নববর্ষের সন্ধিক্ষণে শহর কলকাতায় বাংলার কৃতি সন্তানদের “বাংলার গর্ব-২০২২” এর সম্মানে সন্মানিত করলো শ্রুতি সাহিত্য পত্রিকা……।

0
1453

কলকাতা, সৌগত রাণা কবিয়াল:-  পৃথিবীর সভ্যতার ইতিহাসে, সামাজিক বিবর্তনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানব জীবনে কেবল ‘তারুণ্য’ই এমন একটি সময়, যে সময় বা বয়সটাতে বেশির ভাগ মানুষ সবচাইতে বেশি সৎ ও ভালো কাজের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠে…!
তাই যুগের পর যুগ ইতিহাসের প্রতিটি ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য তারুণ্যকে বারংবার বীরের ভূমিকায় সন্মানিত করা হয়েছে..!

বিশ্ববাংলা সাহিত্য একাডেমি অনুমোদিত শ্রুতি সাহিত্য পত্রিকার আয়োজনে গত ৯ই এপ্রিল কলকাতার ঐতিহ্যবাহী কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট হলের সভাগৃহে বঙ্গবাসী কৃতি মানুষদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁদের মুখরিত অবদানের জন্য “বাংলার গর্ব-২০২২” সন্মানে সন্মানিত করা হয়…!

শ্রুতি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক এই সময়ে তরুণ প্রজন্মের উজ্জ্বল মুখ দীপঙ্কর পোড়েল-এর সার্বিক তত্তাবধানে এবং শ্রুতি সাহিত্য পরিবারের আন্তরিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে বৈশাখের প্রারম্ভিক এক দুপুর-বিকেলে কলকাতার বুকে অনুষ্ঠিত হয় “বাংলার গর্ব-২০২২” এর আলোকিত আয়োজন…!

মিঠু মজুমদারের অনবদ্য সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সাহিত্যিক শ্রীমতী মহেস্বেতা ব্যানার্জি মহাশয়া, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও স্বজন সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক শ্রী চন্দ্রনাথ বসু মহাশয়, বিশিষ্ট সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও সব খবর- সাংবাদিক শ্রী সৌগত রাণা কবিয়াল মহাশয়, আনন্দমুখর সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা শ্রীমতী সুপর্ণা রায় মহাশয়, নবজাগরণ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক শ্রী কল্লোল সরকার মহাশয়, শ্রুতি সাহিত্য পত্রিকার সভাপতি সাহিত্যিক শ্রী রঞ্জন ঘোষ মহাশয়, বিশিষ্ট অভিনেতা শ্রী প্রবীর রায় মহাশয়, থার্ড জেন্ডার কবি শ্রীমতী সোনালী দেবী মহাশয়া ,বিশিষ্ট সমাজসেবী শ্রী তাপস সরকার মহাশয় , ইতিহাস বিষয়ক তরুণ গবেষক শ্রী অর্ণব দত্ত মহাশয় সহ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ…!

প্রান্তিক জীবনধারার সফল মানুষদের তাদের যোগ্য মূল্যায়নে, শ্রুতি সাহিত্য পত্রিকার বিশেষ সন্মাননার আলোকময় এই অনুষ্ঠানটি সার্বিকভাবে নিজেদের আন্তরিক অংশগ্রহণ ও সহোযোগিতায় পরিপূর্ণ করে তোলেন শ্রুতি পরিবার ও সম্পাদক দীপঙ্কর পোড়েলের আত্মজনগন- সীমন্ত ঘোষ, রাজেশ মন্ডল, আহেদা খাতুন, শুভজিৎ ধাড়া, জান মুহাম্মদ, এম সাহজান শেখ, কামাল হাসান, সাংবাদিক অভিজিৎ দত্ত, সাংবাদিক রবি লোচন গোস্বামী, শৈবাল চক্রবর্তী, পুরুষত্তম ভট্রাচার্য ও প্রমুখ মুক্ত মনের আলোকিত মুখ…!

তরুণ তুর্কি দীপঙ্কর পোড়েল সম্পাদনায় এই সময়ের প্রতিভাবান কবিদের সম্বৃদ্ধ কবিতা নিয়ে যৌথ কাব্যগ্রন্থ ‘মঞ্জীর’ এর শুভ উদ্ভোদন হয় অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত গুনিজনদের হাত ধরে…!
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রান্তিক লেখদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্তিতি বলে দেয় যে সাহিত্যে শুদ্ধ আয়োজনে আজও মানুষ ভরসা রাখে..!

পত্রিকাটির সম্পাদক দীপঙ্কর পোড়েল অরণ্য ছদ্মনামে নিজের সাহিত্য চর্চা করার পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের একজন মননশীল মানুষ হিসেবে তার অভূতপূর্ব আন্তরিকতা ও বিনয়ের মাধ্যমে ইতিমধ্যে সাহিত্য ও সামাজিক অঙ্গনে উনার উজ্জ্বল পরিচয় রেখে যাচ্ছেন..!
সরল গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা পলাশ পোড়েল ও টিয়া পোড়লের সুযোগ্য পুত্র হিসেবে, পিতা-মাতার সাহিত্যের প্রতি ভালবাসায় ছেলেবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি তার ভালোবাসা শুরু..!
বিভিন্ন সাহিত্য মূলক কাজ ও নতুন কুঁড়ি ও শ্রুতি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ( বিশ্ব বাংলা সাহিত্য একাডেমী অনুমোদিত) এবং বাঙালি লেখক সংসদের সভাপতি হিসাবে কর্মরত ও B. I. N India ও বাংলা থেকে বাংলায় বলছি এই ক্ষত্র গুলিতে সাংবাদিকতা করার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত এই তরুণ তুর্কি দীপঙ্কর পোড়েল এ পর্যন্ত বিভিন্ন সম্মান পুরুষ্কারে ভূষিত হয়েছেন..তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য
পুরস্কার -ভূপেন হাজারিকা সম্মান, বিবেক সম্মান, বিদ্যাসাগর সম্মান, শঙ্খ ঘোষ সম্মান, রবীন্দ্র সম্মান, নজরুল সম্মান, রৌপ স্বরস্বতী
সম্মান, শরৎচন্দ্র সম্মান, সৌমিত্র সম্মান, কৃত্তিবা ওঝা সম্মান, বাংলার গর্ব সম্মান, কবিরত্ন সম্মান , মণীষ চন্দ্র স্মৃতি সম্মান, বাবা সাহেব আম্বেদ কর বিশেষ সম্মান সহ সাহিত্যের অসংখ্য প্রবীণ ও নবীন মানুষের ভালোবাসা…!

একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে আমাদের সংবাদ প্রতিনিধির সাথে উনার কিছু কথা সরাসরি তুলে ধরা হলো…
” আমি একটি সাধারণ গ্রাম থেকে একজন সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে শিল্পের এই শুদ্ধতম ধারায় নিজেকে মেলাতে গিয়ে উপলব্ধি করলাম যে, অনেকে সাহিত্য চর্চা করেন ঠিকই কিন্তু কোথায় যেন সেখানে মানবিকতার স্পর্শটা অতী ক্ষীণ। কেও কেও তো আবার সাহিত্যটাকে দাঁড়ি পাল্লায় ওজন করছেন! আমার পরিবারের কেউ কখনও সাহিত্য চর্চা সেভাবে করেনি, কিন্তু আমার পিতা-মাতা পুথিগত বিদ্যা না অর্জন করলেও সামাজিক শিক্ষাতে অনেকটা এগিয়ে বলেই আমার বিশ্বাস.. আমার বাবা মাঠে চাষ করেছেন আমার পড়াশোনার জন্য, তারাও রাতের পর রাত জেগেছেন, খুব বেশি প্রাচুর্যে আমি বড় না হলেও প্রথম থেকে আমার মায়ের ভাষা আমার বাংলা ভাষাকে নিয়ে কাজ করার প্রবল ইচ্ছা ছিল, যা আজও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ।আমিও অনেক কষ্ট করে একদশ শ্রেণীতে পড়ার পর আমার বাবা আমার হাতটি শক্ত করে ধরে বলেছিলেন ‘বাবা আমি তোকে হয়ত আর পড়াতে পারব না… তখন আমি মাইকেল মধূসুদন দত্তের একটা কথা বাবাকে বলেছিলাম -” আমার যোগ্যতা থাকলে নিজের ভাগ্যের চাক নিজেই ঘুরিয়ে নিতে পারবো, তুমি শুধু আমাকে আশির্বাদ করো “! এর পরে শুরু ছাত্রদের পড়ানো, তার সঙ্গে অন্যের জমিতে কৃষি কাজ , রোদে কষ্ট হতো যখন, ক্লান্তি আসতো যখন, তখন মনে পরতো রবি ঠাকুরের সেই কথা- “আমরা চাষ করি আনন্দে
মাঠে মাঠে বেলা কাটে সকাল হতে সন্ধে”..
কলেজে রবীন্দ্র মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ার পরে নিজের ফোন কেনার সামর্থ ছিল না, জীবনের অনেক প্রয়োজনীয় কাজ করতে বন্ধুদের সাহায্য নিতে হয়েছে, অনেকে সাহায্য করেছে অনেকে অমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে কারন একটাই জামা-পেন্ট পরে যেতাম বলে, চুপচাপ থাকতাম বলে.. আমার মনে হয়, কাউকে পোশাক দিয়ে না দেখে তার ভিতরে কি আছে সেটা দেখাই শ্রেয়…! এভাবে আস্তেধীরে অন্যায় দেখে প্রতিবাদ করতে লাগলাম ও কিছু সামাজিক কাজ করতে লাগলাম.. যে সকল ছাত্ররা পড়াশোনা না করে কাজ করতে চলে যায়, আমি তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে বলে ওদের আমি বিনামূল্যে পড়ানো শুরু করলাম এবং নিজের সামর্থ্য হিসেবে খাতা-কলম কিনে দিতাম যাতে ওদের পড়াশোনা বন্ধ না হয়ে যায় । সাহিত্য জগৎ-এর একজন কর্মী হিসেবে যে সকল লেখকের বই ছাপাবার সামর্থ্য নেই সেই সকল লেখকের লেখা বিনা মূল্যে ছাপানোর কাজ আমাদের শ্রুতি প্রাকাশনী থেকে ভবিষ্যতে করা হবে এবং গুণী লেখকদের বিভিন্ন সম্মানে সম্মানিত করারও প্রচেষ্টা রাখবো। তার পাশাপাশি কাজ করছি নতুন কুঁড়ি পত্রিকা, শ্রুতি সাহিত্য পত্রিকা ও বাঙালী লেখক সংসদ-এ । সাহিত্যের রূপ,রস,গন্ধতে কিছুটা বিশাক্ত হাওয়া বয়ে চলেছে সেই দিকে নজর দেয়ার সময় এসেছে, তাই আবারও নজরুল ইসলামের মত বজ্র কন্ঠে বলতে চাই- ঘুম থেকে উঠতে হবে হে তরুণ তরুণীর দল, অনেক কাজ করতে হবে, সমাজের অনেক নিয়েছি, প্রকৃতির অনেক খেয়েছি, এবার তাদের জন্য কিছু করতে হবে । ভবিষ্যতে আমরা গাছ লাগাবো, আমরা সমাজে অর্থনৈতিক সবল মানুষের কাছে গিয়ে অভুক্ত পথ-মানুষের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবারটা তুলে দিয়ার কথা ভাবছি । আমার বিশ্বাস, কোনো অশুভ শক্তি পারবে না পরাস্ত করতে বাংলা ভাষাকে..বাংলা ভাষাকে রাষ্ট ভাষা করার জন্য ‘আমরা যুব শক্তি ‘নামে একটা সংগঠন করে কাজ করছি । তাতে জীবন গেলে দিতে রাজি তাহলে সে মরণ হবে আমার সুখের মরণ ।
শেষে এটা কথা বলতে ইচ্ছা করছে- বড় যদি হতে চাও আগে ছোট হও তবে..! সব খবর কতৃপক্ষকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ…!”

সময় সব কিছুই একসময় ফেরত দেয়..সে হোক ভালো কিংবা মন্দ..! দীপঙ্কর পোড়েল এর মতন তরুণরা আমাদের সভ্যতার হাল শক্ত করে ধরেন বলেই কিন্তু আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে পারি….!

আজ তাই তারুণ্যকে আমি অবলীলায় সবসময় এগিয়ে রাখি সমাজের দর্পণ ফুটিয়ে তোলার জন্য..! ভালো থাকুক সাহিত্য..ভালো থাকুক শুদ্ধস্বর..!

সৌগত রাণা কবিয়াল–
( কবি-সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, গীতিকার ও সাংবাদিক)