ভক্তের ইচ্ছের কাছে ভগবানের হার স্বীকার—-অপূর্ব কথা এক : রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।

0
1171

আজ আমরা জানবো , এমন এক ঘটনার কথা যার দ্বারা প্রমাণ হয় শুদ্ধ ভক্তের হৃদয়ে যদি ভগবানকে প্রকট করানোর ঐকান্তিকী ইচ্ছা থেকে থাকে, তাহলে কিন্তু কোন একসময় ভগবানকে নিজের ভক্তের কাছে বন্ধন স্বীকার করে নিয়ে ধরা দিতেই হয়। প্রাণে বড় আনন্দ বর্ধনকারী সে ঘটনা। আসুন জানি।
গৌড়দেশের দন্ডেশ্বর গ্রামে বাস করতেন শ্রীকৃষ্ণ মন্ডল। তাঁর স্ত্রীর নাম ছরিকা। সদ্ গোপ কুলতিলক শ্রীকৃষ্ণ দন্ডেশ্বর ত্যাগ করে চলে আসেন উৎকল প্রদেশের ‘ধরেন্দা বাহাদুর’ গ্রামে। এখানেই ১৫৩৪ খ্রিষ্টাব্দে (১৪৫৬শকাব্দ) চৈত্রী পূর্ণিমা তিথিতে তাঁদের এক পুত্র সন্তানের আবির্ভাব হয় । এর আগে তাঁদের বেশ কয়েকটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে মারা যায়। মনে অনেক দুঃখ নিয়ে তাঁরা পুত্রকে পালন করতেন এই আশঙ্কায় যে, বুঝিবা এ পুত্রও বেশিদিন ইহজগতে রইবে না। তাই, এই শিশুর নাম গ্রামের স্ত্রীরা রাখলেন ‘দুঃখিয়া’ , ‘দুঃখি’। পতি-পত্নী সর্বদা শ্রীকৃষ্ণ ভগবানের চরণে প্রার্থনা করতেন এই বলে যে, এ পুত্রকে তিনি যেন রক্ষা করেন। অল্পকালের মধ্যেই পুত্র ব্যাকরণাদি শিক্ষা করলেন। অদ্ভুত তাঁর প্রেম সেই শৈশব থেকেই। নিতাই-গৌরাঙ্গ গুণ শ্রবণ করেই দিবানিশি তাঁর নয়নবারি নির্গত হয়। রাধাকৃষ্ণ-লীলামৃত পান করতে বড় তাঁর আগ্রহ। পিতা-মাতার পদ সেবাতেও তাঁর পরম যত্ন।
দুঃখিয়ার বাল্য-পৌগন্ড বয়সকাল খুব আদরে-আনন্দে গৃহে কাটলো। পরে প্রায় ২০ বৎসর বয়সে তিনি একদিন মধ্য রাত্রে সংসার ছেড়ে বেড়িয়ে গেলেন। তাঁর পিতা-মাতার থেকে আদেশ পূর্বেই নিয়ে রেখেছিলেন যে অম্বিকা নগরবাসী গৌরপ্রিয়জন শ্রীহৃদয়চৈতন্যের থেকে দীক্ষা গ্রহণ করবেন তিনি। প্রভাতে পিতা-মাতা অনেক অন্বেষণ করেও পুত্রের সন্ধান পেলেন না। তাঁরা বুঝলেন পুত্র বৈরাগী হয়ে বেড়িয়ে গেছে তবে! মনে মনে অনেক কুশল আশীর্বাদ করলেন তাঁকে।
কয়েকদিন পর দুঃখিয়া এলেন নাড়াদেউ গ্রামে। সেখান থেকে চেওয়া নগর হয়ে এলেন হুগলীর খানাকুলে। সেখানে অভিরাম ঠাকুরের গোপীনাথ দর্শন করে, পরদিন সন্ধ্যাবেলায় পৌঁছালেন বর্ধমানের অম্বিকায় । অম্বিকা কালনার শ্রীশ্রীনিতাই-গৌরাঙ্গ বিগ্রহ দর্শন করে প্রেমে ভাসলেন, নয়নবারি যেন আর বাঁধ মানে না তাঁর। তাঁর প্রেমবৈভব দেখে পূজারী পরিচয় জানতে চাইলেন। তিনি পরম যত্নে দুঃখিয়াকে প্রসাদ পাওয়ালেন। দুঃখিয়া প্রসাদ পেতে বসে মনে মনে ভাবছেন কোন সেবা করবেন তিনি সেখানে।
পরদিন নিশি থাকতে জেগে মন্দির প্রাঙ্গন সম্মার্জন(ঝাড়ু দেওয়া) করতে থাকলেন দুঃখিয়া। হৃদয়চৈতন্য এসে দেখলেন তাঁকে ঝাড়ুসেবা করতে। প্রসঙ্গতঃ জানাই, হৃদয়চৈতন্য হলেন শ্রীগদাধর পন্ডিতের ভ্রাতুষ্পুত্র ও কালনার নিতাই-গৌরের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীগৌরীদাস পন্ডিতের প্রিয় শিষ্য। হৃদয়চৈতন্য প্রসন্ন হয়ে দুঃখিয়ার পরিচয় জানার পর বললেন, “সে কী! তুমি দুঃখিয়া কেন হতে যাবে ! তুমি তো কৃষ্ণের দাস ! সদা সুখী। তোমার নাম আজ থেকে কৃষ্ণদাস।”
এমন মনমতো নাম পেয়ে দুঃখিয়া ভীষণ খুশি হলেন মনে মনে। তিনি অনেক দৈন্য করে দীক্ষামন্ত্র ভিক্ষা করলেন হৃদয়চৈতন্যের কাছে । ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে তাঁকে দীক্ষা দিলেন হৃদয়চৈতন্য। ভক্তিতত্ত্ব শিক্ষা করালেন দিনে দিনে তাঁকে। দুঃখিয়া কৃষ্ণদাস নামামৃত পান করে দিবস কাটান। তাঁর প্রেমচেষ্টা দেখে পরিতুষ্ট হন তাঁর শ্রীগুরুদেব হৃদয়চৈতন্য।
কতকাল অম্বিকায় বাস করার পর বৃন্দাবন দর্শন করতে যাবার বাসনা হল কৃষ্ণদাসের। তিনি আজ্ঞা প্রার্থনা করলেন। হৃদয়চৈতন্য শিষ্যের প্রেমচেষ্টা দেখে সুখী হলেন। তিনি আজ্ঞা প্রদান করলেন ব্রজগমনের ।
শ্রীগুরুদেবের আজ্ঞা প্রাপ্ত হয়ে কৃষ্ণদাস গমন করলেন ব্রজের উদ্দেশ্যে। কতদিন পর উপস্থিত হলেন ব্রজে। প্রেমাকুল মনে ভ্রমণ করলেন সকল লীলাস্থলী। আহার-নিদ্রা ত্যাগ করেছেন প্রায়। প্রেমে উন্মাদের মত অবস্থা হল তাঁর। রাধাকুণ্ড তটে চরণ দর্শন পেলেন শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর। শ্রীল রঘুনাথ দাসের কাছে নিয়ে গেলেন কৃষ্ণদাস কবিরাজ তাঁকে। রঘুনাথ দাস অনেক কৃপা করলেন কৃষ্ণদাসকে। শ্রীজীব গোস্বামী বৈষ্ণব শাস্ত্র গ্রন্থ অধ্যয়ন করালেন যত্ন করে তাঁকে। একে একে সকল গৌরগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল দুঃখিয়া কৃষ্ণদাসের। গুরু আজ্ঞার অনুরূপ কর্ম করেন, গুরুসম শ্রদ্ধাভক্তি করেন প্রতিজন বৈষ্ণবকে তিনি। সকলে তাঁর ব্যবহারে, সেবায় ভীষণ সন্তুষ্ট হন তাঁর প্রতি।
ওদিকে অম্বিকায় হৃদয়চৈতন্যের কাছে লোকমুখে সংবাদ পৌঁছাল কৃষ্ণদাসের গুণের। শিষ্যের সম্বন্ধে প্রশংসাসূচক বাক্য পেয়ে বড় সুখী হলেন তিনি। শ্রীজীব গোস্বামীর কাছে পত্র লিখে কৃষ্ণদাসের ভার তাঁর হাতে সমর্পণ করলেন হৃদয়চৈতন্য। শিষ্য কৃষ্ণদাসকেও পত্র লিখলেন এই বলে যে, শ্রীজীব গোস্বামীকে যেন গুরুসম দেখেন তিনি। অপরাধহীন হয়ে ভজন করতে বললেন । আর সাবধানে, সযত্নে, মর্যাদা রক্ষা করে শ্রীজীব গোস্বামীর বাক্য পালন করতে আদেশ দিলেন। অনুগত শিষ্যের ন্যায় তাই-ই করেছেন কৃষ্ণদাস। শ্রীজীব যখন যেমন আদেশ করতেন বিনয়ী কৃষ্ণদাস তা করতেন। সাধ্য-সাধন তত্ত্ব শিক্ষা করালেন শ্রীজীব তাঁকে। রাগানুগা ভজনপথ প্রদর্শন করলেন। প্রেমবিলাস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে কেমন ক্রমে শিক্ষা দিয়েছেন শ্রীজীব কৃষ্ণদাসকে। তবে আকারে বড় হবার আশঙ্কায়, এই প্রবন্ধে তা লিখছি না । ‘মহাপ্রভু ও তাঁর পার্ষদকথা’ গ্রন্থে সেসব লিখেছি। চলে আসছি বরং এবার মূল ঘটনায়।
শ্রীজীব গোস্বামী শিক্ষা দিয়ে কৃষ্ণদাসকে সিদ্ধ নাম দিলেন—–‘কনক মঞ্জরী’। কুঞ্জে বসে শুরু হল কৃষ্ণদাসের মানস ভজন। নিকুঞ্জ বনে যেখানে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধিকা বিলাস করেন, সেই স্থানে প্রভাতে প্রতিদিন ঝাড়ুগিরি করেন কৃষ্ণদাস। অর্থাৎ, ঝাঁট দিয়ে লীলাস্থান সংস্কার করে রাখেন। একদিন, ঝাঁট দেবার সময় পেলেন একটি সোনার নূপুর। নূপুরটি শ্রীরাধিকার। রাত্রে নিকুঞ্জে নৃত্য-গীত করার সময়, তাঁর বাম পায়ের নূপুর খুলে পড়ে যায়। এমনটা যে হয়েছে তিনি তা অবশ্য নিজেই জানেন না।
এদিকে মানস ভজনে নিমজ্জিত শ্যামানন্দ ভোর বেলায় ঝাড়ু দিতে দিতে আগের রাত্রের বিলাস স্মরণ করেন আর হাসতে থাকেন আপনমনে প্রতিদিন। তিনি সেদিন যখন পত্রের আড়ালে নূপুরটি পেলেন, নিদারুণ আশ্চর্য হলেন। পরক্ষণেই মৃত্তিকায় পদচিহ্ন দেখে বুঝে ফেললেন যে সেসব পদচিহ্ন কাদের আর নূপুরটিই বা কার। সখীসহ যুগলকিশোরের পদচিহ্নে তখনই দণ্ডবৎ প্রণাম করলেন কৃষ্ণদাস , আর নূপুরটি সযত্নে রেখে দিলেন নিজের কাছে।
নূপুরের সৌরভে কৃষ্ণদাসের মন-প্রাণ আমোদিত হয়ে গেল। তিনি প্রেমানন্দে ঢুলতে ঢুলতে কুটীরে ফিরলেন। নূপুর দর্শন করেই শ্রীজীব গোস্বামী অনুধাবন করে ফেললেন সে দিব্য নূপুর কার হতে পারে। তিনি বুকে, মুখে, চোখে স্পর্শ করলেন সে নূপুরকে। প্রেমে অচেতন হয়ে পড়লেন শ্রীজীব। পরে সুস্থির হলে জড়িয়ে ধরলেন শিষ্য দুঃখিয়া কৃষ্ণদাসকে। বললেন, “আহা! তোমার কত সৌভাগ্য কৃষ্ণদাস! তোমার এত দিনের পরিশ্রম সার্থক হল। তুমি ধন্য বৎস !” কৃষ্ণদাস নূপুরটি যত্ন করে তুলে রাখতে গেলেন খুপরিতে। যে মুহূর্তে নূপুর খুপরি স্পর্শ করলো, অমনি সে খুপরি স্বর্ণময় হয়ে গেল।
এদিকে ললিতা সখীর নজরে পড়লো যে নিকুঞ্জে সারা রাত্রিতে বিলাস করে সকালে ফেরার পর শ্রীরাধার পদে নূপুর নেই। তিনি নূপুরের খোঁজ করলেন। শ্রীরাধা বললেন, “বৃন্দা তো দ্বারী ছিল, সে খেয়াল করেনি যে আমার নূপুর খোঁয়া গেছে! এখন কী হবে! যদি কেউ পায় তা, কী হবে !” ললিতা তখন বৃন্দাদেবীকে নিয়ে নিকুঞ্জবনে এলেন নূপুরের খোঁজ করতে। পেলেন না। নূপুর তো কৃষ্ণদাসের কাছে, পাবেন কী করে! তার পরের দিন, কৃষ্ণদাস যখন ঝাড়ু দিচ্ছেন তাঁরা এসে নূপুর চাইলেন কৃষ্ণদাসের কাছে। কৃষ্ণদাস বললেন, “নূপুর কি তোমাদের? ললিতা—“না, আমাদের নয়। আমাদের ঠাকুরাণীর।” কৃষ্ণদাস—“বেশ। তবে যাঁর নূপুর তিনিই আসুন আগে, তারপর নূপুর পাবেন। তাঁর পদে আমি নিজে নূপুরখানা পরিয়ে দেব। না হলে নূপুর মিলবে না। তাঁকেই আসতে হবে।”
অনেক বুঝিয়েও পারলেন না ললিতাদেবী ও বৃন্দাদেবী। কী অবুঝ ঝাড়ুসেবক ! অগত্যা ফিরে গিয়ে রাধারাণীকে বললেন তাঁরা সব। রাধারাণী বিস্মিত হলেন শুনে। ভারী অদ্ভুত আর একগুঁয়ে ভক্ত তো! ললিতা-বৃন্দাও পারলো না নূপুর উদ্ধার করে আনতে তার থেকে ! কী আশ্চর্য! তাকে তো তাহলে একবার দেখতে যেতে হয়! নাঃ, এমন ভক্তের কাছে আমাকেই যেতে হবে দেখছি নূপুর নিতে।”
ব্রজেশ্বরী শ্রীরাধাঠাকুরাণী নূপুর নিতে সাক্ষাৎ নিজে এলেন। প্রেমানন্দে বিভোর কৃষ্ণদাস নিজের হাতে পরিয়ে দিলেন নূপুর কিশোরীজীর শ্রীপদকোকনদে। তবে নূপুর সমর্পণ করার আগে নাসার সামনে ধরে নূপুরের সেই অপার্থিব, দিব্য ঘ্রাণ নিলেন আর একবার। আর ঠিক সেই মুহূর্তে রাধাঠাকুরাণী তাঁর কৃপার প্রতিফলন স্বরূপ নিজের নূপুরের চিহ্ন তিলকরূপে এঁকে দিলেন কৃষ্ণদাসের ললাটে, নাসায় । অর্থাৎ, নূপুর চিহ্ন অঙ্কিত হয়ে গেল বরাবরের মত তিলক হিসেবে। কৃষ্ণদাসের প্রবল প্রেমভক্তির বাঁধনে বাঁধা পড়লেন শ্রীরাধা। তাই তো সাক্ষাৎ নিজে হাজির হয়েছেন তাঁর কাছে।
এদিকে বৃন্দাবনে মহা সোরগোল উঠল যে, গুরুদ্রোহী হয়েছেন কৃষ্ণদাস। নিজের ইচ্ছানুযায়ী তিলক সেবা করছেন আজকাল । সকল মোহান্তেরা এসে জানতে চাইলেন, “তোমার এমন বিপরীত ব্যবহার কেন হঠাৎ? এমন তিলক তুমি কার আজ্ঞায় আঁকছো? কে তোমায় বিধান দিয়েছেন? এমন তিলকের তো প্রচলনই নেই কোন সম্প্রদায়ে! তবে কী তুমি গুরুদ্রোহী হতে চাইছো?” কৃষ্ণদাস বললেন, “শ্রীললিতার প্রসাদে শ্রীরাধার চরণ পেয়েছি। এ তিলক আমার আঁকা নয়। তাঁর দান।”
গৌড়ে কৃষ্ণদাসের গুরুদেব হৃদয়চৈতন্য মহাশয়ের কাছে পত্রী পাঠানো হল। পত্রীর থেকে পত্র পেয়ে হৃদয়চৈতন্য এলেন ব্রজে। সর্বজন সমক্ষে প্রশ্ন করা হল শ্যামানন্দকে আবার। গৌরীদাস পন্ডিত ছিলেন দ্বাপর যুগে ব্রজের ‘সুবল সখা’। তাঁরই তো প্রশিষ্য কৃষ্ণদাস। গৌরীদাস পণ্ডিতের ছিল সখ্যভাবের ভজন। অথচ, গৌরীদাসের ক্রিয়া-মুদ্রারও চিহ্ন ছিল না কৃষ্ণদাসের তিলকে। সকলকে যেন উপেক্ষা করে স্বকপোলকল্পিত তিলক এঁকেছেন কৃষ্ণদাস! তাই তাঁকে শাসন করার জন্য হৃদয়চৈতন্যের আদেশে সেই স্বকপোলকল্পিত তিলক মুছে ফেলা হল। কিন্তু পুনরায় তিলক নিজস্থানে প্রকট হল। সকলে পরম বিস্মিত হলেন। যতবার তিলক মুছে ফেলা হল, ততবারই সেই স্বরূপ তিলক ভেসে উঠলো ললাটে তাঁর। তখন সকলে অনুভব এবং অনুধাবন করলেন যে, প্রকৃতই শ্রীরাধার প্রসাদে সেই তিলকের উদ্ভব হয়েছে কৃষ্ণদাসের কপালে।
পরমানন্দিত হৃদয়চৈতন্য বললেন, “আমার শিষ্য হয়ে সে সাধন নির্য্যাস শিক্ষা দিল আমায়। আমি এমন শিষ্য পেয়ে ধন্য ! ওর তিলক নিয়ে আমার কোন অনুশাসন নেই আর। যা স্বয়ং রাধারাণী প্রদান করেছেন, তা অবলুপ্ত করার সাধ্য কী আমার! এ যে শ্রীমতীর কৃপাপ্রসাদের চিহ্ন!” তখন সকল বৈষ্ণবরাও মহোল্লসিত হলেন শ্রীরাধা ঠাকুরাণীর কৃপার প্রমাণ পেয়ে।
কৃষ্ণদাসের নাম ‘শ্যামানন্দ’ রেখেছিলেন শ্রীজীব গোস্বামী। শ্রীশ্রীরাধাশ্যামসুন্দর বিগ্রহের সুখবিধান,আনন্দবিধান করেছিলেন তিনি, তাই তো শ্যামানন্দ!
“রাধা শ্যামসুন্দরের সুখ জন্মাইল।
জানিয়া শ্রীজীব শ্যামানন্দ নাম থুইল।।”
(ভক্তি.র. ৬তরঙ্গ)
এই শ্যামানন্দ প্রভুই হলেন শ্রীঅদ্বৈত আচার্যের আবেশ অবতার বা দ্বিতীয় প্রকাশ। তাঁর শিষ্য-প্রশিষ্যরা তথা আশ্রিত জনেরা এখন পর্যন্ত এমন নূপুর তিলকই ধারণ করেন। এটিই নিয়ম। লেখার সঙ্গে যে যুগলবিগ্রহের চিত্র দেওয়া হয়েছে , সেই বিগ্রহই শ্যামানন্দ প্রভুর সেবিত প্রাণধন বিগ্রহ শ্রীশ্রীরাধাশ্যামসুন্দর জীউ।

শ্যামানন্দ প্রভুর শ্রীদেহকে মহাপ্রভু নিজ-কলেবর করে অভাবনীয় এক লীলা করেছেন। প্রভু কৃপা করলে আগামী সংখ্যায় তা জানবো আমরা।

শ্যামানন্দ প্রভুর চরণে অনন্ত অর্বুদ কোটি প্রণাম নিবেদন করে ব্রজেশ্বরীর শ্রীচরণেতে তাঁর মত দৃঢ়-প্রেমভক্তি ও সেবাভিলাষ প্রার্থনা করি আমার মত প্রেমহীনা, ভজনহীনার জন্য। এমন করে আমিও যেন প্রেমডোরে বাঁধতে পারি আমার ঈশ্বরীকে —-এই কৃপা করবেন‌ প্রভু!

——ভক্ত-কৃপাপ্রার্থিনী
রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here