ধর্মের নামে বিভাজন নয়, সম্প্রীতির বার্তা: বাঁকুড়ার সিমুলিয়া দশরথবাটির পীরবাবার মাজার যেন এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করলো।

আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ – বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশ ধর্মকে ব্যবহার করে বিভাজনের রাজনীতি করছে। হিন্দু-মুসলিম বিভেদ সৃষ্টি করে ভোটের সমীকরণ সাজানোর এই প্রবণতা সমাজকে ক্রমশ বিভক্ত করছে। কিন্তু এই বিভেদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে বাঁকুড়ার ইন্দাস ব্লকের সিমুলিয়া ও দশরথবাটি গ্রাম। এখানে ধর্ম মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেনি, বরং ভালোবাসা ও বিশ্বাসের বন্ধনে মানুষকে আরও কাছাকাছি এনেছে।

এই গ্রামের প্রাণকেন্দ্র পীরবাবার মাজার। প্রতি বছর উরস উৎসব জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন। মাজারের চারপাশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মা-বোনদের দণ্ডি কাটতে দেখা যায়, সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালানোর জন্য লাইন পড়ে। এটাই প্রমাণ করে, ধর্মের নামে বিভেদ তৈরি করা সম্ভব নয়, যদি মানুষের মনে সম্প্রীতির বীজ সুদৃঢ়ভাবে প্রোথিত থাকে।

সাম্প্রদায়িক শক্তি যখন সমাজকে বিভক্ত করতে ব্যস্ত, তখন সিমুলিয়া ও দশরথবাটির মানুষ সম্প্রীতির বার্তা দিচ্ছেন। এখানকার নিয়ম অনুযায়ী, নবদম্পতিরা বিয়ের পর পীরবাবার মাজারে সিন্নি গ্রহণ করে তবেই বাড়িতে প্রবেশ করেন। শিশুদের মুখেভাত অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রথমে মাজারে যাওয়া বাধ্যতামূলক। এই ঐতিহ্য দেখিয়ে দেয়, ধর্মীয় সহাবস্থান কেবল সম্ভবই নয়, বরং তা যুগ যুগ ধরে মানুষের সংস্কৃতির অংশ হয়ে থাকতে পারে।

যখন রাজনৈতিক নেতারা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে ভোটের রাজনীতি করছেন, তখন এই গ্রামগুলি দেখিয়ে দিচ্ছে প্রকৃত সম্প্রীতি কেমন হওয়া উচিত। এখানে ৯৯% হিন্দুর সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করে, ধর্ম মানুষের মিলনের জন্য, বিভেদের জন্য নয়। পীরবাবার মাজার তাই শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, এটি মানবতার এক পবিত্র মেলবন্ধন, যা দেখিয়ে দেয়— প্রকৃত শক্তি বিভেদের মধ্যে নয়, ঐক্যের মধ্যেই আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *