তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েত সদস্যার ছেলে তথা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠল এক পঞ্চায়েত আধিকারিককে।

0
432

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদাঃ- এন আর জি এস প্রকল্পের বিল পাস হতে বিলম্ব। সেই বিলম্ব থেকে সৃষ্টি ঝামেলার। তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েত সদস্যার ছেলে তথা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠল এক পঞ্চায়েত আধিকারিককে। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই আধিকারিক এই মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ। চাঞ্চল্য এলাকায়। এদিকে এই ঘটনা নিয়ে প্রধান থেকে শুরু করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন ভাবে কিছু বলা হচ্ছে না। মুখ খুলতে চাইছে না কেউ। আবার বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প নিয়ে পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে উঠছে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ। অন্যদিকে জেলা তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমান জানান ঘটনাটি আমি শুনেছি,কি হয়েছে বা কেন হয়েছে সমগ্র ঘটনাটা খতিয়ে দেখে দলগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরদিকে কটাক্ষের সুর চড়িয়েছে বিজেপি, হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার কো-কনভেনার দীপক ঋষি জানান এতদিন সাধারণ মানুষ মার খাচ্ছিল, এখন সরকারি আধিকারিকরাও মার খাচ্ছে। ছাপ্পাশ্রী, কাটমানি, তোলাবাজির সরকার কে সময় আসলে পশ্চিমবাংলার মানুষ যোগ্য জবাব দিবে। গোটা ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।

ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে। অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে ওই পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এনআরজিএস প্রকল্পের বিল আটকে রাখা হয়েছে। পঞ্চায়েতের অধীনে ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে পঞ্চায়েত সদস্যা হাসিনা বিবির ছেলে শেখ হাসিদুল। আর এই বিল আটকে রাখা নিয়ে শেখ হাসিদুলের সঙ্গে বচসা জড়িয়ে পড়েন পঞ্চায়েতের কর্মরত আধিকারিক। অভিযোগ সেই সময় পার্থদেব উপাধ্যায় নামে এক আধিকারিকের ওপর চড়াও হয় পঞ্চায়েত সদস্যার ছেলে শেখ হাসেদুল। সেই সময় ধাক্কাধাক্কি করা হয় ওই আধিকারিক কে। পাশাপাশি হেনস্তা করা হয় সংবাদমাধ্যমকেও। পার্থ দেব উপাধ্যায় নামে আধিকারিক তিনি গ্রাম উন্নয়নের দপ্তরের দায়িত্বে রয়েছেন ওই আধিকারিক এই মুহূর্তে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ছুটে আসেন হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের জয়েন্ট বিডিও বিপ্লব ঘোষ। এছাড়াও পঞ্চায়েত প্রধান জয়নব নেশা এবং হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশও ওই আহত আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করেন এবং কথা বলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে এছাড়াও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর নিয়েও মারাত্মক দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে পঞ্চায়েত সদস্যার বিরুদ্ধে। যে ক্ষেত্রে দেখা যায় বহু দরিদ্র মানুষ যাদের ঘর পাওয়া উচিত, তারা ঘর পায় না। কিন্তু, ঘরের তালিকায় দেখা যাচ্ছে ঘর পেয়েছে হাসিনা বিবি ও ছেলে শেখ হাসেদুল এবং তার স্বামী মহাম্মদ জুল্লু। প্রশ্ন উঠছে যিনি পঞ্চায়েত সদস্যা কি ভাবে তার এবং তারই পরিবারের দুজনের নামে ঘরের টাকা ঢুকলো। আবাস যোজনায় দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগকারীরা ইতিমধ্যে বিডিওর কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। কিন্তু এলাকাবাসী সংবাদমাধ্যমের সামনে এই নিয়ে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে। ওই পঞ্চায়েত সদস্যার ছেলের দাপটে ভীত এবং ত্রস্ত সাধারণ মানুষ। সমগ্র ঘটনায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সেক্রেটারি মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, এন আর জি এস প্রকল্পের মাস্টাররোল নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছিল। আমি সেই সময় নিচে ছিলাম।বাকবিতন্ডা হয়েছিল। কোন হাতাহাতি হয়নি। ওই আধিকারিক অসুস্থ বোধ করায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।

সসংবাদ মাধ্যমের সামনে পঞ্চায়েত প্রধান জয়নব নেশা সমগ্র ঘটনাটি এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, বাইরের লোক এসে মারধর করেছে। কোন প্রকল্প নিয়ে সমস্যা নেই। এর মধ্যে পঞ্চায়েত সদস্যার ছেলে যুক্ত নেই।

হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের জয়েন্ট বিডিও বিপ্লব ঘোষ বলেন, পঞ্চায়েতের এক আধিকারিকের অসুস্থ হওয়ার ফলে তাকে দেখতে এসেছিলাম। কি হয়েছে বা কেন হয়েছে আমি কিছু বলতে পারব না।

জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমান বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। কি হয়েছে বা কেন হয়েছে সমগ্র ঘটনাটা খতিয়ে দেখব। তারপর দলগত ভাবে সিদ্ধান্ত নেব। আমি নিজে সমগ্র ঘটনা জানার পর কিছু বলতে পারব।

কটাক্ষের সুর চড়িয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার বিজেপি কো কনভেনার দীপক ঋষি বলেন মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এক আধিকারিকের মারধর করেছে শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্যার ছেলে। এতদিন সাধারণ মানুষ মার খাচ্ছিল, এখন সরকারি আধিকারিকরাও মার খাচ্ছে। ছাপ্পাশ্রী, কাটমানি, তোলাবাজির সরকার কে সময় আসলে পশ্চিমবাংলার মানুষ যোগ্য জবাব দিবে।

অর্থাৎ এক কথায় দেখা যাচ্ছে সকলেই ঘটনাটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু একজন কর্মরত আধিকারিকের গায়ে হাত তোলা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এদিকে ওই পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সদস্যার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। তাই প্রশাসনের উচিত দ্রুত সমগ্র ব্যাপার নিরপেক্ষ ভাবে খতিয়ে দেখা।