দিনহাটা গুলি কাণ্ডে অভিযুক্ত বিজেপি নেতা এখনও এধরা, পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন উদয়ন।

0
424

দিনহাটা, নিজস্ব সংবাদদাতা:- ফের পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ। গতকাল দিনহাটা শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে গুলিবিদ্ধ হন তৃণমূল কংগ্রেসের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মিঠু দাসের স্বামী তাপস দাস(বিজু)। ওই ঘটনায় বিজেপি নেতা অজয় রায়ের বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মিঠু দাস। কিন্তু তারপরেও পুলিশ অজয় রায়কে কেন গ্রেপ্তার করছে না, সেই প্রশ্ন তুলে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন উদয়ন বাবু। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তৃণমূল জেলা জুড়ে ধিক্কার মিছিল করেছে বলেও জানা গিয়েছে। মাথাভাঙ্গা, তুফানগঞ্জ, দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ মহাকুমাতে এদিন ধিক্কার মিছিল হয়। মাথাভাঙ্গা এবং তুফানগঞ্জ এর মিছিল নেতৃত্ব দেন জেলা সভাপতি গিরীন্দ্রনাথ বর্মন। দিনহাটার ধিক্কার মিছিলে পা মেলান উদয়ন গুহ। মেখলিগঞ্জে ধিক্কার মিছিল এই সামিল হন রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বিধায়ক পরেশ চন্দ্র অধিকারী। এছাড়াও ছিলেন পার্থ প্রতিম রায়, কমলেশ অধিকারী সহ জেলার বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন।
উদয়ন গুহ অভিযোগ করে বলেন, “কোচবিহারে কোথাও যদি আমাদের দলের কেউ অভিযুক্ত হন, তখন তৎপরতার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু গতকালের গুলির ঘটনার পর গুলিবিদ্ধ তাপস দাসের স্ত্রী লিখিত ভাবে অজয় রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পরেও কোন অজ্ঞাত কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এর আগে বিধানসভা নির্বাচনের পরে আমার উপরে যখন আক্রমণ করা হল, তখন প্রধান অভিযুক্ত অজয় রায়কে পুলিশ খুঁজে পাচ্ছিল না। আমরা কোচবিহারে এমনকি দিনহাটার বাড়িতে দেখা মেলার কথা পুলিশকে জানালেও কোন কাজ হয় নি। কি এক অদ্ভুদ সম্পর্ক পুলিশ আর অজয় রায়ের, তা এখনও বুঝে উঠতে পারলাম না।” তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, “গতকাল বিজেপির দুষ্কৃতি অজয় রায় আমাদের দিনহাটার কাউন্সিলারের স্বামী তাপস দাসকে লক্ষ্য করে গুলি করেছে। তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এই ঘটনার প্রতিবাদে আমরা জেলা জুড়ে ধিক্কার মিছিল করলাম।”
এক সময় তৃণমূল কংগ্রেসের সাথেই যুক্ত ছিলেন অজয় রায়। পরবর্তীতে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের কাছে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন উদয়ন গুহ। তার পরেই উদয়ন বাবু দিনহাটা শহরেই আক্রান্ত হন। তাঁর হাত ভেঙ্গে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন অজয় রায়। ঘটনার পর তিনি দীর্ঘ সময় পলাতক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তি পান। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। গতকাল ওই নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে তিনি দিনহাটায় নিজের বাড়িতে ফেরেন। অজয় রায়ের বাড়ি ফেরার খবর ছড়িয়ে পড়তেই তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা তাঁর বাড়ির সামনে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে বোমা বাজি করে বলে অভিযোগ। ওই সময় অজয় রায়ের বাড়ির ভিতর থেকে একটি গুলি ছুটে এসে দিনহাটার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার মিঠু দাসের স্বামী তাপস দাসের পেটে লাগে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তৃণমূলের আরও অভিযোগ, অজয় রায় বা তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী ওই গুলি করেছে।
পুলিশের সাথে উদয়ন বাবুর বিরোধ নতুন কিছু নয়, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে তৎকালীন দিনহাটা থানার আইসির বিরুদ্ধে একের পর এক ক্ষোভ উগড়ে দিতে দেখা গিয়েছিল উদয়ন গুহকে। একাধিক ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না উদয়ন বাবু। শুধু তাই নয়, বিরোধী দল বিজেপি বা সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের সাথেও পুলিশের গোপন সম্পর্কের অভিযোগ করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। শেষ পর্যন্ত আইসি বদলি হওয়ার পর ওই বিরোধ কিছুদিনের জন্য দিনহাটায় নতুন করে পুলিশ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে শোনা যায় নি উদয়ন বাবুকে। কিন্তু গতকালের ঘটনার পর ফের পুলিশের ভূমিকায় তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ্যে চলে এসেছি।
পুলিশ দিনহাটার গুলি কাণ্ডের ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। জেলা পুলিশ জানিয়েছে অজয় রায়ের বাড়ি ফেরার খবরে কিছু লোকজন সেখানে জমায়েত হয়ে পাথর ছুঁড়েছে এবং বোমা বাজি করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র মারফত জানতে পেরেছে। গুলিবিদ্ধ তৃণমূল কাউন্সিলারের পেটে একটি একটি ধাতব বস্তু রয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানতে পেরেছেন। কিন্তু সেটা গুলি কিনা, তা পুলিশ এখনও নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছেন না। ওই ঘটনার সময় বাইরে প্রচুর লোক থাকা স্বত্বেও দিনহাটার ওই বাড়ি থেকে অজয় রায় কিভাবে বের হয়ে গেল, তা নিয়েও ধন্ধ তৈরি হয়েছে। নাকি ঘটনার আগেই অজয় রায় ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গিয়েছিলেন? এরকম হাজারো প্রশ্ন তৈরি হয়ে রয়েছে। সমস্ত ঘটনা নিয়ে পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে না এলে ঘটনা পরিষ্কার হবে না বলেই অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।