকবুল । গাছগাছলার ভিতর দিয়ে ছোট এক ফালি রাস্তা । সেটা গিয়ে মিশেছে, বড় আসাম রোডের সঙ্গে । আসাম রোড ধরে অনায়াসে কলকাতা পৌঁছানো যায় । মকবুলের দৃঢ় বিশ্বাস, এত তাড়াতাড়ি গুন্ডারা বড় রাস্তায় পৌঁছাতে পারে না । রাস্তার যা হালহকিকৎ তাতে মোটর বাইকের আগে সাইকেলে মকবুল পৌঁছে যাবে । মকবুলের শরীরের তাকত সাংঘাতিক । রোগা-পটকা ছেলে হলে কীহবে, শরীরে দুর্ধর্ষ শক্তি । দুর্দান্ত সাহস ও মনের জোর । সহজে ঘাবড়াবার পাত্র নয় মকবুল । কিছুটা যাওয়ার পর একশ মিটার দূরত্বে মোটর বাইক দেখতে পেলো মকবুল । হঠাৎ এবড়ো-খেবড়ো রাস্তার জন্য জার্কিংয়ে মোটরবাইক কাত হওয়ায় তিনজনেই রাস্তার উপরে পড়ে গেল । মল্লিকার চোখ-মুখ বাঁধা । দুর্বৃত্তরা পুনরায় বাইকে ওঠার আগেই মকবুল স্পটে পৌঁছেই সোজা একজনের পেটে হাতের মুঠো দিয়ে সজোরে ঘুষি ! আচমকা ঘুষি খেয়ে বেচারা পুনরায় রাস্তার উপরে গড়াগড়ি । কিন্তু অপরটা আরও শক্তিশালী । সে মকবুলকে মারার জন্য ছুটে আসতেই মকবুল সাইকেলটা দুহাতে তুলে মাথার উপরে ঘোরাতে লাগলো । সাইকেলের চাকার আঘাতে অন্য দুর্বৃত্তটা ঘায়েল হওয়ার উপক্রম । রাস্তার উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে মল্লিকার চিৎকার, “মকবুল, আচ্ছা করে গুন্ডাগুলিকে মারো । আমাকে নাকি ফুর্তি করতে নিয়ে যাচ্ছে । লম্পটদের ফুর্তি করার কুমতলবের যথাযথ শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে । আমার সঙ্গে অবর্ণনীয় অশালীন ব্যবহার করেছে গুন্ডাগুলি । ওদের তুমি ছাড়বে না” ।
ষন্ডামার্কা দুটো মস্তানের সঙ্গে পেরে উঠছে না মকবুল । শক্তিশালী দুটো গুন্ডার হাতের মার খেয়ে মকবুলের নাজেহাল অবস্থা । রাস্তার উপরে পড়ে গেল মকবুল । মল্লিকা ছুটে এসে মকবুলকে সাহস জোগালো । তাকে জড়িয়ে ধরে মল্লিকার কান্না, “তোমাকে পারতে হবে মকবুল” ! হেরে গেলে চলবে না । মকবুলকে পুনরায় দাঁড় করালো মল্লিকা । হাঁপিয়ে গেছে মকবুল । অন্যদিকে দুর্বৃত্তরা মল্লিকার হাত ধরে টানাটানি । তাকে পুনরায় বাইকে চাপিয়ে পালাবার ধান্দা । মকবুল কোমর থেকে প্যান্টের বেল্ট খুলে আবার দুটোকে এলোপাথাড়ি আঘাত । বেধড়ক মার । সেই আঘাতে একজন দুর্বৃত্ত মাটিতে পড়ে গেল । অপরটা কী যেন ভাবলো । তারপর দুজনে মল্লিকাকে ফেলেই বাইকে চেপে পালাতে সচেষ্ট । টলতে টলতে মকবুল বাইকটা টেনে ধরলো । বাইক টেনে ধরাই তার কাল হোলো । পেছনে বসা দুর্বৃত্তটা তার বা-পায়ে সজোরে মকবুলকে এক লাথি ! ছিটকে পড়ে গেল মকবুল । মাথা ফেটে রক্ত ক্ষরণ !
মাথা থেকে রক্ত চুইয়ে পড়া দেখে মল্লিকা হতভম্ব ! কিংকর্তব্যবিমূঢ়, দিশেহারা । মকবুল মাথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে । উঠে বসার ক্ষমতা নেই । ভীষণ যন্ত্রণা । খুব কষ্ট পাচ্ছে মকবুল । মল্লিকার দুচোখে অঝোরে জল গড়িয়ে পড়ছে । তাকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে মকবুলের মৃত্যু যন্ত্রণা । মল্লিকার সামনে ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ছে মকবুল । কষ্টে, যন্ত্রণায় মকবুলের চোখ বুজে আসছে । মল্লিকার কোনো কিছু ভাববার অবকাশ নেই । মকবুলকে কোনোরকমে সাইকেলের পেছনে ওঠালো মল্লিকা । তার বুকের উপর মকবুলের মাথা । হাঁটিয়ে নিয়ে চললো সাইকেল । সাইকেল চালানোর মতো পরিস্থিতি নেই । ইতিমধ্যে গাঁয়ের জগন্নাথ কাকার ভ্যান রিক্সার আবির্ভাব । ভ্যানে তুলে নিয়ে সোজা কাটোয়া হাসপাতাল । হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তুললো মকবুলকে । সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি । তারপর শুরু হোলো চিকিৎসা । ডাক্তার বাবু বেরিয়ে এসে বললেন, মকবুলের শারীরিক সুস্থতার জন্য অন্তত দুই বোতল রক্ত দরকার । প্রথমেই মল্লিকা ডাক্তার বাবুকে বললো, “আমার রক্তটা একটু মিলিয়ে দেখবেন প্লিজ । যদি মকবুলের রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিলে যায়, তবে যতোটা রক্ত দরকার আমার শরীর থেকে নিন স্যার । তবুও যেভাবে হোক, মকবুলকে বাঁচাতে হবে” । সৌভাগ্যবশত মল্লিকার রক্তের গ্রুপের সাথে মকবুলের রক্তের গ্রুপ মিলে গেল । পাশাপাশি বেডে মল্লিকাকে শুইয়ে সরাসরি মল্লিকার শরীরের রক্ত মকবুলের শরীরে প্রবেশ । হাসপাতাল, ভর্তি, ডাক্তার, রক্ত, ইত্যাদি করতে গিয়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে সন্ধ্যারাত্রি ।
এদিকে মল্লিকা বাড়ি ফিরছে না । বাড়িতে সবাই তটস্থ । মল্লিকার ছোট দাদা পাটুলির সেই বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলো, মল্লিকা সেখানে যায় নি । মল্লিকার পাটুলিতে “না যাওয়ার” খবর পাওয়ার পর মল্লিকার মেজদা ছুটলো, মকবুলের বাড়িতে । নিশ্চয় তার বোনকে মকবুল অযথা উত্ত্যক্ত করছে । মকবুলের ধান্দা খারাপ ! মল্লিকার মেজদা রাগে ফুঁসছে । আজ মকবুলকে যোগ্য শিক্ষা দিয়ে তার শান্তি । বোনের নিরুদ্দেশের পেছনে অবধারিতভাবে মকবুলের প্রলোভন স্পষ্ট । তার বোনকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত শাস্তি মকবুল পাবেই । মকবুলের বাড়ি পৌঁছে দেখে, বাড়িতে শুধুমাত্র ফুপিয়া বিবি । কিন্তু সে তার ছেলের খোঁজে পাড়ায় বেরিয়েছে । তারপর আর সাতপাঁচ না ভেবে মল্লিকার মেজদা সোজা থানায় । থানায় নালিশ জানালো, “তার বোন মল্লিকাকে নিয়ে মকবুল উধাও । মকবুলকে হাতেনাতে ধরে তার কঠোর শাস্তি চাই” ।
পুলিশ তদন্তে বেরিয়ে প্রথমে মকবুলদের বাড়ি । সেখানে মকবুলকে না পেয়ে মকবুলের মাকে তুলে এনে থানার লক আপে ঢোকালেন । পুলিশের ধারণা, মায়ের খোঁজে মকবুল থানায় এসে ধরা দেবেই । চারিদিকে তল্লাশি । সম্ভাব্য সমস্ত জায়গায় খুঁজে পুলিশ এবং মল্লিকার দাদারা ব্যর্থ ।
রাত্রিতে সইফুদ্দিনের বাবার চায়ের দোকান তখনও খোলা । তিনি দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন । মল্লিকার ছোড়দা চায়ের দোকান খোলা দেখে তার বড় ভাইকে বললো, “এবার চা খেয়ে নেওয়া যাক । তারপর বড় রাস্তায় পাটুলির চৌরাস্তার মোড়ে যাবো । যদি সেখানে কোনো খবর মেলে” । মোটর বাইক থেকে তিন ভাই নেমে চা বানাতে বললো । এদিকে তিন ভাইয়ের কথোপকথন অবলোকন করে সইফুদ্দিনের বাবা বুঝতে পারলেন, দুপুরে যেজন্য মকবুল উদ্বিগ্ন ছিলো ঠিক সেই কারণে মল্লিকার তিন দাদা উদ্বিগ্ন ! সইফুদ্দিনের বাবা বনবিহারী বাবু ও তাঁর বড় ছেলেকে ভালভাবেই চেনেন । তাই কৌতুহলবশত সইফুদ্দিনের বাবা বনবিহারী বাবুর বড় ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “বাপধন ! তোমার বোনের কী হয়েছে” ?
“চাচা, তাকে বিকেল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না । পাটুলিতে বান্ধবীর বাড়ি যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে, তারপর থেকে সে নিখোঁজ । পাটুলিতে বান্ধবীর বাড়িও যায় নি এমনকি নিজের বাড়িতেও ফেরেনি । এজন্য আমাদের একমাত্র বোনটার জন্য দুশ্চিন্তায় আমরা দিশেহারা” ।
“মকবুল এসেছিলো দুপুরবেলায় । তাকেও মল্লিকাকে নিয়ে খুব চিন্তিত দেখলাম । সইফুদ্দিনের বাবা তখন মোটর বাইকে দুজন ষন্ডামার্কা লোকের মাঝখানে একটা মেয়েকে দেখেছে, কিন্তু মেয়েটিকে চিনতে পারেন নি । সেই মোটর বাইক লক্ষ্য করে ঠিক তক্ষুণি মকবুল তাদের পেছন ধাওয়া করে বড় রাস্তার দিকে ছুটছিলো । তারপর কী হয়েছে তিনি কিচ্ছু জানেন না” । সইফুদ্দিনের বাবা সবিস্তারে ঘটনাটা খুলে মল্লিকার দাদাদের অবগত করলেন ।
তারা আর চা না খেয়ে ছুটলো পাটুলির চৌরাস্তার দিকে । ঐ রাস্তা দিয়ে খালি ভ্যান নিয়ে বাড়ি ফিরছিলো সেই জগন্নাথ ভ্যানওয়ালা । জগন্নাথ ভ্যানওয়ালার বাড়ি তাদের গাঁয়ে । ভীষণ পরিচিত । বাইক দাঁড় করিয়ে মল্লিকার বড় দাদা জগন্নাথকে জিজ্ঞাসা করলো, “এই চত্বরে আমার বোনকে দেখেছো” ?
“দেখেছি কী ! তোমাদের বোনকে আমিই ভ্যানে করে কাটোয়া হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে এলাম” । জগন্নাথ উত্তরে বললো ।
তিনজনে কাটোয়া হাসপাতালে পৌঁছে রোগী ভর্তির রেজিস্টারে মল্লিকার নাম খুঁজে না পেয়ে তারা আরও চিন্তিত হয়ে পড়লো । গোটা হাসপাতাল তন্ন তন্ন করে খুঁজেও মল্লিকার হদিস পেল না । অবশেষে বাড়ি থেকে ফোন, “মল্লিকা বাড়ি ফিরেছে” ।
বাড়িতে ফিরে তিন দাদা বোনের যত্নের প্রতি ব্যস্ত হয়ে উঠলো ।
মকবুল হাসপাতালে । মকবুলের মা থানার লক আপে । তাদের ব্যাপারে মল্লিকার বাড়ির কোনো হেলদোল নেই । যতোবার মল্লিকা বোঝাতে চেষ্টা করেছে, “গোঁয়ার দুঃসাহসী মকবুল ছিলো বলেই মল্লিকা বেঁচে ফিরেছে” । কিন্তু দাদারা এমনকি মল্লিকার বাবাও মকবুলদের দুর্দশা লাঘবের ব্যাপারে পুরোপুরি উদাসীন । হাবভাব এমনই, “ওদের শাস্তি হয়েছে বেশ হয়েছে । আরও যন্ত্রণায় ভুগুক । হাসপাতালে মকবুল পচে মরুক্‌” ।
কিন্তু মল্লিকা বিবেকের দংশনে জর্জড়িত । নিজেকে সংযত রাখতে পারলো না । বিকেলে সে থানায় উপস্থিত । থানার বড় বাবুকে নিজের পরিচয় দিয়ে বললো, “স্যার, মকবুলের কোনো দোষ নেই । মকবুল নিজের জীবন বিপন্ন করে আমাকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে না বাঁচালে আজ আমি আপনাদের সম্মুখে বসে কথা বলতে পারতাম না । সুতরাং মকবুল নির্দোষ । মকবুলের মাকে লক আপ থেকে ছড়ে দিন স্যার” ।
উত্তরে থানার বড় বাবু বললেন, “রিপোর্ট ফাইল করেছেন আপনার মেজ-দাদা । সুতরাং আপনার মেজদা থানায় এসে কেসটা নিঃশর্তে তুলে না নিলে আমরা মকবুলের মাকে ছাড়তে পারবো না । প্লিজ আপনার মেজদাকে থানায় আসতে বলুন” ।
মকবুলের বিরুদ্ধে থানায় নথিভুক্ত করা কেস মেজদা তুলতে নারাজ । তার ধারণা, এর পেছনে মকবুলের হাত আছে । সমাজের ঐসব দুর্বৃত্তদের সাথে নিশ্চয় মকবুলের ওঠাবসা । যার জন্য তার বোনকে অপহরণের ছক । মারপিট করা তার সাজানো নাটক !
পরেরদিন মকবুলের মাকে থানা থেকে কোর্টে চালান করার কথা । সেই রাত্রিতে মল্লিকার তৎপরতায় বরিষ্ঠ উকিলের সহযোগিতায় মকবুলের মাকে জামিনে ছাড়িয়ে আনা হোলো ।
—————-০——————–
এ১০এক্স/৩৪, কল্যাণী-৭৪১২৩৫ (ভারত)