জসীম উদ্দিন একজন বাঙালি কবি, গীতিকার, ঔপন্যাসিক ও লেখক। ‘পল্লীকবি’ উপাধিতে ভূষিত, জসীম উদ্দীন আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ আধুনিক কবি। ঐতিহ্যবাহী বাংলা কবিতার মূল ধারাটিকে নগর সভায় নিয়ে আসার কৃতিত্ব জসীম উদ্দিনের। তার নকশী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাদিয়ার ঘাট বাংলা ভাষার গীতিময় কবিতার উৎকৃষ্টতম নিদর্শনগুলোর অন্যতম। তার কবিতা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার লেখা অসংখ্য পল্লিগীতি এখনো গ্রাম বাংলার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়।
জসিম উদ্দিন ১৯০৪ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামের মাতুলনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম জমীর উদ্দীন মোল্লা হলেও তিনি জসিম উদ্দিন নামেই পরিচিত।
তার বাবার বাড়ি একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। বাবার নাম আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মা আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট।
জসীম উউদ্দিন ফরিদপুর ওয়েলফেয়ার স্কুল ও পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলা স্কুলে (বর্তমানে ফরিদপুর জিলা স্কুল) পড়ালেখা করেন। এখান থেকে তিনি তার প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১৯২১ সনে উত্তীর্ণ হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিষয় থেকে বি. এ. এবং এম. এ. শেষ করেন যথাক্রমে ১৯২৯ এবং ১৯৩১ সনে।
১৯৩১ থেকে ১৯৩৭ পর্যন্ত, দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে লোক সাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে জসীম উদ্দিন কাজ করেন। তিনি পূর্ব বঙ্গ গীতিকার একজন সংগ্রাহকও। তিনি ১০,০০০ এরও বেশি লোক সংগীত সংগ্রহ করেছেন, যার কিছু অংশ তার সংগীত সংকলন জারি গান এবং মুর্শিদা গান এ স্থান পেয়েছে।
জসীম উদ্দিন একদম অল্প বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। কলেজে অধ্যয়নরত থাকা অবস্থায়, পরিবার এবং বিয়োগান্ত দৃশ্যে, একদম সাবলীল ভাষায় তিনি বিশেষ আলোচিত কবিতা কবর লেখেন। গাঁয়ের লোকের দৃষ্টিতে গ্রাম্য জীবন এবং পরিবেশ-প্রকৃতি ফুটিয়ে তোলার জন্য জসীম উদ্ দীন বিশেষভাবে পরিচিত। তার এই সুখ্যাতি তাকে পল্লি কবি উপাধি এনে দিয়েছে। তার কাব্যের গঠনপ্রণালী এবং বিষয়বস্তু পাঠককে বাংলা লোক সাহিত্যের প্রগাঢ় আস্বাদন এনে দেয়। তার রচিত নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থকে তার শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং পৃথিবীর অনেক ভাষায় এটি অনূদিত হয়েছে।
কাব্যগ্রন্থ———-
হাসু , রুপবতি , মাটির কান্না, এক পয়সার বাঁশী, সখিনা
রাখালী , নকশী কাঁথার মাঠ, বালুচর, ধানখেত, সোজন, বাদিয়ার ঘাট , সুচয়নী, পদ্মা নদীর দেশে, মাগো জ্বালায়ে, রাখিস আলো , কাফনের মিছিল , মহরম, দুমুখো চাঁদ পাহাড়ি, ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে , মা যে জননী কান্দে, হলুদ বরণী , জলে লেখন।
নাটক———
পদ্মাপার, বেদের মেয়ে, মধুমালা, পল্লীবধূ , গ্রামের মেয়ে, ওগো পুস্পধনু, আসমান সিংহ।
আত্মকথা——-
যাদের দেখেছি , ঠাকুর বাড়ির আঙ্গিনায, জীবন কথা
স্মৃতিপট, স্মরণের সরণী বাহি।
উপন্যাস—— বোবা কাহিনী।
ভ্রমণ কাহিনী—–
চলে মুসাফির, হলদে পরির দেশে, যে দেশে মানুষ বড় , জার্মানীর শহরে বন্দরে।
এছাড়াও জসীম উদ্দীন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক
গান রচনা করেছেন। বাংলার বিখ্যাত লোক সংগীতের গায়ক, আব্বাসউদ্দীন, তার সহযোগিতায় কিছু অবিস্মরণীয় লোকগীতি নির্মাণ করেছেন, বিশেষত ভাটিয়ালী ধারার। জসীম উদ্দীন রেডিওর জন্যেও আধুনিক গান লিখেছেন।
সঙ্গীত—–
জারি গান, মুর্শিদী গান, রঙিলা নায়ের মাঝি, গাঙের পাড়।
অন্যান্য—–
বাঙালির হাসির গল্প ১ম খন্ড (১৯৬০), ২য় খন্ড (১৯৬৪)
ডালিমকুমার (১৯৮৬)
গানের শিরোনাম——–
বালু চরের মেয়া, বাদল বাঁশি ওরে বন্ধু, আমার সোনার ময়না, আমার গলার হার খুলে নে, নদীর কূল নাই কিনার নাই, ও বন্ধু রঙিলা, গাঙ্গের কূলরে গেলো ভাঙিয়া, কাজল ভ্রমরা রে, রঙিলা নায়ের মাঝি, প্রানো শখি রে ঐ শুনে কদম্ব তলে, ও আমার দরদি আগে জানলে, বাঁশরি আমার হারাই গিয়াছে, নিশ্তে যাইও ফুলবাণে, ও ভোমরা, ও বাজান চল যাই মাঠে লাঙল বাইতে, ও তুই যারে আঘাত হানলিরে মনে, ও আমার গহীন গানের নায়া, আমার বন্ধু বিনুধিয়া, আমার হার কালা করলাম রে, আমায় ভাসাইলি রে, আমায় এতো রাতে, কেমন তোমার মাতা পিতা।
পুরস্কার——
প্রেসিডেন্টস এওয়ার্ড ফর প্রাইড অফ পারফরম্যান্স, পাকিস্তান (১৯৫৮), রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট ডিগ্রি, ভারত (১৯৬৯), ১৯৭৪ সনে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার {প্রত্যাখ্যান করেন}; একুশে পদক, বাংলাদেশ (১৯৭৬), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ১৯৭৮ (মরণোত্তর)
তিনি ১৪ মার্চ ১৯৭৬ সনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার শেষ ইচ্ছা অনুসারে তাকে ফরিদপুর জেলার অম্বিকাপুর গ্রামে তার দাদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।
Leave a Reply