আমি আর স্বাধীনতার ইতিহাস পড়ি না।
৭১ এর সেই উত্তাল দিনের রাজপথের সাহসের সৈনিক, সুদীপ্তকে আর দেখি না!
সেদিনের সেই সাহসের সৈনিক মিছিলে মিছিলে.. হাত মুষ্টি করে, আকাশের দিকে তাকিয়ে, পৃথিবী কম্পিত করে রক্ত শপথের শ্লোগান দিত—-
“বজ্র কন্ঠে রক্ত শপথে ধরিলাম হাতিয়ার.. বাঙ্গালি এবার ফিরিয়া পেয়েছে ঈশাখাঁর তরবার”!
বহু খুঁজেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকাতে অথবা বীর শহীদের তালিকাতে..সুদীপ্ত নামের সৈনিকের, নাম খুঁজে পেলাম না!
সেদিনের সেই প্রিয় মুখের মধুস্মৃতি নামের মেয়েটিকে আর নাম ধরে ডাকি না।
যে মেয়েটি সৈনিক সুদীপ্তর সাথে দেখা করার জন্য,কলেজ ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে..ইছামতির পাশ দিয়ে,হাতে হাত ধরে হেঁটে যেত!
প্রজাপতি প্রেম, স্বপ্নের আঁচল ভর্তি করে,অপেক্ষার ভালোবাসায় বেঁধে রাখত!
আমি দেখেছিলাম সেদিন মধুস্মৃতি নামের মেয়েটিকে সৈনিকের সাহস যোগাতে,উত্তাল দিনের মিছিলে মিছিলে..মুক্তির জয়গানে মুখরিত দিন কাটাতে!
সেই থেকে আমি মধুস্মৃতির নামের মুক্তির, জয়গান আর গাই না!
আজ বহু বছর পরে.. অসংখ্য বইয়ের প্রচ্ছদের মলাটের ভীড়ে খুঁজে পেলাম, মধুস্মৃতি নামের তাঁকে!বীরাঙ্গনা খেতাবের নামে,নির্লজ্জ ইতিহাসের উলঙ্গ প্রচ্ছদের বন্দী শিকলে বাঁধা স্বাধীনতার ইতিহাসে।
সেই থেকে আমি আর স্বাধীন
দেশের বন্দী বইয়ের মলাটের প্রচ্ছদ আঁকি না!
আমি মিছিলের পিছনে পিছনে “জয় বাংলা ” শ্লোগানে দৌড়ানো মালতী পাগলীকে জয় বাংলা বলতে শুনি না।
আজ মালতী পাগলী চিৎকার করে বলে.. ঐ দেখ বেজম্মা রাজাকারের দল,শহীদ মিনারে পতাকা উড়ায়!
সেই থেকে তামাশার রাজনীতির রাষ্ট্রে আমি.. শ্রদ্ধার শহীদ মিনারে, গৌরবের স্বাধীনতার পতাকা উড়ায় না!
তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি!স্বাধীনতার ৫০ বছর পড়ে হলেও, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে..খুঁজে পেলাম সেদিনের সাহসের সেই সৈনিক সুদীপ্তকে।
যুদ্ধে পা দুটি হারিয়ে,এক মুঠো ভাতের অভাবে..নিঃশব্দে তাঁর চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে!
পৃথিবীর সমস্ত শব্দ স্তমভিত!ইতিহাস হয় লজ্জিত!
মুক্তিযোদ্ধার তালিকাতো দুরের কথা,৭০ বছর বয়সেও “বৃদ্ধ ভাতার” তালিকাতে তাঁর নাম নাই!
এমন দুর্ভাগ্যের স্বাধীন দেশের বীরযোদ্ধা আজ শহরের মাসুম বাজারে, কাটাপড়া পা’দুটি মুড়িয়ে বসে, মাছ কাটে কাঁপা কাঁপা হাতে,ছানিপড়া চোখে !
জীবনের সব স্বাদ মিশে যায়, মাছের আঁশটের দুর্গন্ধে!
সেই থেকে জীবনের তালিকা ছিঁড়ে ফেলি!নিজেকে ধিক্কার দিয়ে,আর মাছে ভাতে ভরপেট খাই না।
আঁশটে গন্ধেভরা স্বাধীনতার দুর্গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে।
স্বাধীনতা যেখানে নির্লজ্জ পরাধীনতায় বন্দী!সেখানে রাষ্ট্রের প্রতি শ্রদ্ধায় মথা অবনত করা অথবা গৌরবে মাথা উঁচু করে সম্মান দেখানোর, কোন প্রয়োজন মনে করি না আমি!
বিলাসীতার পরিহাসের, বিলক্ষণেরর পরিতাপের, পরাধীনতার স্বাধীনতার ইতিহাস, আজ পরবাসী পরগাছা মাত্র আমার কাছে!
মৃত্যুর অপেক্ষায়!
বড় লজ্জা করে বেঁচে থাকতে।।