মনিরুল হক, কোচবিহার: জেলা নেতৃত্বের হুশিয়ারির কার্যত কোন তোয়াক্কাই করছেন না পঞ্চায়েত সদস্যরা। নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও একের পর এক তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে আসছেন পঞ্চায়েত সদস্যরা। আর এবার অনাস্থার প্রস্তাব আনলেন দিনহাটা শোলমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮ পঞ্চায়েত সদস্য। এদিন ওই ৮ পঞ্চায়েত সদস্যর ডাকা অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে তলবিসভার মাধ্যমে অবশেষে অপসারিত হলেন দিনহাটা ১ ব্লকের অন্তর্গত বড়ো শোলমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিউটি বর্মন।
এদিন গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে দিনহাটা ১ বিডিওর উপস্থিতিতে ১৪ জন পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে ৮ জনের সম্মতিতে এই সভায় প্রস্তাব পাস হয়। অনাস্থা প্রস্তাব আনা সকল গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এদিন গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ের সামনে পুলিসি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পরারমত।
উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন আগেই বড়ো শোলমারি গ্রামের বর্তমান প্রধান বিউটি বর্মনের নামে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে অপসারণের দাবিতে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসেন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮ পঞ্চায়েত সদস্য। তবে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পার্থ প্রতিম রায় অনস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে একাধিক হুশিয়ারি দিলেও কার্যত তার বিপরীতে গিয়ে আজকের এই অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করে পঞ্চায়েত সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের বড় শৈলমারি গ্রাম পঞ্চায়েত মূলত সিতাই বিধানসভার অন্তর্গত। সেখানে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থা নিয়ে প্রধান বদল করে সিতাই বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া অনুগামীরা। এরপরেই জগদীশ বসুনিয়া বিরোধী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত দিনহাটা ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সঞ্জয় বর্মণের বিরুদ্ধে বড় শৈলমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের একটি অংশকে দিয়ে ওই অনাস্থা নিয়ে আসার অভিযোগ ওঠে। এই নিয়ে বিধায়ক ও ব্লক সভাপতির বিরোধ কার্যত প্রকাশ্যে চলে আসে। তারপরেও ওই অনাস্থা ঠেকানো সম্ভব হয় নি বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এদিন এই সভার প্রাক্কালে দিনহাটা ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি এই অনাস্থা প্রস্তাব বন্ধের জন্য সেখানে গেলে রাস্তায় তাকে একদল দুষ্কৃতী মারধর করে বলে অভিযোগ। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের অপর এক গোষ্ঠীর দাবি সঞ্জয় বর্মন নিজেই এই অনাস্থা প্রস্তাবে মদদ দিচ্ছেন। তবে ব্লক সভাপতির মদতেই হোক বা পঞ্চায়েত সদস্য দের নিজস্ব ইচ্ছেতেই হোক, কোচবিহার জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় শাসন যে তলানিতে থেকেছে তা আজকের অনাস্থা সভা ও বিগত দিনের অনাস্থার মধ্যেই স্পস্ট। এ ছাড়াও দিন দিন যে জেলায় গোষ্ঠিবাজি চরমে ঠেকে যাচ্ছে সেটাও আর বলার অপেক্ষা রাখে না।