প্রাচীন রীতি মেনে দারকেশ্বর নদের চরের মুড়ি মেলায় মুড়ি খেতে হাজার হাজার মানুষের ভিড়।

0
741

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁকুড়াঃ সারা রাজ্যের পাশাপাশি বাঁকুড়া জেলাতেও করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু করোনার সেই উর্ধগতি ছেদ টানতে পারল না বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ার সুপ্রাচীন মুড়ি মেলায়। নানা পদ সহযোগে দারকেশ্বর নদের চরে বসে পরিবার পরিজন নিয়ে মুড়ি খাওয়ার উৎসবে যোগ দিলেন হাজার হাজার মানুষ।

রাঢ় বাংলার মানুষের খাদ্যতালিকায় থাকা ফেভারিট আইটেমগুলির মধ্যে অন্যতম মুড়ি। রাঢ় বাঁকুড়ার মানুষের কাছে মুড়ি এতটাই জনপ্রিয় যে জনশ্রুতি একবার আকাশপথে ঢেঁকিতে চড়ে যাওয়ার পথে স্বয়ং নারদ মুনী মুড়ি ভেজানোর চোঁ চোঁ শব্দে রীতিমত ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তা সেই মুড়ি খাওয়াকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়া জেলায় এক আধটা উৎসব থাকবে না তা কেমন করে হয়? তেমনই এক উৎসব কেঞ্জাকুড়ার মুড়ি মেলা। বাঁকুড়ার অন্যতম প্রাচীন জনপদ কেঞ্জাকুড়া। এই কেঞ্জাকুড়ার একপ্রান্ত দিয়ে বয়ে গেছে দারকেশ্বর নদ। সেই নদের ধারেই মাতা সঞ্জিবনী মন্দির। যে মন্দিরে মকর সংক্রান্তির দিন থেকে শুরু হয় সংকীর্তন। শেষ হয় মাঘ মাসের চতুর্থীর দিন। কথিত আছে একসময় দূর দূরান্তের মানুষ সংকীর্তন শুনতে এই সঞ্জিবনী মাতার আশ্রমে আসতেন। সারা রাত সংকীর্তন শুনে তাঁরা ফিরে যেতেন নিজের নিজের গ্রামে। কীর্তন শুনে ফেরার পথে সাথে আনা মুড়ি দারকেশ্বর নদের চরে ভিজিয়ে খেতেন পূণ্যার্থীরা। সময়ের সাথে সাথে পূন্যার্থীদের সেই অভ্যাসই পরিনত হয়েছে রীতিতে। এখন ফি বছর মাঘ মাসের চতুর্থী দূর দূরান্তের মানুষ সঙ্গে মুড়ি বেঁধে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন কেঞ্জাকুড়ার কাছে দারকেশ্বরের চরে। সঙ্গে থাকে চপ, সিঙ্গাড়া, বেগুনি, শসা, মুলো, পেঁয়াজ, নারকেল, টমেটো, বিভিন্ন ধরনের নাড়ু, জিলিপি, মিঠাই সহ বিভিন্ন পদ। নদের চরের বালিতে গামছা বিছিয়ে নানা পদের সাথে পাহাড় প্রমাণ মুড়ি নিয়ে চলে খাওয়া দাওয়া। শীতের মিঠে রোদে পিঠ লাগিয়ে চলে আড্ডা, হুল্লোড়, সেলফি তোলা। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এবছর এই মেলায় আসা মানুষের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। কিন্তু তাতে মুড়ি মেলার কৌলিন্য ম্লান হয়নি এতটুকুও।